তুরস্কে আট হাজার পুলিশ সদস্য বরখাস্ত
তুরস্কে ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানের পর ষড়যন্ত্রের অভিযোগ উঠেছে দেশটির পুলিশ বিভাগের বিরুদ্ধেও। এই অভিযোগে দেশটির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাসহ সাত হাজার ৮৫০ পুলিশকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া দেশটির বিচার বিভাগের সদস্য ও সেনাবাহিনীর জেনারেলসহ আরো অন্তত ছয় হাজার জনকে আটক করা হয়েছে।
তুরস্কের একাধিক গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে সোমবার দুপুরে বিবিসি খবরটি জানায়। এক উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তার বরাতে সংবাদমাধ্যমটি আরো জানায়, গতকাল রোববার রাতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করা হয়েছে।
তুরস্কের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম আনাতোলিয়ার খবরে বলা হয়, দেশটির পুলিশপ্রধান মাহমুদ চেলালেথিন লেকেসিজ বরখাস্ত করা পুলিশ কর্মকর্তা এবং সদস্যদের একটি তালিকা এরই মধ্যে বিভিন্ন প্রদেশের প্রশাসনিক প্রধানদের কাছে পাঠিয়েছেন।
গতকাল রোববার রাতেই অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের প্রাদেশিক পুলিশ সদর দপ্তরে ডাকা হয় এবং তাঁদের অস্ত্র এবং পরিচয়পত্র জব্দ করা হয়। এই পুলিশদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেনা অভ্যুত্থানের চেষ্টাকালে ওই পুলিশ সদস্যরা দেরি করে মাঠে নামেন। কাজে গাফিলতির জন্য পুলিশ সদস্যদের গুলেনের অনুসারী হিসেবে গতকালই অভিযুক্ত করেছিলেন দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান।
তুরস্কের পুলিশ প্রশাসনে বড় ধরনের বহিষ্কারাদেশ এবারই প্রথম নয়। গত দুই বছরে তুরস্কের পুলিশ সদস্যদের ওপর এই ধরনের আরো বহিষ্কারাদেশের ঘটনা ঘটেছে। তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকারী দেশটির ধর্মীয় নেতা ফেতুল্লাহ গুলেনের অনুসারী ছিলেন বলে অভিযোগ।
এদিকে আনাতোলিয়ার খবরে আরো বলা হয়েছে, দেশজুড়ে অভিযান চালিয়ে যৌথ বাহিনী শতাধিক জেনারেল ও অ্যাডমিরালকে আটক করা হয়েছে।
এদিকে, অভ্যুত্থানের পর হেলিকপ্টারে করে গ্রিসে পালিয়ে যাওয়া আট তুর্কি সেনা কর্মকর্তাকে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে আজ সোমবার গ্রিসের একটি আদালতে তোলা হয়েছে। এর আগে গত রোববার তুরস্কের প্রেসিডেন্ট অভ্যুত্থানে জড়িতদের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের বিধান পাসেরও ইঙ্গিত দিয়েছেন।
এদিকে যাদের কারণে অভ্যুত্থান হয়েছে, তাদের ‘ভাইরাস’ হিসেবে উল্লেখ করে মুছে ফেলার অঙ্গীকার করেছেন প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতিবিষয়ক প্রধান তুরস্কে আইনের শাসনের সুরক্ষা দরকার বলে মন্তব্য করেছেন।
ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) যোগ দেওয়ার পর ২০০৪ সালে তুরস্কে মৃত্যুদণ্ড বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। এ ছাড়া ১৯৮৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত দেশটিতে কাউকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়নি। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতিবিষয়ক প্রধান ফেডেরিকা মোঘারিনি ব্রাসেলসে বলেছেন, আইনের শাসন থেকে তুরস্ককে পেছনে নিয়ে যাবে এমন পদক্ষেপ ঠেকাতে কোনো অজুহাতের তোয়াক্কা করা হবে না।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার রাতে তুরস্কের ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করে দেশটির সেনাবাহিনীর একটি অংশ। সেনাবাহিনীর ওই দলটি অভ্যুত্থান ঘটিয়ে দেশের ক্ষমতা দখলের দাবিও করেছিল। এ ঘটনার পর সারা দেশে কারফিউ ঘোষণা করা হয়।
কিন্তু দেশটির জনগণ গণতন্ত্রের পক্ষে অবস্থান নিয়ে সেনাসদস্যদের অভ্যুত্থানকে ব্যর্থ করে দেয়। এরদোগান গোপন স্থান থেকে অ্যাপের সাহায্যে দেওয়া বার্তায় সরকারের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। এরপর দেশটির জনগণ সেনাসদস্যদের পিটিয়ে পুলিশে তুলে দেয়। সেনাদের ট্যাংক দখলে নিয়ে তার মাথায় দেশের পতাকা লাগিয়ে উল্লাস করে জনতা।
তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলদিরিমের দেওয়া তথ্যমতে, ব্যর্থ অভ্যুত্থান চেষ্টায় নিহত হয়েছেন ২৬৫ জন। এর মধ্যে অভ্যুত্থানপন্থী বিদ্রোহী রয়েছেন ১০৪ জন। আর অভ্যুত্থান প্রতিরোধ করতে গিয়ে সামরিক-বেসামরিক লোক নিহত হয়েছেন ১৬১ জন।