কোভিড-১৯ হেলথ পাসের বিরুদ্ধে ফ্রান্সে বিক্ষোভ
নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে পাবলিক ভেন্যুতে প্রবেশ করতে ‘কোভিড-১৯ হেলথ পাস’ বাধ্যতামূলক করেছে ফ্রান্স সরকার। এ ছাড়া আগামী ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে যে স্বাস্থ্যকর্মীরা টিকা নেবেন না, তাদের বরখাস্ত করা হবে বলে জানানো হয়েছে। সরকারের এমন সিদ্ধান্তকে নিপীড়নমূলক বলছেন বিক্ষোভকারীরা। এসব সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে টানা চতুর্থ সপ্তাহান্তে ফ্রান্সের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে দেশটির হাজারও মানুষ। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ খবর জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, স্থানীয় টেলিভিশনে প্রকাশ হওয়া বিভিন্ন দৃশ্যে দেখা যায়, পুলিশ দেশটির তৃতীয় বৃহত্তম শহর লিয়নে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করছে। এ ছাড়া বিক্ষোভকারীরা প্যারিস, নিস, মন্টপেলিয়ারসহ বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছেন। ‘স্বৈরতন্ত্রকে না’-সহ বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে তাঁরা বিক্ষোভে যোগ দেন। তাঁরা ‘ম্যাক্রোঁ, আমরা আপনার হেলথ পাস চাই না’-বলেও স্লোগান দিতে থাকেন। প্যারিসে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া একটি হাসপাতালের সাইকিয়াট্রিস্ট ডায়ান হেকিং বলেন, ‘টিকা নেওয়ার জন্য আমাকে অর্থ দেওয়া হচ্ছে না বরং বাধ্য করা হচ্ছে।’
ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, এবার মোট দুই লাখ ৩০ হাজার মানুষ বিক্ষোভ মিছিল করেছে, যা গত মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।
ফ্রান্স সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী সোমবার থেকে রেস্তোরাঁয় খাওয়া, জরুরি নয়—এমন চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে যাওয়া এবং আন্তঃনগর ট্রেনে চলাচলের ক্ষেত্রে হেলথ পাস দেখাতে হবে। তবে, এখন থেকেই সুইমিং পুল, যাদুঘর ও নাইট ক্লাবে যাওয়ার জন্য হেলথ পাস দেখাতে হচ্ছে।
এদিকে, গত মাসে হেলথ পাস সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের পরই ফ্রান্সে করোনার টিকা নেওয়ার হার বেড়ে গেছে। এরই মধ্যে দেশটির দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ এক ডোজ টিকা নিয়েছে। এ ছাড়া ৫৫ শতাংশ মানুষ টিকা সম্পন্ন করেছে।
হেলথ পাসের মতোই ইউরোপের বিভিন্ন দেশে টিকা নেওয়া এবং সাম্প্রতিক করোনা টেস্টের নেগেটিভ রিপোর্ট প্রমাণ দেখানোর বিষয়টি লক্ষ করা গেলেও ফ্রান্সে হেলথ পাস এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের টিকা নেওয়া বাধ্যতামূলক করাকে অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বিস্তৃত পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে।
বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁর বিরুদ্ধে তাঁদের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ণ করা এবং নাগরিকদের সঙ্গে অসম আচরণের অভিযোগ তুলছেন। তবে ম্যাক্রোঁ বলছেন, স্বাধীনতার সঙ্গে আসে দায়িত্বশীলতা, যার মধ্যে একে অন্যের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি মাথায় রাখাও অন্তর্ভুক্ত।
রয়টার্স জানিয়েছে, ফ্রান্সের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী—জুলাই মাসের শেষের দিকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি হওয়া প্রতি ১০ জন কোভিড রোগীর মধ্যে নয় জন টিকা নেয়নি। জরিপে দেখা গেছে, বেশির ভাগ ফরাসি নাগরিকই হেলথ পাস সংক্রান্ত সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেন।