বেলআউট নিয়ে গ্রিসে গণভোট শুরু
ঋণদাতাদের দেওয়া অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার সহায়তা (বেলআউট) প্রস্তাবের ওপর গ্রিসে স্থানীয় সময় আজ রোববার সকাল ৭টায় গণভোট শুরু হয়েছে। এই ভোটের মাধ্যমে গ্রিস ইউরো অঞ্চলে থাকবে, নাকি বের হয়ে যাবে—সে ব্যাপারে গ্রিসবাসী তাদের রায় জানাবে।
urgentPhoto
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, বিকেলেই এর ফলাফল পাওয়া যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে। গত শুক্রবার এই গণভোটের পক্ষে-বিপক্ষে চরম উত্তেজনাপূর্ণ প্রচার শেষ হয়েছে। সরকার জনগণের প্রতি ‘না’ ভোটের আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু ঋণদাতাদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে গ্রিসকে ইউরো অঞ্চল থেকে বের করে দেওয়া হবে বলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
গতকাল শনিবার গ্রিসে অর্থমন্ত্রী ইয়ানিস ভারোফাকিস স্থানীয় গণমাধ্যমকে বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ইউরো অঞ্চল থেকে গ্রিসকে বের করে দেওয়ার ‘কোনো আইনগত ভিত্তি নেই’। তিনি অভিযোগ করেন, ভোটের আগে ঋণদাতারা ভীতি প্রদর্শনের চেষ্টা করছে। তিনিই মানদো পত্রিকাকে বলেন, ‘কেন তারা আমাদের ব্যাংক বন্ধ করে দিতে বাধ্য করেছে? জনগণের মধ্যে ধীরে ধীরে ভয় ঢুকে যাচ্ছে এবং এই ভীতি ছড়ানোকে সন্ত্রাসবাদ বলে।’ অর্থমন্ত্রী জানান, ভোটের ফলাফল যা-ই হোক না কেন, মঙ্গলবার গ্রিসের ব্যাংকগুলো খুলে দেওয়া হবে।
গ্রিস ও ঋণদাতাদের মধ্যে আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার পর গত সপ্তাহে গ্রিসের ব্যাংকগুলো বন্ধ হয়ে যায়।
গ্রিসের কঠোর সমালোচক জার্মান অর্থমন্ত্রী উলফগ্যাং সায়েবলা বলেছেন, গ্রিস যদি ইউরো অঞ্চল থেকে বের হয়ে যায়, তাহলে তা হবে সাময়িক। জার্মান পত্রিকা বিল্ডকে তিনি বলেন, ‘গ্রিস ইউরো অঞ্চলের সদস্য। এতে কোনো সন্দেহ নেই।’
ট্রয়কার কাছ থেকে গ্রিস আবারো ঋণ নিবে কি না, সে প্রশ্নেই আজকের এই গণভোট। ট্রয়কা হলো ইউরোপের তিন প্রতিষ্ঠান ইউরোপীয় কমিশন, ইউরোপীয় সেন্ট্রাল ব্যাংক ও আইএমএফ। অর্থনৈতিক সংকট থেকে বের হতে দেশটির নতুন ঋণ প্রয়োজন রয়েছে। ট্রয়কাও দিতে চাইছে। কিন্তু ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে বেঁকে বসেছে জনগণের একটি বিরাট অংশ। তার কারণ, দেশটির কৃচ্ছ্রসাধনের তিক্ত অভিজ্ঞতা।
এর আগে দুবার ঋণ গ্রহণ করেছিল গ্রিস। ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে গ্রিক পার্লামেন্টে গৃহীত হয় প্রথম ‘কৃচ্ছ্রসাধন’ কর্মসূচি। এতে সরকারি কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি বন্ধ হয়। বোনাস ও ওভারটাইম ভাতা কমানো হয় ১০ শতাংশ। মার্চে দ্বিতীয় কৃচ্ছ্রসাধন কর্মসূচি পাস হয় গ্রিক পার্লামেন্টে। এতে ছিল পেনশন আর বৃদ্ধি না করা, ভ্যাট শতকরা ১৯ থেকে বাড়িয়ে ২১ ভাগ করা, তেলসহ কয়েকটি পণ্যের ওপর শুল্ক বৃদ্ধি, রাষ্ট্রীয় খাতে বেতন হ্রাস।
সর্বশেষ গ্রিসের পরিস্থিতি দাঁড়ায় এ রকম : তরুণদের এখন শতকরা প্রায় ৫০ ভাগ বেকার। শতকরা ৩৩ ভাগ জাতীয় স্বাস্থ্যবিমার বাইরে। শতকরা ৩২ ভাগ দারিদ্র্যসীমার নিচে।
এ পরিস্থিতিতেই ‘না’ ভোটের জন্য আহ্বান করেছেন গ্রিক প্রধানমন্ত্রী অ্যালেক্সিস সিপ্রাস। ইউরো অঞ্চল থেকে বের হওয়ার বিপদও কম নয়। ইউরোপের সহায়তা ছাড়া দেশটি এর অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করতে পারবে কি না, এ বিষয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে বিরোধীদের মধ্যে। তাই এই গণভোট নিয়ে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে গ্রিসবাসী।