কানাডায় ইমিগ্রেশন, জেনে নিন বিস্তারিত
আপনি কি কানাডার ইমিগ্র্যান্ট হওয়ার কথা ভাবছেন? ভাবছেন কীভাবে এই জটিল কাজটা সম্পন্ন করবেন? আপনার এই চিন্তার সুযোগে এক শ্রেণির প্রতারক, অসাধু ইমিগ্রেশন ব্যবসায়ী, যোগ্যতাবিহীন স্বঘোষিত ‘ প্রফেশনাল কনসালট্যান্ট’ এবং দালালরা ইমিগ্রেশন প্রত্যাশী মানুষদের কাছ থেকে সেমিনার, ওয়ার্কশপ, ইমিগ্রেশন করিয়ে দেওয়া, সার্ভিস চার্জের নামে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
এ রকম অবস্থায় কীভাবে কানাডা নামক স্বপ্নের দেশটিতে স্থায়ীভাবে যাওয়া যেতে পারে? এই প্রশ্নের উত্তর খুজঁতে আন্তর্জাতিক অভিবাসন আইন বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শেখ সালাহউদ্দিন আহমেদ এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘কানাডার স্কিল্ড মাইগ্রেশনের জন্য সবচেয়ে অত্যাবশকীয় প্রশ্নগুলো হচ্ছে:-
১. আবেদনের জন্য কি কি যোগ্যতা প্রয়োজন?
২. আপনার সেই যোগ্যতাসমূহ আছে কি না?
৩. যদি না থেকে থাকে তবে সেই আংশিক ঘাটতিগুলো কি কি এবং উত্তরনের উপায় কি ?
কানাডা একটি দ্বিভাষিক (bilingual) দেশ। ইংরেজি ও ফ্রেঞ্চ এ দেশের অফিশিয়াল ভাষা। বিশ্বের সবচেয়ে ধনীদেশগুলোর অন্যতম এই দেশটিতে রয়েছে কাজ করার প্রচুর সুযোগ ও বসবাস করার চমৎকার পরিবেশ। কানাডার নাগরিক হিসাবে আপনি পৃথিবীর অন্যান্য দেশের নাগরিকত্বও একইসাথে গ্রহন করতে পারেন। আয়করের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র কানাডায় উপার্জিত অর্থের উপর আয়কর দিতে হয়।কানাডায় পড়াশুনার ক্ষেত্রে ফেডারেল ও প্রভিন্সনাল সরকারের সরাসরি আর্থিক সহায়তা পাওয়া যায়। পাবলিক স্কুলে ১৮ বছর পর্যন্ত পড়াশোনা ফ্রি। নতুন অভিবাসী হিসাবে আপনার ভাষাগত দুর্বলতা থাকলে সরকারই আপনার জন্য ভাষা শিক্ষার ব্যবস্থা করে দিবে। যারা নতুন ব্যবসা করতে চাইবে তাদের জন্য রয়েছে অন্তত ২ লাখ ৫০ হাজার কানাডিয়ান ডলার লোনের ব্যবস্থা। নতুন অভিবাসী হিসাবে চাকুরী পেতে অসুবিধা হলে বা অসুস্থ্যতাতার কারনে কাজ করতে না পারলে সরকার কর্তৃক প্রদত্ত নানা রকম আর্থিক সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায়।সাধারনত সরকার চিকিৎসার ক্ষেত্রে যে আর্থিক সুবিধা দেয় তা দিয়ে প্রায় ৯৮% চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহ করা যায়। অভিবাসনের প্রোগ্রামগুলোকে মোটা দাগে নিম্নের কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করা যায়।’
১. ইকোনমিক ইমিগ্র্যান্টস
মোট সাতটি সাব-ক্যাটাগরি রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো স্কিল্ড ওয়ার্কার, ফেডারেল স্কিল্ড ট্রেড, প্রভিন্সনাল নমিনি ক্লাস এবং কানাডিয়ান এক্সপেরিন্স ক্লাস। এক্সপ্রেস এন্ট্রি এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রোগ্রাম। ২০১৯ সালের জানুয়ারী মাসের ৩০ তারিখে সর্বশেষ ড্রতে ৩ হাজার ৩৫০ জন আইটিএ পেয়েছেন। সর্বনিম্ন সিআরএস স্কোর ছিল মাত্র ৪৩৮। ২০১৮ সাল পর্যন্ত সর্বমোট ২১ হাজার জন আইটিএ পেয়েছেন। এক্সপ্রেস এন্ট্রির মাধ্যমে প্রতি পনেরো দিনে ৩৫০০-৪০০০ স্কীলড ইমিগ্র্যান্ট হিসাবে আসার আমন্ত্রণ পাচ্ছে। আইটিএ হচ্ছে ইনভাইটেশন টু অ্যাপ্লাই, অর্থাৎ এক্সপ্রেস এন্ট্রি পুল থেকে পিআর হিসেবে আবেদনের সুযোগ। কমপক্ষে গ্র্যাজুয়েট, ২ বছরের উপরের চাকুরীর অভিজ্ঞতা, আই.ই.এল.টি.এস এ কমপক্ষে ৬.৫ থাকলে আবেদন করা যায়। তবে কানাডা সরকার অগ্রাধিকার ভিক্তিতে ১০ টি পেশাজীবীদের বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকে । পেশাগুলো হলো সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভ, অ্যাকাউন্ট্যান্ট, ইঞ্জিনিয়ারিং, প্রজেক্ট ম্যানেজার, বিজনেস অ্যানালিস্ট, কাস্টমার সার্ভিস রিপ্রেজেন্টেটিভ, আইটি প্রজেক্ট ম্যানেজার, সিনিয়র অ্যাকাউন্ট ম্যানেজার, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার ও ম্যানুফ্যাকচারিং। এ ছাড়া অন্যান্য দক্ষ পেশাজীবীরাও আবেদন করতে পারবেন। নিশ্চিত জব অফার হলে ফাইলটি কনফার্ম করা সম্ভব।
আটলান্টিক ইমিগ্রেশন পাইলট প্রোগ্রামের মতো নর্দার্ন ওন্টারিওতে খুব শিগগিরই একটি পাইলট প্রোগ্রাম চালু হচ্ছে। একমাত্র সাস্কাচেওয়ান ছাড়া সব প্রভিন্সেই শুধুমাত্র এক্সপ্রেস এন্ট্রিতে আবেদনকারী বা যাদের কানাডার ভ্যালিড জব অফার আছে বা যারা কানাডাতে টেম্পোরারি ফরেন ওয়ার্কার কিংবা ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট হিসেবে কাজ করছেন তাদেরই নমিনেশন দিচ্ছে। ওন্টারিও, নিউব্রান্সউইক, কুইবেক, প্রিন্স অ্যাডওয়ার্ড আইল্যান্ডসহ অন্যান্য সব প্রভিন্সেই ফ্রেঞ্চ জানা লোকজন বা যাদের কানাডীয় প্রফেশনাল লাইসেন্স আছে বা যাদের আপন ভাইবোন কানাডাতে আছে তাদেরই নমিনেশন দিচ্ছে।
২. ফ্যামিলি ক্লাস:
নিকট আত্বীয়র মধ্যে কেউ যদি কানাডার স্থায়ী নাগরিক থেকে থাকে তবে তিনি তার পরিবারের অন্য সদস্যদের স্পন্সর করে নিতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে প্রক্রিয়াটি দীর্ঘমেয়াদী ও জটিল। এই প্রক্রিয়ায় ২০১৯ সালে ২০ হাজার পিতামাতা বা তার আগের প্রজন্ম আসতে পারবেন। এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল ২০১৭ সালে লটারী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মাত্র ৫০০০ কোটা দিয়ে।
৩. স্টুডেন্ট ভিসা:
কানাডা ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টদের ভিসা অনেক সহজ করে দিয়েছে। তারা যাতে পড়াশোনা শেষ করে খুব দ্রুত চাকরি পায় এবং পিআর হতে পারে সে জন্য সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। কানাডা ২০১৯ সালে কমপক্ষে ৫ হাজার ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট ভিসা ইস্যু করবে, এ কথা আইআরসিসি থেকে জানানো হয়েছে। এই বিষয়ে প্রথমে আপনাকে বিশ্ববিদ্যালয় সিলেক্ট করতে হবে এবং অফার লেটার গ্রহন করতে হবে। এরপর আবেদন করতে হবে স্টাডি পারমিটের জন্য। কানাডায় স্টুডেন্ট ভিসা নামক কোন ভিসা হয় না। আবেদন করতে হয় ইটিএ নামক ভিসার জন্য। তবে ৬ মাসের কম সময়ের মেয়াদের কোন প্রোগ্রামের জন্য কোন স্টাডি পারমিট নিতে হয় না। এই ধরনের ভিসার জন্য আর্থিক সামর্থ্যর সাথে ভালো আই.ই.এল.টি.এস স্কোরও থাকতে হয়।
৫. টুরিস্ট ভিসা:
প্রতি বছর প্রায় ৩৫ মিলিয়ন লোক কানাডায় ভিজিট করতে যায়।২ ধরনের টুরিস্ট ভিসা হয়। সিঙ্গেল এন্ট্রি এবং মাল্টিপোল এন্ট্রি। সর্বোচ্চ ১০ বছরের মাল্টিপোল ভিসা দিয়ে থাকে। তবে একসাথে থাকা যায় ৬ মাস পর্যন্ত। সাধারনত ৩ সপ্তাহের মত সময় লাগে ভিসা ইস্যু করতে। অন লাইন ও অন পেপার এই দুই মাধ্যমে আবেদন করা যায়। আবেদন করতে মুলত যে সকল কাগজপত্র প্রয়োজন হয়:
২ কপি সদ্য তোলা রঙ্গিন ছবি (পাসপোর্ট সাইজ, সাদা ব্যাকগ্রাউন্ড, ম্যাট পেপার ল্যাব প্রিন্ট) ।
- ৬ মাস মেয়াদের পাসপোর্ট।
- পাসপোর্টের ১ ও ২ নং পাতার ফটোকপি (পুরানো পাসপোর্ট থাকলে অবশ্যই তা সাথে নিতে হবে) ।
- জাতীয় পরিচয় পত্র- এর ফটোকপি (বাচ্চাদের ক্ষেত্রে জন্ম নিবন্ধন সনদ-এর ফটোকপি।
- ইংরেজী অক্ষরে ছাপা দুই কপি ভিজিটিং কার্ড ( ব্যবসায়ী ও চাকুরিজীবি উভয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য )।
- ৬ মাস ব্যাংক স্টেটমেন্ট ও ব্যাংক সলভেন্সি সার্টিফিকেট (ব্যাংকের সীল ও স্বাক্ষর সহ অরিজিনাল কপি ও ১ সেট ফটোকপি) ।
- ট্রেড লাইসেন্স –এর ফটোকপি সহ ইংরেজি অনুবাদ ও নোটারাইজড এর অরিজিনাল কপি (ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য) ।
- কোম্পানির দুই কপি ইংরেজি অনুবাদ ও নোটারাইজড এর অরিজিনাল কপি ( ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য) ।
- সদ্য বিবাহিত ক্ষেত্রে নিকাহ নামা এর ফটোকপি সহ ইংরেজী অবুবাদ ও নোটারাইজড এর অরিজিনাল কপি।
- N.O.C –নো অবজেকশন সার্টিফিকেট এর অরিজিনাল কপি ও ১ সেট ফটোকপি (বেসরকারি চাকুরিজীবীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য) ।
- অবসরের কাগজ এর ফটোকপি ইংরেজী অনুবাদ ও নোটারাইজড এর অরিজিনাল কপি (অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ।
- স্টুডেন্ট আইডি কার্ড অথবা সর্বশেষ বেতন রশিদের ফটোকপি (ছাত্র/ ছাত্রীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য) ।
বাংলাদেশের যে কয়েকজন অভিবাসন আইনজীবী অত্যন্ত সুনাম ও দক্ষতার সাথে কাজ করছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম আন্তর্জাতিক অভিবাসন আইন বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট শেখ সালাহউদ্দিন আহমেদ। নিজের যোগ্যতা যাচাই করার জন্য অ্যাডভোকেট শেখ সালাহউদ্দিন আহমেদের সাথে দেখা করতে তার খান টাওয়ার, ৫১ সোনারগাঁ জনপথ, সেক্টর ৭, উত্তরা, ঢাকায় অবস্থিত তার অফিস ভিজিট করতে পারেন অথবা তথ্যর জন্য ভিজিট করতে পারেন Worldwide Migration Consultants Ltd এর www.wwbmc.com ওয়েবসাইটটিতে অথবা কানাডিয়ান ইমিগ্রেশন বিষয়ে আপনার যেকোনো জিজ্ঞাসার উত্তর পেতে ইমেইল করুন: [email protected] ই-মেইল করে নিজের প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করলে ফ্রি অ্যাসেসমেন্ট রেজাল্টও পেতে পারেন অতি সহজে। ফোনে প্রাথমিক তথ্যের জন্য কথা বলতে পারেন: ০১৯০৪০৩৬৮৯৮, ০১৯৮৭৭১৪২৯০, ০১৯০৪০৩৬৮৯৯, ০১৯০৯-০৮৩৯৬৩, ০১৯০৯-০৮৩৯৬২, ০১৭৮৫৭০০৭৫৮ নম্বরে।