দরজার হাতল স্পর্শ করলে ইলেকট্রিক শক লাগে কেন?
দরজার ধাতব হাতল ছুঁলে কখনো শরীরে বৈদ্যুতিক শকের অনুভূতি হয়। কখনো বা মাথার চুল খাড়া হয়ে ওঠে। মানুষের শরীরে এমন প্রতিক্রিয়া ও অনুভূতির বৈজ্ঞানিক কারণ জানলে বিষয়টা বুঝতে সুবিধা হয়।
কখনো কখনো আমাদের শরীরে কেন কারেন্ট লাগে? এর উত্তর হলো আমাদের আশেপাশের সবকিছু, এমনকি আমাদের শরীরও ক্ষুদ্র পরমাণু দিয়ে গঠিত। সেগুলোর উপাদান আবার বৈদ্যুতিক চার্জযুক্ত কণা। পরমাণুর কেন্দ্রে রয়েছে পজিটিভ চার্জে ভরা প্রোটন। সেটির চারিদিকে নেগেটিভ চার্জযুক্ত ইলেকট্রন ঘুরতে থাকে। অর্থাৎ আমাদের শরীর একইসঙ্গে পজিটিভ ও নেগেটিভে ভরা। আমরা সচেতনভাবে টের না পেলেও সেই চার্জগুলোর মধ্যে ভারসাম্য বজায় থাকে।
ত্বক ও বাতাসের আর্দ্রতা সেটা সম্ভব করে। শীতল ও শুকনা পরিবেশে চার্জগুলোর মধ্যে আদান-প্রদান আরো ভালোভাবে চলতে পারে না। রাবারের সোল পরে সিন্থেটিক কার্পেটের উপর হাঁটলে প্রতিটি পদক্ষেপ আমাদের শরীরে বৈদ্যুতিক চার্জ ঘটায়। হাঁটার সময় ঘর্ষণের কারণে ইলেকট্রন সোলের দিকে ধেয়ে যায় এবং শরীরে জমা হয়। রাবার আইসোলেট বা বিচ্ছিন্ন রাখে বলে ইলেকট্রনগুলো আর কার্পেটে ফিরে যেতে পারে না।
স্কুল পড়ুয়াদের এক এক্সপেরিমেন্টেও সেই একই ঘটনা ঘটে। এক রাবার ব্যান্ডের ঘূর্ণনের মাধ্যমে ধাতুর গোলকে বৈদ্যুতিক চার্জ হয়। সেই চার্জ প্লাস্টিক ফাইবার উপর দিকে চালিত করে। আমাদের চুলের ক্ষেত্রেও সেই একই প্রক্রিয়া দেখা যায়। চার্জ হওয়া শরীর বিপরীত চার্জসহ কোনো বৈদ্যুতিক পরিবাহী উপাদান স্পর্শ করলে তখন দ্রুতগতিতে চার্জ বিনিময় ঘটে। সেই প্রক্রিয়ার সময়ে আমাদের শরীরের মধ্য দিয়ে ৩৫ হাজার ভোল্ট চালিত হতে পারে। তার ফলে অস্বস্তি হলেও সেটা কিন্তু মোটেই ক্ষতিকর নয়।
আমরা কিন্তু এমন বিদ্যুতের শক এড়িয়ে চলতে পারি। এজন্য নিজেদের বাসা ও অফিসে যথেষ্ট আর্দ্রতা নিশ্চিত করতে হবে, ক্রিম লাগিয়ে ত্বক আর্দ্র রাখতে হবে, জুতায় চামড়ার সোল ব্যবহার করতে হবে এবং সুতির মতো প্রাকৃতিক তন্তু পরতে হবে।
কার না এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে! দরজার হাতল ধরতেই বিদ্যুতের শক অনুভব করেছি। আমাদের শরীরে পজিটিভ ও নেগেটিভ চার্জের কারণেই এমনটা ঘটে। আমাদের ত্বক সেই চার্জের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখে।
পরিবেশ খুব শুকনা ও শীতল থাকলে কিন্তু সেই চার্জ বিনিময় ঘটতে পারে না। তখনই আমরা শকের অনুভূতি পাই। অতএব শরীরে এমন অনুভূতির ক্ষেত্রে আর্দ্রতার ভূমিকা সম্পর্কে জানা জরুরি।