সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যে উদযাপিত হচ্ছে পবিত্র ঈদুল আজহা
সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে উদযাপিত হচ্ছে মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা। দিনটিতে আনন্দ উদযাপনের পাশাপাশি ধর্মীয় কিছু গুরুত্বপূর্ণ আচার-অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেন মুসলমানরা।
আজ বুধবার (২৮ জুন) সৌদি আরবে ১০ জিলহজ, অর্থাৎ পবিত্র ঈদুল আজহা। ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হয়ে দেশটির নাগরিক এবং এ বছর হজ করতে যাওয়া মুসলনারা মহান আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে পশু কোরবানি করছেন।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার (২৭ জুন) পবিত্র হজ উপলক্ষে সৌদি আরবের মক্কা নগরী থেকে ২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে আরাফাতের ময়দানে সমবেত হয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের লাখ লাখ মানুষ। ৯ জিলহজ (মঙ্গলবার) আরাফাতের দিনে সকাল থেকে কণ্ঠে তাঁদের সমস্বরে উচ্চারিত হয়—‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইক লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হাম্দা, ওয়ান্নি মাতা লাকা ওয়াল্মুল্ক্, লা শারিকা লাকা’। এর বাংলা অর্থ ‘আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির, তোমার কোনো শরিক নেই, সব প্রশংসা ও নিয়ামত শুধু তোমারই, সব সাম্রাজ্যও তোমার’।
এই আরাফাতের ময়দানেই মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) তাঁর বিদায় হজের ভাষণ দিয়েছিলেন। এই দিনে হজযাত্রীরা নামাজ পড়ার জন্য আরাফাত ময়দানে ভিড় করেন। গতকাল আরাফাত ময়দানের নামিরাহ মসজিদ থেকে হজের খুতবা পাঠ করেন ড. ইউসুফ বিন মুহাম্মদ বিন সাঈদ।
খুতবায় বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর উদ্দেশে শায়খ ইউসুফ বিন মুহাম্মদ বলেন, ‘আল্লাহ মহান ও প্রজ্ঞাবান। তিনি অনৈক্য ও ভেদাভেদ হারাম করেছেন। পবিত্র কুরআনে ঐক্য ও সংহতির গুরুত্ব সম্পর্কে বর্ণনা এসেছে। ঐক্যের মধ্যেই দুনিয়া ও আখিরাতের সব বিষয়ের সাফল্য নিহিত। মুসলমানদের পরস্পর মিলেমিশে থাকা জরুরি। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, যে কুরআনের বিষয়ে অনৈক্য করবে, সে হেদায়াত থেকে দূরে সরে গেল। যদি আমাদের মধ্যে মতপার্থক্য সৃষ্টি হয়, তাহলে কুরআন-সুন্নাহর দিকে ফিরে আসতে আমাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কুরআনে কারিমে মুসলমানদের একসাথে মিলেমিশে বসবাস করার হুকুম দেওয়া হয়েছে।’
খুতবায় শায়খ ইউসুফ বিন মুহাম্মদ আরও বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! আপনারা দুনিয়া ও আখিরাতের বিষয়ে আল্লাহর হুকুম মেনে চলুন। আল্লাহ তায়ালা বিভক্তি ও অনৈক্য হারাম করেছেন। সকল নবী আল্লাহর একত্ববাদের দাওয়াত দিয়েছেন। তিনি এক; ইবাদতে তার উপযুক্ত কেউ নেই। আল্লাহ ছাড়া সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাবে।’
এরপর মঙ্গবার সন্ধ্যায় হজযাত্রীরা মুজদালিফায় যাত্রা শুরু করেন। এটি আরাফাত ও মিনার মধ্যে অবস্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। হজযাত্রীরা মুজদালিফায় রাত কাটান এবং ছোট পাথর সংগ্রহ করেন। আজ বুধবার মিনায় জামারাত স্তম্ভে শয়তানকে লক্ষ্য করে এসব পাথর নিক্ষেপ করেন তারা। এরপর হজযাত্রীরা পশু কোরবানি করেন।
এরপর তাওয়াফ আল-ইফাদাহ বা ফরজ তাওয়াফ করার জন্য মসজিদুল হারামে যাবেন হাজিরা। এই তাওয়াফ অবশ্য ১০ থেকে ১২ জিলহজের মধ্যে যেকোনো সময় করতে পারবেন তারা। এ সময় তারা কাবা শরিফ তাওয়াফ ও সাফা-মারওয়া সাঈ করবেন এবং মাথা মুণ্ডন করবেন। একবার এই পবিত্র কাজটি সম্পন্ন করার পর হজযাত্রীদের আর ইহরামের নিয়মের মধ্যে আবদ্ধ থাকতে হবে না। তারা সব হালাল (অনুমতিযোগ্য) কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত হতে পারবেন।
হজের অবশিষ্ট আচারগুলো সম্পন্ন করতে হজযাত্রীদের অবশ্যই আবার মিনায় ফিরে যেতে হবে। তাশরীকের দিনগুলোতে ১১, ১২ ও ১৩ জিলহজ হজযাত্রীদের মিনায় আরও দুটি কাজ করতে হবে। ১১ জিলহজ বিকেলে হজযাত্রীরা ২১টি ছোট পাথর সংগ্রহ করে তিন জামারাতে নিক্ষেপ করবেন। পাথর নিক্ষেপ শুরু হয় জামারাত আল-উলা, তারপর জামারাত আল-উস্তা এবং পরে জামারাত আল-আকাবা দিয়ে শেষ হয়।
মক্কা থেকে যাত্রা করার আগে হজযাত্রীদের তাওয়াফ আল-বিদা করতে হবে, যা বিদায়ী তাওয়াফ নামেও পরিচিত। এটি হজ সম্পন্ন করায় অত্যন্ত তাৎপর্য বহন করে এবং সব হজযাত্রীদের জন্য বাধ্যতামূলক।
কোভিড-১৯ মহামারির কারণে ২০১৯ সালের পর এবারের হজে সবচেয়ে বেশি মানুষ অংশগ্রহণ করছে। ২০১৯ সালে আনুমানিক ২৫ লাখ মানুষ হজে অংশ নিয়েছিলেন। বিশ্বব্যাপী করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে ২০২০ সালে মাত্র ১০ হাজার ব্যক্তিকে হজে অংশ নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। ২০২১ সালে অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছিল প্রায় ৫৯ হাজার। সৌদি কর্তৃপক্ষের পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০২২ সালে মোট আট লাখ ৯৯ হাজার ৩৫৩ জন হজ করতে পেরেছিলেন। সৌদির কর্মকর্তারা জানান, এ বছর ১৮ লাখ হজযাত্রী সমবেত হয়েছেন।