ঘুরে আসুন মহেশখালীর আদিনাথ মন্দিরে
যদি সুন্দর একখান মুখ পাইতাম, যদি নতুন একখান মুখ পাইতাম, মহেশখালীর পানের খিলি তারে বানাই খাবাইতাম—এই আঞ্চলিক গানটি শোনেননি, এমন মানুষের সংখ্যা খুবই কম। কক্সবাজার ঘুরতে গিয়ে মহেশখালীর পান না খেলে কি চলে!
কক্সবাজার জেলার মহেশখালী একটি সুন্দর দ্বীপ। জীবনের হাজারো ব্যস্ততার মাঝে একটুখানি ভ্রমণের সুযোগ যেন সঞ্জীবনী শক্তি এনে দেয়। তাই ছুটি মিললেই একাকী বা দলবেঁধে হোক, সময়টাকে কাজে লাগাতে চাইলে সপরিবারে ঘুরে আসুন মহেশখালী।
কক্সবাজার থেকে এটি মাত্র ১৫ কিলোমিটার দূরে। জনশ্রুতি আছে, ১৫৫৯ সালের প্রচণ্ড ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে এই দ্বীপের সৃষ্টি। দ্বীপটি আয়তনে ৩৬২ বর্গকিলোমিটার ।
মহেশখালী উপজেলায় সোনাদিয়া মাতারবাড়ি ও ধলঘাটা নামে তিনটি ছোট ছোট দ্বীপ রয়েছে। পান, মাছ, শুঁটকি, চিংড়ি, লবণ ও মুক্তার উৎপাদনে সমগ্র বাংলাদেশে এই উপজেলার সুনাম রয়েছে। চার-পাঁচ ঘণ্টায় কক্সবাজার থেকে মহেশখালী দ্বীপ থেকে ঘুরে আসা যায়।
কক্সবাজার শহরের যেকোনো জায়গা থেকে মহেশখালী যাওয়ার জন্য ছয় নম্বর জেটি ঘাটে যেতে হবে। তারপর স্থানীয় ট্রলার বা স্পিডবোটে ৭০-৮০ টাকা ভাড়ায় মহেশখালীতে যেতে হবে। চাইলে স্পিডবোট রিজার্ভ নিতে পারবেন।
জেটিঘাট থেকে স্পিডবোটে ৩০ মিনিটের মতো লাগে মহেশেখালী যেতে। স্পিডবোটে চড়ে বাঁকখালী চ্যানেল পার হওয়ার সময়টা দারুণ। সকালবেলা দূরে রোদ আর নদীর অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে দেখতেই পৌঁছে যাবেন গন্তব্যে। সুবিশাল পাহাড় আর অপরূপ দৃশ্যের এই দ্বীপ।
স্পিডবোট থেকে নেমে মহেশখালী জেটিঘাট থেকে ব্যাটারচালিত টমটম বা ইজিবাইকে করে যেতে হবে মহেশখালীর প্রধান আকর্ষণ আদিনাথ মন্দির। এখানে ছোট-বড় বেশ কয়েকটি বৌদ্ধবিহার রয়েছে। বিখ্যাত আদিনাথ মন্দির আর বৌদ্ধবিহার ঘুরে দেখে আপনার মন প্রশান্তিতে ভরে যাবে।
আদিনাথ মন্দিরটি ৮৫.৩ মিটার উঁচু মৈনাক পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত। পাহাড়ের ঢাল কেটে বানানো ৬৯টি সিঁড়ি দিয়ে উঠতে হয় মন্দিরে। হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন গ্রন্থে এই মন্দিরের ঐতিহাসিক গুরুত্বের কথা জানা যায়। মন্দিরটির গোড়াপত্তনের ইতিহাস অনেক চমকপ্রদ। এ ছাড়া প্রতি বছরে ফাগুন মাসে এখানে আদিনাথ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। চলতি পথেই দেখতে পাবেন মহেশখালীর বিখ্যাত পানের বরজ আর লবণের মাঠ।
মহেশখালীর সবচেয়ে চমৎকার দিক হলো, এটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ভূখণ্ড। একদিনের যাত্রায় আরো অনেক কিছু দেখার বাকি রয়ে যাবে মহেশখালীর।
আদিনাথ মন্দিরে ওঠার সিঁড়ির ধারেই চোখে পড়বে ছোটখাটো একটি মার্কেট। নানা ধরনের কাপড়ের পসরা সাজিয়ে বসেছে স্থানীয় রাখাইনরা। বিভিন্ন রকমের চাদর, পাঞ্জাবি, মাফলারসহ নানারকম পোশাকে সাজানো সব দোকান।
পর্যটকদের ভিড়ও প্রচুর দোকানগুলোতে। এখানকার প্রায় সবকিছুই স্থানীয়দের তৈরি। স্থানীয় রাখাইনরা তাঁদের নিজস্ব ধারার পোশাক তৈরি করে থাকেন। ভোজনরসিকরা কিনতে পারেন লবণবিহীন শুঁটকি।
অল্প দূরত্ব হওয়ায় মহেশখালী থেকে সহজেই ফিরে আসা যায়। এ ছাড়া মহেশখালীতে থাকার তেমন ব্যবস্থা নেই, তাই রাত্রিযাপনের জন্য ফিরে আসুন কক্সবাজারে। কক্সবাজার থেকে খাবার আর পানি নিয়ে গেলে ভালো হবে। সঙ্গে শিশু থাকলে স্পিডবোটে চড়ার সময় একটু সতর্ক থাকতে হবে।