তীব্র গরমে পাঁচদিনে ৫০০ প্রাণহানি
ভারতজুড়ে ভয়াবহ দাবদাহ অব্যাহত রয়েছে। টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়, শুধু গতকাল রোববারই অন্ধ্রপ্রদেশ ও তেলেঙ্গানা রাজ্যে তীব্র গরমে মারা গেছেন ১৬৫ জন। এ নিয়ে গত কয়েক দিনে ওই দুটি রাজ্যে প্রাণহানির সংখ্যা ৫০০-তে পৌঁছাল। গত পাঁচদিনে ওই দুই রাজ্যের তাপমাত্রা গড়ে ৪৭ থেকে ৪৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশপাশে। ভারতের অন্যান্য অংশেও রেকর্ড তাপমাত্রা বিরাজ করছে।
urgentPhoto
ভারতের আবহাওয়া সংস্থা জানায়, অন্ধ্রপ্রদেশ ও তেলেঙ্গানা রাজ্যে আরো তিনদিন তীব্র দাবদাহ চলতে পারে। তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পার হওয়ার পরপরই আবহাওয়া অধিদপ্তর তাপপ্রবাহ ‘গুরুতর’ বলে সতর্কবার্তা প্রচার করেছিল। ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, ‘এটাই শেষ নয়, সর্বোচ্চ তাপমাত্রার দিক থেকে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যেতে পারে এবারের গ্রীষ্মকাল।’ সর্বশেষ ২০০২ সালের মে মাসে তেলেঙ্গানা ও অন্ধ্রপ্রদেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছিল ৪৮.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
অন্ধ্রপ্রদেশের সরকার প্রথমবারের মদো দাবদাহে প্রাণহানির কথা স্বীকার করেছে। রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী কামিনেনি শ্রীনিবাস বলেন, রোববার হিটস্ট্রোকে ৬২ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে বেসরকারি একটি সূত্র জানায়, অন্ধ্রপ্রদেশে ৯৩ ও তেলেঙ্গানা রাজ্যে ৭২ জনের প্রাণহানি হয়েছে। অন্ধ্রপ্রদেশের মছলিপত্তনম ও টুনিতে সর্বোচ্চ ৪৭ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড় করা হয়েছে।
উত্তর প্রদেশের বিভিন্ন নগরীতে গত পাঁচ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ গরম ছিল রোববার। উড়িষ্যায় নয় নগরীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রির ওপরে রেকর্ড করা হয়েছে। মধ্যপ্রদেশের সবচেয়ে উঁচু ভূমি পাঁচমারহির তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ১০ ডিগ্রি বেশি হয়ে ৪০ ডিগ্রি হয়েছে।
তেলেঙ্গানার করিমনগরে ১৯, নলগন্ডায় ১০, কাম্মামে ১০, ওয়ারাংগালে আট, মাহবুবনগরে সাত, আদিলাবাদে সাত, মেডাকে ছয়, নিজামাবাদে তিন, হায়দরাবাদে এক ও রাংগারেড্ডিতে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া অন্ধ্রপ্রদেশের নেলোরে ২২, প্রকাসমে ১৯, ভিজিয়ানাগরমে ১১, কৃষ্ণায় ১০, কাদাপায় ছয়, পশ্চিম গোদাবড়িতে ছয় এবং বিশাখাপত্তনম, শিকাকুলাম ও অনন্তপুরে তিনজন করে এবং পূর্ব গোদাবড়ি, চিত্তুর ও কুরনলে দুজন করে এবং গুন্টুরে চারজনের মৃত্যু হয়েছে।
উত্তর প্রদেশে গত পাঁচ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা বিরাজ করছে। রাজ্যের রাজধানী লক্ষ্ণৌতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৭ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। রাজ্যের এলাহাবাদে সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা বিরাজ করছে। এখানে রোববার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪৭ দশমিক ৭। শনিবার ছিল ৪৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বান্দায় ৪৬ দশমিক ৬ ডিগ্রি, সুলতানপুরে ৪৬ এবং বারানসি, আগ্রা ও বেরেলিতে ৪৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। আবহাওয়া দপ্তর সোম ও মঙ্গলবারও দাবদাহ অব্যাহত থাকার সতর্কবাণী করেছে।
মধ্য প্রদেশের আন্তর্জাতিক পর্যটন কেন্দ্র খাজুরাহোতে তাপমাত্রা ৪৭ ডিগ্রি ছুঁয়েছে। গত সপ্তাহে এখানে তাপমাত্রা ছিল ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
তেলেঙ্গানা রাজ্যের হাসপাতালগুলোতে প্রচণ্ড গরমে হিটস্ট্রোকে (প্রচণ্ড গরমে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ) আক্রান্ত রোগীদের ভিড় বেড়েছে এবং অন্ধ্রপ্রদেশে প্রাদেশিক সরকার সবগুলো জেলায় জরুরি অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে তাৎক্ষণিক সেবাদানে চিকিৎসকদল গঠন করেছে।
অন্ধ্র ও তেলেঙ্গানা রাজ্য সরকার হিটস্ট্রোক থেকে বাঁচতে গণসতর্কতা জারি করেছে। কোনো রকম তাপ প্রতিরোধক ব্যবস্থা গ্রহণ ছাড়া দিনের বেলা বাইরে না বের হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন ওই দুটি রাজ্যের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
সরকারের পক্ষ থেকে জনগণকে প্রচুর পানীয় ও তরল খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া তাদের রোদ এড়িয়ে ছায়াযুক্ত স্থানে অবস্থান নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু বলেছেন, ‘যত বেশি সম্ভব পানীয় জল বিতরণ কেন্দ্র চালু করতে প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রচণ্ড গরম থেকে বাঁচতে কী করতে হবে ও কী করতে হবে না – সরকার তা নিয়েও প্রচার চালাবে।’
তিনি আরো জানান, ‘গত তিনদিনে শুধু আমাদের রাজ্যেই গরমে শতাধিক মৃত্যুর খবর পেয়েছি, তবে এই সংখ্যা আরো বাড়বে। নিহতদের জন্য আমরা এক লাখ রুপি করে ক্ষতিপূরণ দিচ্ছি। মৃত্যুর সংখ্যা যত কম করা যায় সেটাই আমাদের লক্ষ্য।’