ফ্লাইট বাতিলের পর এবার ইরান থেকে নাগরিকদের ফিরিয়ে নিচ্ছে কুয়েত
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের কারণে ইরান থেকে ৭০০ জনের বেশি নাগরিককে ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছে কুয়েত। এরই মধ্যে গতকাল শনিবার পাঁচটি চার্টার ফ্লাইটে ১৩০ যাত্রী কুয়েত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছেছেন। কুয়েত এয়ারওয়েজ ও কুয়েত বার্তা সংস্থা (কুনা) এসব তথ্য জানিয়েছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার কুয়েত ইরানের সঙ্গে ফ্লাইট বাতিলের ঘোষণা দেয়। এদিকে, ইরাকও ইরানের সঙ্গে ফ্লাইট বাতিলের ঘোষণা দিয়েছে।
এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ইরানের ছয় নাগরিক মারা গেছেন বলে জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। আক্রান্ত হয়েছেন ২৮ জন।
দেশটির কোম থেকে বাবোল, আরাক, ইস্পাহান ও রাস্ত অঞ্চলে ভাইরাসটির বিস্তার ঘটেছে। এমনকি রাজধানী তেহরানেও করোনাভাইরাস তথা কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। আক্রান্তের বেশির ভাগই রাজধানী তেহরান থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরের ওই কোম শহরের বলে জানা গেছে।
এদিকে, আশঙ্কাজনক হারে পৃথিবীজুড়ে বেড়ে চলেছে করোনাভাইরাসের প্রকোপ। সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আজ রোববার চীনে মৃতের সংখ্যা দুই হাজার ৪০০ জনে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৭৭ হাজার। চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য সংস্থার বরাত দিয়ে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা এ খবর জানিয়েছে।
চীনে আগের তুলনায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমলেও দক্ষিণ কোরিয়া, ইরান, ইতালি ও রোমানিয়ায় আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ছে দ্রুতগতিতে। রোগটির লক্ষণ অন্যদিকে মোড় নিয়েছে বলেও মনে করছেন চিকিৎসকরা। যা নিয়ে গবেষণা শুরু করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
ইতালিতে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে যেকোনো ধরনের জনসমাগমস্থল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। দেশটিতে একের পর এক মানুষ ধরাশায়ী হচ্ছেন রোগটিতে। ছড়িয়ে পড়ছে এক শহর থেকে অন্য শহরে। একাধিক শহরের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে সারা দেশের।
এদিকে, কোভিড-১৯ নিয়ে নতুন তথ্য দিচ্ছেন চীনের চিকিৎসকরা। ২০ বছর বয়সী এক তরুণী কোনো রকম লক্ষণ ছাড়াই উহান থেকে কমপক্ষে ৪০০ মাইল দূরের একটি শহরে যাওয়ার পর তাঁর দ্বারা পরিবারের পাঁচজন রোগটিতে আক্রান্ত হন। পর্যবেক্ষণ করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা ধারণা করছেন, রোগটি নতুন নতুন লক্ষণ নিয়ে অন্যদিকে মোড় নিচ্ছে, যা আরো প্রাণঘাতী হতে পারে।
রোগটি যাতে মানুষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে না যায়, সেটিই এখন সবচেয়ে জরুরি বলে মনে করছেন বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা। যেহেতু রোগটি আর কোনো একটি দেশের মানচিত্রে সীমাবদ্ধ নেই, তাই এ মুহূর্তে চীনের পাশে দাঁড়াতে দ্বিধা করা উচিত নয় বলে মনে করেন তাঁরা।
চীনে আমেরিকান চেম্বার অব কমার্সের চেয়ারম্যান গ্রেগ জিলিয়ান বলেন, ‘একাত্মতাই এ মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি। অবশ্যই এমন কিছু আছে, যা চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উত্তেজনার কারণ হতে পারে। তবে সময়টা মোটেই সেসব নিয়ে কথা বলার জন্য উপযুক্ত নয়। কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে কী করা উচিত এবং চীনের পাশে কীভাবে দাঁড়ানো যায়, সেটাই ভাবাচ্ছে আমাদের।’
করোনাভাইরাসের লক্ষণ পাল্টে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে অবহিত আছে ডব্লিউএইচও। সংস্থাটির প্রধান টেড্রস আধানম জানান, বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে গবেষণা ও পর্যবেক্ষণ শুরু করেছেন তাঁরা।