সাবেক দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের ছাড় দিচ্ছে তালেবান
আফগানিস্তানের ক্ষমতাসীন তালেবান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে—তারা ব্যাপক দুর্নীতির জন্য দায়ী সাবেক আফগান কর্মকর্তাদের বিচারের মুখোমুখি করবে না। যদিও এসব কর্মকতার দুর্নীতির কারণে আফগানিস্তানের দাতাদের-অর্থায়নকৃত উন্নয়ন প্রকল্পগুলো ভেস্তে গেছে। শুধু তাই নয়, এসব দুর্নীতি সাবেক আফগান প্রজাতন্ত্রের পতনেও ভূমিকা রেখেছে।
তালেবানের প্রধান মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ ভয়েস অব আমেরিকার পশতু সার্ভিসকে বলেছেন, ‘যারা আগের আগ্রাসনের সময় মার্কিন ব্যবস্থা থেকে নিজেরা লাভবান হয়েছিল, সেসব সম্পত্তি ও সম্পদের মালিকানা তাদেরই থাকবে।’
তবে, জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ জানান—দুর্নীতির জন্য সন্দেহভাজন যেসব সাবেক কর্মকর্তা গত দুই দশকে ব্যক্তিগত সম্পত্তি বা সরকারি সম্পত্তি দখল করেছেন, তাঁরা আদালতের মুখোমুখি হবেন।
দুর্নীতির মাধ্যমে বিগত আফগান সরকারের কিছু কর্মকর্তার অর্জিত সম্পত্তির বিষয়ে জানতে চাইলে মুজাহিদ বলেন, ‘যেসব ব্যক্তি আগের ব্যবস্থার অপব্যবহার করেছেন’ তাঁরা আইনি জবাবদিহির সম্মুখীন হবেন না এবং তাঁদের সম্পদ তাঁরা রাখতে পারবেন।
২০০২ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে পুনর্গঠন ও উন্নয়ন প্রকল্পে ১৪ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের বেশি ব্যয় করেছে। এ ছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো অন্যান্য দাতারাও একই উদ্দেশ্যে হাজার হাজার কোটি ডলার আফগানিস্তানে পাঠিয়েছে।
আফগান-মার্কিন বিশ্লেষক ওয়াহেদ ফকিরি বলেছেন, ‘দুর্নীতি আফগানিস্তানের অসম্মানজনক পতনের অন্যতম কারণ ছিল। এটি পুরো ব্যবস্থাকেই ক্ষুণ্ণ করেছে। বিশেষ করে প্রজাতন্ত্রের বৈধতাকে মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ণ করেছে। এ ছাড়া দুর্নীতি তালেবানকে শক্তিশালী করেছে। তালেবানের প্রচারকে কার্যকর ও বাস্তব করে তুলেছে।’
মোহাম্মদ হালিম ফিদাই নামের একজন সাবেক ঊর্ধ্বতন আফগান কর্মকর্তা বলেছেন, দুর্নীতি একটি কারণ, কিন্তু তা ইসলামিক রিপাবলিক অব আফগানিস্তানের পতনের অন্তর্নিহিত কারণ নয়।
ফিদাই বলেন, ‘দুর্নীতি তুলে ধরার লক্ষ্য হলো যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের ভুল কাজ থেকে মনোযোগ সরিয়ে নেওয়া। তালেবান বিদ্রোহীরাও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিল, কারণ তারা কর আরোপ করেছিল এবং উন্নয়ন প্রকল্প থেকে অর্থ আদায় করেছিল৷
ফিদাই আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ব্যয় ত্রুটিপূর্ণ ছিল। এমনকি তা আফগানিস্তানে দুর্নীতিতে ইন্ধন জুগিয়েছিল। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র প্রথম দিকে দুর্নীতির মাত্রা বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে। ক্ষমতায়িত যুদ্ধবাজ এবং অন্যান্য দুর্নীতিবাজ নায়কেরা, অতি তাড়াতাড়ি এত অর্থ ঢেলে দিয়েছে যে, তা হজম করা সম্ভব হয়নি।’
প্রায় এক বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা তালেবান দুর্নীতি দমনে এখনও কোনো নীতি ঘোষণা করেনি বা এর জন্য কোনো সরকারি সংস্থা নিয়োগ করেনি।