ইউক্রেনের চেরনোবিল পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ‘রুশ বাহিনীর দখলে’
রুশ বাহিনী ইউক্রেনে অবস্থিত চেরনোবিল পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিজেদের দখলে নিয়েছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের উপদেষ্টা মিখাইলো পোদোলিয়াক স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানিয়েছেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
মিখাইলো পোদোলিয়াক জানান, ‘রুশ বাহিনীর সম্পূর্ণ অর্থহীন আক্রমণের পরে চেরনোবিল পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিরাপদ রয়েছে কি না, তা বলা অসম্ভব।’ একে ইউরোপের সবচেয়ে গুরুতর হুমকির মধ্যে একটি বলে উল্লেখ করেছেন মিখাইলো।
রাশিয়ার নিরাপত্তা সূত্র দাবি করছে—কিছু রুশ সেনা বৃহস্পতিবার দিনের প্রথম দিকে ইউক্রেনে প্রবেশের আগেই চেরনোবিলের নিষিদ্ধ এলাকায় জড়ো হয়েছিলেন। ন্যাটোর সামরিক হস্তক্ষেপ রুখতে রাশিয়া চেরনোবিল পারমাণবিক রিয়েক্টর নিয়ন্ত্রণে নিতে চায় বলে ওই সূত্র জানিয়েছে।
১৯৮৬ সালে ২৬ এপ্রিল দিনের প্রথম ভাগে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের চেরনোবিল পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে দুর্ঘটনা ঘটেছিল। ওই সময় বিস্তীর্ণ এলাকার আকাশে তেজস্ক্রিয় পদার্থের মেঘ ছড়িয়ে পড়ে। ইউক্রেনের সীমান্তবর্তী রাশিয়া, বেলারুশ ও উত্তর ইউরোপের অনেক দেশেও তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ে।
সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, চেরনোবিল দুর্ঘটনায় আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মৃত্যুর সংখ্যা ৩১ জন। তবে জাতিসংঘ প্রাথমিকভাবে ধারণা করেছিল—সরাসরি দুর্ঘটনায় ৫০ জনের মৃত্যু হতে পারে। পরে সংস্থাটির পক্ষ থেকে ধারণা করা হয়, চার হাজার মানুষ এ দুর্ঘটনার পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় মারা গেছে। তবে, নিহতের সংখ্যা নিয়ে বিভিন্ন তথ্য রয়েছে। আর, দুর্ঘটনার পর পরমাণু কেন্দ্রের কর্মীসহ পাঁচ লাখ মানুষকে উদ্ধার করা হয়।
এর কয়েক দশক পরে চেরনোবিল এলাকাটি পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে পড়ে। তবে, প্রায় সপ্তাহখানেক আগে সেখানে পর্যটকদের প্রবেশ বন্ধ করে দেয় ইউক্রেন কর্তৃপক্ষ।
রুশ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে যাওয়ার আগে চেরনোবিল পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি টুইটবার্তায় বলেন, ‘আমাদের প্রতিরক্ষাবাহিনীর সদস্যেরা সেখানে জীবন দিচ্ছেন, যেন ১৯৮৬ সালের ট্র্যাজেডির পুনরাবৃত্তি না হয়। এটি সম্পূর্ণ ইউরোপের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা।’
এদিকে, রাশিয়ার ‘সেনা অভিযানের’ প্রথম দিনে গতকাল বৃহস্পতিবার মোট ১৩৭ জন ইউক্রেনীয় নাগরিক নিহত হয়েছে বলে এক ভিডিও বার্তায় জানিয়েছেন ভলোদিমির জেলেনস্কি। বার্তা সংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি এ খবর জানিয়েছে।
জেলেনস্কি আরও জানান, রাশিয়ার এমন বড় ধরনের আক্রমণে এখন পর্যন্ত ৩১৬ জন আহত হয়েছে।
জেলেনস্কি বলেন, ‘আজ আমরা ১৩৭ জন বীর, আমাদের নাগরিক, সামরিক ও বেসামরিক ব্যক্তিদের হারিয়েছি।’ এ ছাড়া আরও ৩১৬ জন মানুষ আহত হয়েছে বলে জানান তিনি।