আইএস, আইসিস, দায়েশ, আইসিল—তফাৎ কী?
খিলাফত দাবি করে তারা নিজেদের পরিচয় দেয় ‘ইসলামিক স্টেট’ (আইএস)। অথচ যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য তাদের দাবি করে ‘ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড লেভান্ট’ (আইএসআইএল বা আইসিল)।
আবার মাঝেমধ্যে তাদের বলা হয় ‘ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া’ (আইএসআইএস বা আইসিস)। এর মধ্যে যুক্তরাজ্য তাদের দাওলাত আল-ইসলামিয়াহ ফাআল-ইরাক ওয়া আল-শাম (দায়েশ) বলে ডাকার উদ্যোগ নিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক এক জঙ্গিগোষ্ঠীকে এত নামে ডাকা হয় কেন?
টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাজ্য যখন সিরিয়ায় হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তখনো জঙ্গিগোষ্ঠীকে কী নামে ডাকা হবে, তা নিয়ে বিতর্ক ছিল। দেশটির প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ঘোষণা করা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ও অন্যান্য মন্ত্রী এখন থেকে মধ্যপ্রাচ্যের জঙ্গিগোষ্ঠীকে ‘দায়েশ’ নামে সম্বোধন করবেন।
মধ্যপ্রাচ্যের জঙ্গিগোষ্ঠী কিন্তু নিজেদের ইসলামিক স্টেট (আইএস) বলেই পরিচয় দেয় এবং খিলাফত প্রতিষ্ঠার দাবি জানায়। তবে চলতি বছরের জুনে ক্যামেরন প্রশাসন যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে নির্দেশ দেয়, ওই জঙ্গিগোষ্ঠীকে যেন আইএস নামে পরিচিত করা না হয়।
যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র উভয় দেশের সরকারই মধ্যপ্রাচ্যের জঙ্গিগোষ্ঠীকে আইএসআইএল বলে সম্বোধন করে। অথচ সংবাদমাধ্যম ‘দি ইনডিপেনডেন্ট’ মধ্যপ্রাচ্যের জঙ্গিগোষ্ঠীকে বলে ‘আইএসআইএস’। গত বছর ফরাসি সরকার মধ্যপ্রাচ্যের জঙ্গিগোষ্ঠীকে ‘দায়েশ’ নামে ডাকার সিদ্ধান্ত নেয়।
মধ্যপ্রাচ্যের জঙ্গিগোষ্ঠীর নামের কারণ খুঁজতে গেলে কিছুটা ইতিহাস ঘাঁটা প্রয়োজন। এটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯৯ সালে। জর্ডানের সন্ত্রাসবাদী নেতা আবু মুসাব আল-জারকাবি প্রতিষ্ঠিত এই সংগঠনকে প্রথমে ডাকা হতো জামায়াত আল-তাওহিদ ওয়াল-জিহাদ। ২০০৪ সালে ওসামা বিন লাদেনের সঙ্গে যুক্তের পর এর নতুন নাম হয় আল কায়েদা ইন ইরাক (একিউআই)। এভাবেই বিভিন্ন নামে চলছিল সংগঠনটির কার্যক্রম। তবে পরিবর্তন আসে ২০১৩ সালে, যখন এর বর্তমান নেতা আবু বকর আল-বাগদাদি এর নাম ঘোষণা করে ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক (আইএসআই)। পরে যুক্ত হয় ‘আল-শাম’, এতে গোষ্ঠীটির নাম হয় ‘আইএসআইএস’।
মধ্যপ্রাচ্যের জঙ্গিগোষ্ঠীর প্রতিটি নাম কীভাবে এসেছে, তা তুলে ধরা হলো :
ইসলামিক স্টেট (আইএস)
২০১৪ সালের জুনে জঙ্গি সংগঠনটি ঘোষণা দিয়ে তাদের নামের শেষের দুটি বর্ণ ফেলে দেয়। খিলাফত ঘোষণা করে নিজেদের নাম ইসলামিক স্টেট (আইএস) দাবি করে তারা।
ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া (আইএসআইএস)
দলটির প্রথম যে নাম ছিল, তা আরবিতে হলো আল-দাওলা আল-ইসলামিয়া ফি আল-ইরাক ওয়া আল-শাম। এর প্রথম তিনটি শব্দ অনুবাদ করে হয় ‘ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক’ আর ‘আল-শাম’ দ্বারা বোঝায় সিরিয়া ও এর আশপাশের বিস্তীর্ণ এলাকা। এভাবেই নাম হয় আইএসআইএস। তবে এই নামে এর আগেই অনেক প্রতিষ্ঠান ছিল। তাদের জন্য বিষয়টি স্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এমনকি মিসরীয় এক দেবতার নামও আছে ‘আইসিস’।
ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড লেভান্ট (আইএসআইএল)
সিরিয়ার আশপাশের কিছু অনির্ধারিত অঞ্চল ঐতিহাসিকভাবেই লেভান্ট নামে পরিচিত (ফরাসি এই শব্দের অর্থ হয় ‘উদীয়মান সূর্যের ভূমি’)। এই এলাকার মধ্যে ধরা হয় সিরিয়া, লেবানন, ইসরায়েল, ফিলিস্তিন ও জর্ডান। যুক্তরাষ্ট্রের ওবামা প্রশাসন মধ্যপ্রাচ্যের জঙ্গিগোষ্ঠীকে এই নামে সম্বোধন করেন।
দায়েশ
‘দাওলাত আল-ইসলামিয়াহ ফাআল-ইরাক ওয়া আল-শাম’-এর সংক্ষিপ্ত রূপ ‘দায়েশ’। মধ্যপ্রাচ্যের অনেক মিডিয়া জঙ্গিগোষ্ঠীটিকে এই নামে ডেকে থাকে। এটি ইংরেজি আইএসআইএস বা আইএসআইএলের আরবি রূপ।