গণভোটে স্বেচ্ছামৃত্যুর পক্ষে রায় নিউজিল্যান্ডবাসীর
নিউজিল্যান্ডে জাতীয় পর্যায়ে দীর্ঘদিন ধরে এক আবেগী বিতর্কের বিষয় স্বেচ্ছামৃত্যুর স্বীকৃতি। অবশেষে সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিউজিল্যান্ডবাসী। ইউথ্যানাসিয়াকে স্বীকৃতি দিল দেশটির মানুষ। আগামী বছর থেকে মৃতপ্রায় মানুষ স্বেচ্ছায় মৃত্যু বেছে নিতে পারবেন। সংবাদমাধ্যম বিবিসি ও ডয়েচে ভেলের খবরে এমনটি জানানো হয়েছে।
বিশ্বের বহু দেশেই ইউথ্যানাসিয়া বা স্বেচ্ছামৃত্যু নিয়ে বহু আন্দোলন হচ্ছে। এ বিষয়ে মূলত দুটি বক্তব্য পাওয়া যায়। এমন অনেকে আছেন, যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন। তাঁরা এবং তাঁদের পরিবার জানে যে, কোনোভাবেই তাঁদের সুস্থ করা যাবে না। তবু তাঁদের চিকিৎসা চালিয়ে যেতে বিপুল অর্থ খরচ হয়। পাশাপাশি মৃতপ্রায় ব্যক্তি আরো বেশি শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণার শিকার হন। এর থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্যই প্রয়োজন স্বেচ্ছামৃত্যু। চিকিৎসকদের সাহায্য নিয়ে দ্রুত মৃত্যুর ব্যবস্থা করতে পারলে কষ্ট লাঘব হয়।
তবে স্বেচ্ছামৃত্যুর পক্ষের আন্দোলনকারীরা যাই বলুক, পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশের আইনই স্বেচ্ছামৃত্যুকে সমর্থন করে না। নেদারল্যান্ডস, কানাডার মতো কয়েকটি দেশে স্বেচ্ছামৃত্যুকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। নিউজিল্যান্ডেও দীর্ঘদিন ধরে ইউথ্যানাসিয়া নিয়ে আলোচনা চলছিল। সম্প্রতি নিউজিল্যান্ডের ভোটের সময় স্বেচ্ছামৃত্যু নিয়ে একটি রেফারেন্ডাম বা গণভোটের ব্যবস্থা করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার গণভোটের বেসরকারি ফলাফল মিলেছে। যাতে দেখা যাচ্ছে, দেশের ৬৫ শতাংশ মানুষ স্বেচ্ছামৃত্যুর পক্ষে। সম্পূর্ণ ফলাফল অবশ্য এখনো মেলেনি। পোস্টাল ব্যালট গুণে চূড়ান্ত ফল জানাতে আরো এক সপ্তাহ সময় লাগবে। তবে বিশেষজ্ঞদের ধারণা পোস্টাল ব্যালট বর্তমান ফলকে বদলে দিতে পারবে না।
নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন দীর্ঘদিন ধরেই স্বেচ্ছামৃত্যুকে সমর্থন করেছেন। গণভোটের ফলাফলকে সমর্থন করেছেন তিনি।
নিউজিল্যান্ডের ম্যাট ভিকারস ও লেক্রেটিয়া সিলস দম্পতি স্বেচ্ছামৃত্যু নিয়ে বিতর্কটি সামনে আনেন। স্বামী ম্যাট ভিকারসের সহায়তায় স্বেচ্ছামৃত্যুর বৈধতার আবেদন করেন ব্রেইন টিউমারে আক্রান্ত স্ত্রী লেক্রেটিয়া সিলস। কয়েক বছর ভোগার পর ২০১৫ সালে ৪২ বছর বয়সে মারা যান লেক্রেটিয়া। পরে ভিকারস এই আন্দোলন জারি রাখেন। লেক্রেটিয়া’স চয়েস : আ স্টোরি অব লাভ, ডেথ অ্যান্ড দ্য ল’ নামে একটি বইও লেখেন ভিকারস।
অন্যদিকে স্বেচ্ছামৃত্যুর পাশাপাশি আরো একটি বিষয়ে গণভোট হয়েছিল। পরিমিত গাঁজা সেবন বৈধ করা হবে কিনা। এ বিষয়ে ৫৩ শতাংশ মানুষ বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন, আর ৪৬ শতাংশ মানুষ পক্ষে ভোট দিয়েছেন। তবে পোস্টাল ব্যালটের ফলাফল এই ফল বদলে দিতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।