জার্মান এআই অ্যাপে ভারতের চাষিদের মুশকিল আসান
প্রায় সব ক্ষেত্রেই এআই-এর প্রয়োগ বাড়ছে। ভারতের চাষিরা এক জার্মান অ্যাপের মাধ্যমে শস্যের সমস্যা চিহ্নিত করে চটজলদি সমাধান করছেন। ক্ষেতে কোনো গাছ দুর্বল মনে হলেই এই চাষিরা তাঁদের স্মার্টফোন বার করে তার ছবি তুলে সঙ্গে সঙ্গে জেনে যান, সেই গাছের কোনো রোগ আছে কিনা। অ্যাপ প্রয়োজনে ছবি বিশ্লেষণ করে রোগ নিরাময়ে সাহায্য করে।
চাষি হিসেবে সন্দীপ শিন্ডে মনে করেন, ‘প্ল্যান্টিক্স শস্যের ডাক্তারের মতো। ঠিক আমার নিজের ডাক্তারের মতোই। সেটি শস্যের রোগ শনাক্ত করে, চিকিৎসার পরামর্শ দেয়, ওষুধ লিখে দেয় এবং প্রতিরোধমূলক চিকিৎসাও করে।’
কোদাল এবং বেলচার সঙ্গে স্মার্টফোনও মাঠে নিয়ে যাওয়া ভারতের চাষিদের দৈনন্দিন জীবনের অঙ্গ হয়ে উঠেছে। ভারতে কৃষিক্ষেত্রে ডিজিটাল টুল প্রয়োগের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। দেশের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকেই কৃষিক্ষেত্রে কাজ করে।
মানুষের পক্ষে খালি চোখে দেখে গাছের রোগ নির্ণয় করা অত্যন্ত কঠিন। অথচ এই অ্যাপ খেতের মধ্যেই কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে তা করতে পারে। কিন্তু সেটি ঠিক কীভাবে কাজ করে? সন্দীপ শিন্ডে বলেন, ‘এই অ্যাপের ব্যবহার খুবই সহজ। সবার আগে অ্যান্ড্রয়েড ফোনে প্ল্যান্টিক্স খুলতে হয়। তারপর ছবি তোলার পালা। আমরা নির্দিষ্ট অংশের ছবি তুলছি। তোলার পর সেটি আপলোড করতে হয়। অ্যাপ প্রথমে শস্য শনাক্ত করে।’
প্ল্যান্টিক্স সংগৃহিত তথ্য জার্মানিতে বিশ্লেষণ করে। সেটি হেল্ম ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির অংশ। এই উদ্যোগের প্রতিষ্ঠাতারা ছাত্রজীবনে হানোফার বিশ্ববিদ্যালয়ে টমেটো নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেছিলেন।
সংস্থার আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিভাগের প্রতিনিধি কর্বিনিয়ান হার্টব্যার্গার বলেন, ‘সেটা আমাদের সার্ভারে পাঠানো হয়। এক ডিপ নিউরাল নেটওয়ার্ক সেটার বিশ্লেষণ করে। সেটা আসলে নির্দিষ্ট রোগ বা পোকার উপদ্রব চিহ্নিত করার এক মডেল। শনাক্ত করেই ফল বাতলে দেয়।’
তথাকথিত গাছের ডাক্তাররা ছবির তথ্যভাণ্ডারে অপরিচিত ছবি চিহ্নিত করতে সাহায্য করেন। এভাবে এআই বাড়তি শিক্ষার ভিত্তিতে কোনো পদক্ষেপ বা চিকিৎসার পরামর্শ দিতে পারে।
সন্দীপ শিন্ডে জানান, ‘এখন অ্যাপ রোগের লক্ষণ বিচার করে রোগ নির্ণয় করছে। পাতার ধারের অংশ হলুদ হয়ে গেছে। অ্যাপ বলছে রোগ নেই, পটাসিয়ামের অভাবের কারণে এমনটা হচ্ছে।’
প্রায় ৮০ লাখ চাষি ইতোমধ্যেই প্ল্যান্টিক্স অ্যাপ ব্যবহার করছেন। তাদের প্রায় সবাই ভারতেই রয়েছেন। অ্যাপের ইমেজ ডেটাবেসে বিভিন্ন গাছের রোগের প্রায় সাড়ে তিন কোটি ছবি রয়েছে। ফলে অত্যন্ত নির্ভুলভাবে রোগ বা সমস্যা নির্ণয় করা যায়।
হার্টব্যার্গার বলেন, ‘আপনি কি ৩০টি ভিন্ন শস্যের প্রায় ৭০০ সমস্যার কথা জানেন? সম্ভবত জানেন না, কারণ এত বেশি জানা বেশ কঠিন। তাছাড়া এমন নির্ণয়ের কাজ মানুষের পক্ষে সহজ নয়।’
যেমন কোনো রোগ শনাক্ত করা হলে অ্যাপ ব্যবহারকারীদের উপযুক্ত কীটনাশক প্রয়োগের পরামর্শ দেয়। এমনকি কোথায় সেটা কিনতে পাওয়া যায়, তাও জানিয়ে দেয়। কিন্তু স্থানীয় খুচরা বিক্রেতাদের কাছে সব সময়ে সব পণ্য থাকে না। ফলে চাষিরা ভুল বা এমনকি জাল পণ্যও কিনতে পারেন। তার পরিণতি ভালো হয় না।
হার্টব্যার্গারের মতে, ‘আমাদের অনুমান অনুযায়ী ভারত এবং সম্ভবত অন্য দেশেও বিক্রিত পণ্যের প্রায় অর্ধেক কোনো সমস্যা সমাধানের জন্য উপযুক্ত নয়। আমরা প্রথমত সঠিক প্রেসক্রিপশন দেই। দ্বিতীয়ত এমন নামী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে পণ্য কিনতে চাষিদের সাহায্য করি, যাদের কাছে সত্যি ভালো ও সহায়ক পণ্য আছে বলে আমরা জানি।’
চাষিরা প্ল্যান্টিক্স ব্যবহারের পর আরো ভালো ফসলের মুখ দেখছেন। এআই চাষিদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার বিকল্প না হয়ে উঠলেও খেতের কাজ অবশ্যই কিছুটা সহজ করে তুলবে।