ছিটমহলে শুরু হচ্ছে মাথা গোনার কাজ
বাংলাদেশ ও ভারতের ছিটমহলের বাসিন্দাদের মাথা গোনার (হেড কাউন্টিং) কাজ শুরু হচ্ছে। আগামী ৬ জুলাই শুরু হয়ে টানা ১৬ জুলাই পর্যন্ত চলবে এই কাজ। একই সঙ্গে দুই দেশের ছিটমহলে জবরদখল করে রাখা জমিতে পিলার বসানোর কাজও শুরু হবে। বাংলাদেশ ও ভারত যৌথভাবে এসব কাজ করবে।
দীর্ঘ সময় ধরে রাষ্ট্রহীন হয়ে থাকা ছিটমহলকে এবার বাংলাদেশ-ভারতের মানচিত্রে স্থান দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হতে চলেছে। ভারত-বাংলাদেশ জয়েন্ট বাউন্ডারি ওয়ার্কিং গ্রুপ ছিটমহল বিনিময় এবং দুই দেশের জমিকে মানচিত্রে তোলার কাজটি করবে।
বাংলাদেশের মধ্যে থাকা ভারতীয় ছিটমহলের বাসিন্দাদের সেখান থেকে তাড়ানোর চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অথচ বাংলাদেশের ছিটমহলে এমন অনেক মানুষ রয়েছে, যারা ভারতে ফিরতে চায় না। অথচ বাংলাদেশের কিছু ভূমি মাফিয়া তাদের জোর করে ভারতে পাঠিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে বেশকিছু অভিযোগ জমা পড়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সেই সব অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক বাংলাদেশের অংশে থাকা ভারতের ৫১টি ছিটমহলের বিভিন্ন জায়গায় অফিসার পাঠিয়ে খোঁজ নেওয়া শুরু করেছে। এরই মধ্যে লালমনিরহাটের চারটি, পঞ্চগড়ের আটটি জায়গায় গিয়ে সরেজমিনে গিয়ে অবস্থা দেখেও এসেছেন তারা।
ভারত বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করার কারণে বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, লালমনিরহাট, পঞ্চগড়ের বিভিন্ন জায়গায় যে সমস্ত ছিটমহল রয়েছে সেখানকার জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্স করেছেন বলে জানা গেছে।
সরকারিভাবে বাংলাদেশ ভারতকে জানিয়েছে, সেখানকার ছিটমহলের বাসিন্দাদের কোনো হেনস্তা করা হচ্ছে না। তা সত্ত্বেও ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটি বাসিন্দাদের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে নিরাপত্তা বাহিনীকে বাংলাদেশে থাকা ভারতীয় ছিটমহলে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে তা অবশ্যই বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেই পাঠানো হবে।
ছিটমহলের বুকে ২০১১ সালে যে জনগণনা হয়েছিল, সেখানে ভারতে থাকা বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহলে জনসংখ্যা ছিল ১৪ হাজার ২২১ জন। অন্যদিকে, বাংলাদেশে থাকা ভারতের ১১১টি ছিটমহলে জনসংখ্যা ছিল ৩৭ হাজার ৩৬৯ জন। কিন্তু সেই জনগণনার পরে গত চার বছরে দুই দেশের ছিটমহলে জনসংখ্যা বেড়েছে। তাই বর্তমানে ছিটমহলের সঠিক জনসংখ্যা নথিভুক্ত করতে মাথা গোনার কাজ শুরু হচ্ছে।
ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালে জনগণনার সময় ছিটমহলে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের পরিবারে নতুন যেসব শিশু জন্মগ্রহণ করেছে, তাদের নাম এবার নথিভুক্ত করা হবে। তবে গত চার বছরে যদি কেউ বাইরে থেকে এসে ছিটমহলে বসবাস শুরু করেন, তাহলে তাঁকে সেখানকার বাসিন্দা হিসেবে গ্রাহ্য করা হবে না। মাথা গোনার পাশাপাশি দুই দেশের ছিটের বাসিন্দাদের কাছে জানতে চাওয়া হবে তাঁরা কোন দেশে থাকতে চান? যে যে দেশে থাকতে চান, তাঁদের সেই দেশের সরকারের পরিচয়পত্র দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। মাথা গোনার সঙ্গে সঙ্গে ছবি তোলার প্রক্রিয়াও চলবে। পরবর্তীকালে ছিটমহলবাসীদের ভোটার কার্ড দেওয়া হবে।
আগামী ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে এই কাজ শেষ করা হবে। ওই দিনটিকে ‘অ্যাপয়েন্টমেন্ট ডে’ হিসেবে ধরা হয়েছে। ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে এই স্থলসীমান্ত চুক্তির ফলে ভারতে থাকা বাংলাদেশি ছিটমহলের সাত হাজার ১১০ একর জমি ভারতের হবে। অন্যদিকে বাংলাদেশে থাকা ভারতীয় ছিটমহলের ১৭ হাজার ১৬০.৬৩ একর জমি পাবে বাংলাদেশ।
কেবল ছিটমহলের জমিই নয়। ভারতের সংবিধান সংশোধন বিল পাস হওয়ায় দুই হাজার ৭৭৭.১৪ একর জবরদখল করে রাখা জমি ভারত পাবে। পাশাপাশি জবরদখলকৃত দুই হাজার ২৬৭.৮৮ একর জমি বাংলাদেশের সরকার পাবে।
এদিকে আগামী ৩১ জুলাই ২০১৫ মধ্যরাত থেকে ভারতের অভ্যন্তরে থাকা যাবতীয় বাংলাদেশি ছিট ভারত ভূখণ্ড হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবে। বুধবার এই বিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার জেলা শাসক পি উলগানাথন। একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল চুক্তির পর গোটা বিষয়টি কীভাবে বাস্তবায়িত হবে তা ঠিক হবে আজ অর্থাৎ ২৫ জুন। ভারতের কোচবিহারের জেলা শাসক পি উলগানাথন জানান, আজ ২৫ জুন দুই দেশের প্রশাসনিক কর্তাদের নিয়ে বৈঠক করার নির্দেশ এসেছে। সেই মতো প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। কীভাবে ছিটমহলের বাসিন্দাদের দুই দেশে বসবাসের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে তা নিয়ে এই বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হবে। পাশাপাশি ভারতীয় ছিটমহল থেকে কতজন মানুষ বাংলাদেশে যাবে, আর বাংলাদেশ ছিটমহল থেকে কতজন মানুষ ভারতে আসবে, তা নিয়ে যে সমস্যা রয়েছে তা আজকের বৈঠকের পরেই সমাধান করার প্রক্রিয়া শুরু হবে। যার জন্য এরই মধ্যে ভারত-বাংলাদেশ আধিকারিকদের নিয়ে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ তৈরি করা হয়েছে। এদিনের বৈঠকের পরেই ছিট বদলের গোটা প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে।
কোচবিহারের জেলা শাসক পি উলগনাথন এদিন ছিটমহলবাসীর জন্য এক বিশেষ বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানান, আগামী ৩১ জুলাই ২০১৫ মধ্যরাত থেকে ভারতের অভ্যন্তরে থাকা যাবতীয় বাংলাদেশি ছিট ভারত ভুখণ্ড বলে চিহ্নিত হবে। তারপর ভারত-বাংলাদেশ দুই দেশের আধিকারিকদের মাধ্যমে ছিটমহলবাসীর মতামতের ভিত্তিতে কে কোন দেশে থাকতে চায় তা ঠিক করা হবে।