মানুষের নাকের যত জানা-অজানা
সর্দিকাশি, গন্ধ গ্রহণ থেকে শুরু করে প্রবাদ-প্রবচনে নাকের ভূমিকা গুরুত্ব পায়৷ নাক সম্পর্কে সার্বিক বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা পেলে সেই ধারণা আরো বদ্ধমূল হয়ে উঠতে পারে। জগত থেকে সব গন্ধ লোপ পেলে, সব বস্তু নিজস্ব সুগন্ধ হারালে এবং কোনো কিছুরই স্বাদ না পেলে বুঝতে হবে সম্ভবত সর্দি কাশির কারণেই সেটা ঘটছে।
নাকের কাজই হলো গন্ধ শোঁকা। কিন্তু সর্দিকাশি ও অ্যালার্জি নাককে মনে করিয়ে দেয়, যে সেটি ইমিউন সিস্টেমের অংশও বটে। নাকের কাজ শ্বাস-প্রশ্বাসের সময়ে বাতাস ফিল্টার করা, তাতে আর্দ্রতা ও উষ্ণতা যোগ করা। বাতাসের স্রোতের সঙ্গে আসা বড় কণা নাকের রোমে আটকে পড়ে। নাকের ভেতরের অংশের মিউকাস ঝিল্লি আঠালো এক পদার্থ সৃষ্টি করে, যা ব্যাকটিরিয়া ও ভাইরাসের মতো আগন্তুকদের বন্দি করে। তার মধ্যে এমনকি অ্যান্টিবডিও রয়েছে, যা প্যাথোজেনকে সরাসরি নিষ্ক্রিয় করে দিতে পারে। সে কারণেই সংক্রমণ বা অ্যালার্জি হলে সবার আগে নাকেরই ভোগান্তি হয়। শ্বেত রক্ত কণিকা সেখানে সমবেত হয় এবং নাকের মিউকাস মেমব্রেন ফুলে ওঠে। এ ছাড়া সেগুলো আরো বেশি তরল সৃষ্টি করে। কোনো এক সময় নাক বন্ধ হয়ে যায়। কিছু সময়ের পর সেই অবরোধ উঠে গেলে নাক অবশেষে আবার তার পূর্ণ ক্ষমতা ফিরে পায়।
অন্য সব সেন্সরি অরগ্যানের তুলনায় নাকের সঙ্গে মস্তিষ্কের সংযোগ সবচেয়ে নিবিড়। ওলফ্যাক্টরি বা ঘ্রাণের স্নায়ু মিউকাস মেমব্রেনের ১০ লাখেরও বেশি রিসেপ্টর থেকে পাওয়া সংকেত মস্তিষ্কে পাঠার্য়। বায়ু থেকে একটি অণু কোনো উপযুক্ত রিসেপ্টরে পৌঁছালেই সংকেত সৃষ্টি হয়। একাধিক ক্ষেত্রে ‘বিশেষজ্ঞ’ রিসেপ্টরের কল্যাণে আমরা গন্ধ জগতের বিশাল বৈচিত্র্যের স্বাদ নিতে পারি। একই ধরনের রিসেপ্টর একই সঙ্গে সক্রিয় হয়ে উঠলে গন্ধ বেশ কড়া হয়ে ওঠে। সব সময় সেটা মোটেই সুখকর হয় না।
তবে শুধু দুর্গন্ধ পেলেই নাক সাড়া দেয় না। কখনো সুন্দর রান্নার সুগন্ধ বাতাসে ভেসে এলেও নাক আমাদের খিদে জাগিয়ে তোলে। নাক যেহেতু আমাদের জিবের তুলনায় অনেক বেশি গন্ধের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে, সে কারণেই খাবারের স্বাদ অনেক বেশি ভালো লাগে।
অন্যের কাজে ‘নাক গলানো’ কথাটার পেছনে কারণ আছে। নাক সত্যি অনেক সিদ্ধান্তে নাক গলায়। যেমন কোনো বাসা পছন্দ করা বা কাউকে আকর্ষণীয় মনে করার সময়ে গন্ধ আমাদের অনুভূতির উপর অনেক বেশি প্রভাব রাখে, যা আমরা সচেতনভাবে বুঝতে পারি না।
আমাদের অন্য একটি ক্ষমতার চাবিকাঠিও নাকের কাছে রয়েছে। আর সেটা হলো আমাদের স্মৃতিভাণ্ডার। সুগন্ধের অভিজ্ঞতা স্মৃতিভাণ্ডারের গভীরে অটুট থেকে যায়। সেই স্পষ্ট স্মৃতির সঙ্গে বিশেষ আবেগ জড়িয়ে থাকে। এভাবে আমাদের নাক অতীতকে জীবন্ত করে তুলতে পারে। তবে স্মৃতিভাণ্ডারে সেই অভিজ্ঞতা প্রবেশের পথে সর্দিকাশি থাকলে চলবে না। স্বাস্থ্যকর মিউকাস ঝিল্লি ভাইরাস মোকাবিলা করার প্রথম ঢাল। কয়েকটি নিয়ম মেনে চললে নাকের মিউকাস ঝিল্লির দায়িত্ব পালনের কাজ অনেক সহজ হয়ে যায়।