তালেবানের চার মাস, স্কুলবঞ্চিত মাধ্যমিকের মেয়েরা
আফগানিস্তানে তালেবানের ক্ষমতা নেওয়ার প্রায় চার মাস হয়ে গেছে। মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুলে যাওয়া থেকে এখনও বঞ্চিত রয়ে গেছে আফগান কিশোরীরা। দেশটির বিভিন্ন প্রদেশের স্কুলছাত্রী ও শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে বিবিসি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
বাদাখশান প্রদেশের ১৫ বছরের স্কুলছাত্রী মীনা বিবিসিকে বলেছে, ‘পড়াশোনা করতে না পারাটা মৃত্যুদণ্ড পাওয়ার মতো।’ স্কুল বন্ধ হওয়ার পর থেকে মীনা এবং তার বান্ধবীদের মধ্যে একরকম পরাজিত ও দ্বিধাগ্রস্ত মানসিকতা জেঁকে বসেছে।
তাখার প্রদেশের ১৬ বছর বয়সী লাইলা বলছে, ‘ঘরের কাজকর্মের বাইরে আমাদের কিছু করার নেই। আমরা এক বদ্ধ জায়গায় আটকে আছি।’
তেরো প্রদেশের শিক্ষার্থী ও প্রধান শিক্ষকের সাক্ষাৎকার নিয়েছে বিবিসি। মাধ্যমিক স্কুলগুলো বন্ধ থাকায় মেয়েরা ব্যাপক হতাশার কথা জানিয়েছে। তালেবানের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ‘যত তাড়াতাড়ি সম্ভব’ স্কুল চালু করা হবে।
তা ছাড়া এসব স্কুলের শিক্ষকেরা প্রায় সবাই গত জুন থেকে বেতনাদি পাচ্ছেন না বলে জানান।
কাবুলের এক স্কুলের প্রধান শিক্ষক হোয়াটসঅ্যাপে বিবিসির সঙ্গে আলাপকালে বলেছেন, ‘শিক্ষার্থীরা সত্যিই হতাশ। তারা মানসিকভাবে চাপে রয়েছে। আমি তাদের আশা দেখানোর চেষ্টা করছি শুধু।’
এদিকে, প্রাথমিক পর্যায়ে স্কুল চালু থাকলেও ব্যাপকভাবে মেয়েশিশুদের উপস্থিতি কমে গেছে বলে জানান শিক্ষকেরা। দারিদ্র্য বেড়ে যাওয়া এর পেছনে অনেকটা দায়ী বলে মনে করেন শিক্ষকেরা।
তালেবান সরকারের ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি শিক্ষামন্ত্রী আব্দুল হাকিম হেমাত বিবিসিকে জানিয়েছেন, আগামী বছর নতুন শিক্ষানীতি অনুমোদন হওয়ার আগপর্যন্ত মাধ্যমিক স্তরের মেয়েশিক্ষার্থীরা স্কুলে যেতে পারবে না।
তবে এ সত্ত্বেও কিছু কিছু জায়গায় স্থানীয় তালেবান নেতাদের সঙ্গে সমঝোতা করে চলছে মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়।
বলখ প্রদেশের মাজার-ই-শরিফ অঞ্চরের একজন প্রধান শিক্ষক জানিয়েছেন, কোনো বাধা-বিপত্তি ছাড়াই তাঁর স্কুল খোলা রয়েছে। মেয়েরা স্বাভাবিকভাবেই স্কুলে আসছে।
মাজার-ই-শরিফের আরেকটি এলাকার শিক্ষার্থীরা বিবিসিকে বলেছে, তাদের স্কুলে যাওয়ার পথে তালেবান যোদ্ধারা মেয়েদের চুল ও মুখ ঢেকে রাখতে বলে। এর ফলে তাদের স্কুলের এক-তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থী ভয়ে স্কুলে আসা বন্ধ করে দিয়েছে।
তিনটি প্রদেশের প্রধান শিক্ষকেরা জানিয়েছেন, তাঁরা স্কুল খুলেছিলেন শুধু বন্ধের নোটিশ দেওয়ার জন্য। কিন্তু, স্কুল কবে চালু হবে, তা জানাতে পারেননি তাঁরা। মেয়েরা প্রতিদিনই স্কুল গেটে আসে আর জিজ্ঞেস করে—কবে তাদের স্কুল খুলবে?