ভোটের পর ট্রাম্প যা-ই বলেছেন, প্রায় সবই মিথ্যা : সিএনএন
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পরের কয়েক ঘণ্টায় ট্রাম্প যা-ই বলেছেন, তার প্রায় সবই মিথ্যা বলে দাবি করছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন। এ ছাড়া নির্বাচনের আগে বছরজুড়েই ট্রাম্প এ ধরনের মিথ্যাচার করে আসছেন বলে দাবি সংবাদমাধ্যমটির।
সিএনএন বলছে, প্রথমত, কয়েক মাস আগে থেকেই মেইল-ইন ব্যালটকে জালিয়াতি বলে চিহ্নিত করতে থাকেন ট্রাম্প। দ্বিতীয়ত, তিনি মিথ্যা দাবি করেছিলেন, যেসব ডেমোক্র্যাট গভর্নর তাঁকে অপছন্দ করেন, তাঁরা ব্যালট গণনার দায়িত্বে রয়েছেন। তৃতীয়ত, নির্বাচনের পরের দিন ভোট গণনার স্বাভাবিক অনুশীলনকে অবৈধ বলে মিথ্যা অভিযোগ দেন তিনি।
সিএনএন আরো বলছে, ট্রাম্প তাঁর শাসনামলে বরাবরই এ ধরনের মিথ্যাচার করে আসছেন। এই নির্বাচনে তাঁর পরাজয় হলে ভোট ঘিরে সমর্থকদের মধ্যে যেন সন্দেহ থাকে, সে চেষ্টাই করেছেন ট্রাম্প।
এর আগে ভোটগণনার মধ্যে ব্যাটলগ্রাউন্ড কিছু অঙ্গরাজ্যের ফল প্রকাশ না হলেও বুধবার জয় ঘোষণা করেছিলেন ট্রাম্প। এ ছাড়া, নির্বাচনে জালিয়াতি হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি। হোয়াইট হাউসে নিজের জয়ের ঘোষণা দিয়ে কোনো প্রমাণ ছাড়াই দাবি করেন, নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে। এ ছাড়া ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যাই অভিযোগ করেছেন, তাঁর প্রায় সবই মিথ্যা বলে দাবি সিএনএনের।
বুধবার ট্রাম্পের করা টুইটগুলোর মধ্যে ছয়টিতে সতর্কতামূলক লেবেল জুড়ে দেয় টুইটার কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে এক টুইটে ট্রাম্প ডেমোক্র্যাটদের বিরুদ্ধে ভোট চুরির পরিকল্পনার অভিযোগ এনে লেখেন, ‘তারা (ডেমোক্র্যাটরা) ভোট চুরির চেষ্টা করছে। আমরা কখনোই সেটা করতে দেব না। ভোট গ্রহণের সময় শেষ হওয়ার পর ভোট দেওয়া যাবে না।’
ট্রাম্পের এমন বক্তব্যের ব্যাপারে সিএনএন বলছে, ট্রাম্পের এ দাবি মিথ্যা। নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে এমন কোনো প্রমাণ নেই। ভোট শেষ হওয়ার পর কেউ ভোটও দেয়নি।
এ ছাড়া অন্য একটি টুইটে ট্রাম্প পেনসিলভানিয়া, জর্জিয়া ও নর্থ ক্যারোলাইনায় নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা করেছিলেন এবং অভিযোগ করেছিলেন এ তিনটি অঙ্গরাজ্যে প্রচুর ভোট গোপনে ফেলে দেওয়া হয়েছে। তবে সেটির কোনো প্রমাণ না থাকায় সতর্কতামূলক লেবেল জুড়ে দেয় টুইটার কর্তৃপক্ষ।
এদিকে, রিপাবলিকান দলের প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পশিবির জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের কিছু এলাকায় ভোট গণনা স্থগিত করার আবেদন জানিয়ে মামলা করেছে। বিবিসির খবরে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
জর্জিয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটলগ্রাউন্ড অঙ্গরাজ্য যেটিতে এখনো কোন প্রার্থী জিততে পারেন, তা ধারণা করা যায়নি।
মামলায় অভিযোগ তোলা হয়, রিপাবলিকান পর্যবেক্ষক চ্যাথাম কাউন্টির ব্যালটের স্তূপে একজন ভোট গণনাকর্মীকে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে দেরিতে আসা ৫৩টি পোস্টাল ব্যালট যুক্ত করতে দেখেছেন। জর্জিয়ায় ভোটের দিন সন্ধ্যা ৭টার আগে ডাকযোগের ভোট নির্ধারিত স্থানে পৌঁছানোর নিয়ম।
এজন্য গুরুত্বপূর্ণ চতুর্থ অঙ্গরাজ্য হিসেবে জর্জিয়ায় আইনি পদক্ষেপ নেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। যেসব জায়গায় ব্যালটে ‘প্রতারণা’ হয়েছে, সেসব জায়গায় ভোট গণনা থামানো হবে বলে অঙ্গীকার করেছেন তিনি। তবে দাবির স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেননি ট্রাম্প।
এ ছাড়া মিশিগান অঙ্গরাজ্যে ব্যালট গণনা বন্ধ করতে মামলা করেছে ট্রাম্পশিবির। ওই অঙ্গরাজ্যে এরই মধ্যে বাইডেন জয়ী হয়ে ১৬টি ইলেকটোরাল ভোট পেয়েছেন। ওই অঙ্গরাজ্যে বাইডেন ২৭ লাখ ৬৮ হাজার ৩১৬ পপুলার ভোট পেয়েছেন। আর ট্রাম্প পেয়েছেন ২৬ লাখ ৩২ হাজার ৭১১ ভোট।
পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যে ভোটের দিনের তিন দিন পরে আসা ডাকযোগের ব্যালট গণনার সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন রিপাবলিকানরা। ওই অঙ্গরাজ্যে এখনো ভোট গণনা শেষ হয়নি।
এ ছাড়া উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যে ট্রাম্পশিবির ‘মঙ্গলবারে দেখতে পাওয়া অস্বাভাবিকতার ভিত্তিতে’ ভোট পুনরায় গণনার আবেদন জানিয়ে মামলা করেছে। এখানে বাইডেন ১৬ লাখ ৩০ হাজার ৫৪২ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। তিনি পেয়েছেন ১০ ইলেকটোরাল ভোট। অন্যদিকে ট্রাম্প এখানে ১৬ লাখ ১০ হাজার সাত ভোট পেয়েছেন।