১১ দেশে মাঙ্কিপক্স শনাক্ত হয়েছে : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে—বিশ্বের ১১ দেশে প্রায় ৮০ জন মাঙ্কিপক্সে সংক্রমিত হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এবং আরও আক্রান্তের তথ্য পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে সংস্থাটি সতর্ক করেছে। খবর বিবিসির।
ডব্লিউএইচও কোনো দেশের নাম উল্লেখ না করে জানিয়েছে—আরও ৫০টি সম্ভাব্য সংক্রমণের তথ্য যাচাই করা হচ্ছে।
এর আগে ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে প্রথমে ইতালি, সুইডেন, স্পেন, পর্তুগাল, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও যুক্তরাজ্যে মাঙ্কিপক্সের সংক্রমণের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গিয়েছিল। এ ছাড়া অস্ট্রেলিয়াতেও শনাক্ত হয়েছে এ রোগ।
বিবিসি জানিয়েছে, মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকার প্রত্যন্ত অঞ্চলে মাঙ্কিপক্স সচরাচর বেশি দেখা যায়।
যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্য পরিষেবার তথ্য অনুসারে, মাঙ্কিপক্স একটি বিরল ভাইরাসজনিত সংক্রমণ, যা সাধারণত তেমন মারাত্মক নয়; এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আক্রান্ত ব্যক্তি কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এ রোগ থেকে সেরে ওঠে।
ব্রিটিশ স্বাস্থ্য দপ্তর আরও জানিয়েছে, মাঙ্কিপক্স ভাইরাসটি সহজে মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় না। এবং মানুষের মধ্যে এ রোগের ব্যাপক সংক্রমণের ঝুঁকি খুব কম বলেই জানা গেছে।
মাঙ্কিপক্স প্রতিরোধের জন্য নির্দিষ্ট কোনো টিকা নেই। তবে, বিবিসি বলছে—গুটিবসন্তের টিকা নেওয়া থাকলে, তা মাঙ্কিপক্স থেকে ৮০ শতাংশ সুরক্ষা দেয়, কেননা দুটি ভাইরাস অনেকটা একই ধরনের।
সাধারণত যেভাবে ছড়ায়
বিজ্ঞানীদের মতে, ‘মাঙ্কিপক্স’ গুটিবসন্ত (স্মলপক্স) ভাইরাসের পরিবারভুক্ত ও ছোঁয়াচে। আক্রান্তের সংস্পর্শে এলে মাঙ্কিপক্স ভাইরাস এক জনের শরীর থেকে অন্য জনের দেহে দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে।
বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন—বিরল এ ভাইরাস প্রাণীদেহ থেকে মানুষে সংক্রমিত হয়েছে।
সাধারণত মাঙ্কিপক্স ভাইরাস সাধারণ ‘ফ্লু’ বা ঠান্ডাজনিত অসুখের মতো অসুস্থতা ও লিম্ফ নোডের (শরীরের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থাপনার একটি অঙ্গ) ফোলা দিয়ে শুরু হয়ে ফুসকুড়ি ও ফোসকার মতো ক্রমে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।
মাঙ্কিপক্স ভাইরাসটি প্রধানত মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকার গ্রীষ্মমণ্ডলীয় রেইন ফরেস্ট অঞ্চলে শনাক্তের তথ্য এত দিন ছিল। কিন্তু, এখন ইউরোপ ও আমেরিকা থেকে মাঙ্কিপক্সের সংক্রমণের খবর সামনে আসছে।
কতটা বিপজ্জনক মাঙ্কিপক্স, উপসর্গ কী কী?
মাঙ্কিপক্স ভাইরাসের প্রধান উপসর্গগুলো হলো—জ্বর, মাথাব্যথা, পিঠে ও ঘাড়ে ব্যথা, খিঁচুনি, অবসাদ এবং সারা গায়ে ছোপ ছোপ দাগ।
বেশির ভাগ সংক্রমণ দুই থেকে চার সপ্তাহ স্থায়ী হয়। সাধারণত, এ ভাইরাসের সংক্রমণে জ্বর, ফুসকুড়ি ও লিম্ফ নোড ফুলে যাওয়ার মতো লক্ষণ দেখা যায়।
বিজ্ঞানীদের দাবি—জীবিত বা মৃত বন্য প্রাণীর মাংস খেলে এ রোগ ছড়ানোর আশঙ্কা বহুগুণ বেড়ে যায়।
শরীরের তরল, ঘা, খোলা ক্ষত স্থানের সংস্পর্শে এলে বা দীর্ঘস্থায়ী যোগাযোগের পরে শ্বাস-প্রশ্বাস থেকে নির্গত সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম কণার মাধ্যমে এ ভাইরাস ছড়াতে পারে। রোগের সময়কাল সাধারণত ছয় থেকে ১৩ দিন। তবে, মাঙ্কিপক্স ভাইরাসের লক্ষণগুলো সংক্রমণের পাঁচ থেকে ২১ দিনের মধ্যেও দেখা দিতে পারে। মাঙ্কিপক্সের লক্ষণগুলো হালকা বা গুরুতর হতে পারে এবং সাধারণত ১৪ থেকে ২১ দিনের মধ্যে নিজে থেকেই চলে যায়। মাঙ্কিপক্সের ফলে ত্বকে সৃষ্টি হওয়া ক্ষতে খুব চুলকানি বা যন্ত্রণা হতে পারে।
যৌনসম্পর্ক থেকেও ছড়ানোর শঙ্কা!
বিজ্ঞানীরা এত দিন বলেছিলেন, ভাইরাসটি সহজে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে না। এ ছাড়া এর আগে মনে করা হতো শিশুদের মধ্যেই বেশি পরিমাণে ছড়ায় এ মাঙ্কিপক্স। কিন্তু, এখন দেখা যাচ্ছে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যেও ছড়াচ্ছে অসুখটি।
যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র-সিডিসি’র পক্ষ থেকে বলা হয়েছে—যৌনসম্পর্কের সঙ্গে এ রোগের সংক্রমণ ছড়ানোর যোগসূত্র থাকতে পারে। সিডিসি বলছে—সমকামী ও উভকামী পুরুষ ও নারীর মধ্যে এ রোগের হার বেশি। মার্কিন স্বাস্থ্য দপ্তর খতিয়ে দেখছে কীভাবে বাড়ছে এ অসুখ।
এখন পর্যন্ত কারও মাঙ্কিপক্সে মৃত্যু হয়নি। যাদের স্মলপক্সের টিকা নেওয়া আছে, তাদের ক্ষেত্রে এ রোগ মারাত্মক আকার নেবে না বলে ধারণা অনেকের।