ছিটমহলে বাড়ছে বহিরাগতদের ভিড়!
আগামী ৬ জুলাই থেকে ভারত-বাংলাদেশের ছিটমহলে শুরু হচ্ছে মাথা গোনার কাজ। এর আগেই বহিরাগতদের ভিড় বাড়ছে ছিটমহল এলাকায়। ভারতের নাগরিকত্ব পাওয়ার আশাতেই তাঁদের এই আনাগোনা বলে মনে করছেন ছিটমহলের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা।
ছিটমহলের কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্থানীয় একশ্রেণীর দালালচক্রের হাত ধরে তাঁরা ছিটে রাতারাতি ঘরবাড়ি বানিয়ে কিংবা ঘর ভাড়া নিয়ে ছিটের বাসিন্দা হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন। মূলত দালালচক্র রাজনৈতিক দলগুলোর ভোটব্যাংক বাড়ানোর প্রত্যাশা জুগিয়ে এই প্রচেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের।
এদিকে, ৬ জুলাই ছিটমহলে মাথা গোনার যে কাজ শুরু হওয়ার কথা, সেই কাজের প্রস্তুতি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটি।
কমিটির সহসভাপতি দীপ্তিমান সেনগুপ্ত জানান, দালালচক্রের এই সক্রিয়তায় বর্তমানে দুই দেশের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
আগামী ৩১ জুলাই মাঝরাত থেকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতীয় ছিটগুলো যেমন বাংলাদেশ ভূখণ্ডের সঙ্গে মিশে যাবে, তেমনি ভারতের অভ্যন্তরে থাকা বাংলাদেশের ছিটগুলো ভারতের সঙ্গে মিশে যাবে। এ দুই পারের ছিটের বাসিন্দারা কে কোন দিকে যাবেন, তা জানার প্রক্রিয়া এবং ছিটমহলবাসীর মাথা গোনার কাজ শুরু হবে ৬ জুলাই। দুই দেশের সরকারি প্রতিনিধিদল যৌথভাবে এই জরিপ চালাবে।
এ বিষয়ে দীপ্তিমান সেনগুপ্ত জানান, মাথা গোনার কাজ শুরুর আগে প্রশাসনের তরফে এ বিষয়ে যথেষ্ট মাইকিং করা হয়নি এলাকায়। দু-একদিন ছাড়া মাইকিং করা হয়নি। কীভাবে এই মাথা গোনা হবে, তা নিয়ে ধোঁয়াশায় ছিটমহলবাসী। ছিটমহলের যেসব বাসিন্দা রুটি-রুজির খাতিরে বাইরে রয়েছেন, তাঁদের মাথা গোনার জন্য ঠিক কবের মধ্যে ছিটে আসতে হবে তা-ও স্পষ্ট নয়। কীভাবে এই গণনা প্রক্রিয়া চলবে, তা-ও বুঝে উঠতে পারছেন না ছিটের বাসিন্দারা। অথচ প্রশাসনিক কর্তারা এই বিষয়ে নিশ্চুপ।
এসব বিষয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার জেলা প্রশাসক পি উলগনাথনের সঙ্গে দেখা করেন কমিটির সদস্যরা। সেখানে তাঁরা অবিলম্বে ছিটমহলে মাথা গোনার প্রক্রিয়া স্পষ্ট করার দাবি জানান।
উলগনাথন ছিটমহলের নেতাদের জানিয়েছেন, দুই দেশের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে গোটা প্রক্রিয়া চলবে। প্রশাসন সব ধরনের সহযোগিতা করবে ছিটের বাসিন্দাদের। ছিটমহলের কোনো বাসিন্দাই মাথা গোনা প্রক্রিয়ার বাইরে থাকবেন না।
তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হলেও দুশ্চিন্তা কমছে না ছিটমহলবাসীর। তাই মাথা গোনার সময় যাতে কেউ বাদ চলে না যায়, সেই আশঙ্কায় এখন থেকেই দূর-দূরান্তের কাজ ফেলে বাড়ি ফেরার পথ ধরেছেন ছিটের বাসিন্দারা।