গাজায় নিহতদের ৭০ শতাংশই নারী ও শিশু : জাতিসংঘ
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনের প্রধান ফলকার টুর্ক গাজায় বিপুল বেসামরিক মানুষ নিহতের জন্য ইসরায়েলের নিন্দা করেছেন। জাতিসংঘের এই সংস্থার নতুন প্রতিবেদন অনুযায়ী, গাজায় নিহতের প্রায় ৭০ শতাংশই নারী ও শিশু।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় (ওএইচসিএইচআর) শুক্রবার (৮ নভেম্বর) এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। গাজায় ইসরায়েলের হামলা শুরুর প্রথম ছয় মাসে নিহত ৩৪ হাজার ৫০০ জনেরও বেশি লোকের মধ্যে আট হাজার ১১৯ জনকে করেছে সংস্থাটি। দেখা গেছে, নিহতদের মধ্যে বড় অনুপাত ছিল নারী ও শিশু, সবচেয়ে ছোটজনের বয়স মাত্র একদিন।
টুর্ক সশস্ত্র সংঘাতের সময় মানুষের দুর্ভোগ সীমিত ও প্রতিরোধ করার জন্য পরিকল্পিত ‘যুদ্ধের নিয়ম’ লঙ্ঘন এবং ইসরায়েলের উদাসীনতার নিন্দা করেছেন। তিনি ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা মেনে চলার আহ্বান জানান।
ওএইচসিএইচআরের প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলা হয়, বেসামরিক নাগরিকদের ওপর ‘বিস্তৃত বা পদ্ধতিগত’ এই আক্রমণ ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এতে বলা হয়, যদি সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে একটি জাতি, সম্প্রদায় বা ধর্মীয় গোষ্ঠীকে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে আক্রমণ চালানো হয়, তবে তাতে গণহত্যার অভিযোগও গঠন করা যেতে পারে।
ভুক্তভোগীদের লিঙ্গ ও বয়স সম্পর্কে জাতিসংঘ তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ফিলিস্তিনিদের দাবিকে অনুযায়ী, যুদ্ধে নিহতদের একটি বড় অংশ নারী ও শিশু। সামগ্রিকভাবে ৪৪ শতাংশ ছিল শিশু, যাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পাঁচ থেকে ৯ বছর বয়সী। তারপরে রয়েছে ১০-১৪ বছর বয়সী। সবচেয়ে কনিষ্ঠ নিহতের বয়স একদিন এবং সবচেয়ে বয়স্ক নিহত নারীর বয়স ৯৭ বছর।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, 88 শতাংশ ক্ষেত্রে একই হামলায় পাঁচ বা তার বেশি লোক নিহত হয়েছে। এতি ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর অস্ত্র ব্যবহারের দিকে ইঙ্গিত করে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর ভুলভাবে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপেও কিছু মৃত্যু হতে পারে।
ওএইচসিএইচআর ইসরায়েল সরকারের ক্রমাগত বেআইনি কর্মকাণ্ডের দিকেও ইঙ্গিত করেছে। এতে বলা হয়, ইসরায়েল মানবিক সাহায্য পৌঁছাতে দিতে ব্যর্থ, বেসামরিক অবকাঠামো ধ্বংস করেছে এবং বারবার বহু লোককে বাস্তুচ্যুত করেছে। ইসরায়েলি বাহিনীর এই কর্মকাণ্ডে নজিরবিহীনভাবে মানুষ নিহত ও আহত হয়েছে এবং অনাহার, অসুস্থতা ও রোগব্যাধিতে ভুগেছে।
শুক্রবারের এই প্রতিবেদনের জেনেভায় ইসরায়েলের কূটনৈতিক মিশন বলেছে, তারা এটিকে ‘স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করে’ এবং জাতিসংঘ ‘যাচাই-বাছাইহীন তথ্যের’ ওপর নির্ভর করেছে বলে অভিযোগ তোলে।
গাজা ছিটমহলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ইসরায়েলের হামলায় কমপক্ষে ৪৩ হাজার ৪৬৯ ফিলিস্তিনি নিহত এবং এক লাখ দুই হাজার ৫৬১ জন আহত হয়েছে।