আদালতের সাথে প্রতারণা : কোম্পানিকে কোটি টাকা জরিমানা
বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো-সিআইবির রিপোর্টে খেলাপি উল্লেখ করার পর সেটি স্থগিত রাখতে পাঁচ বছর ধরে উচ্চ আদালতের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগে একটি কোম্পানিকে কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। কোম্পানিটির নাম এফএমসিওটুকে। আদেশের সময় আদালত বলেন, আদালতের সঙ্গে প্রতারণা করার আগে কম করে হলেও তিনবার চিন্তা করবেন।
আদালতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল ছাড়াও ব্যারিস্টার খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ বক্তব্য রাখেন। আর কোম্পানিটির পক্ষে ছিলেন অজি উল্লাহ।
আদালতের এ আদেশকে মাইলফলক হিসেবে দেখছেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। তিনি বলেন, এর ফলে আজ মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীসহ তিন বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।
মামলার বিবরণে জানা যায়, এফএমসিওটুকে ২০১৭ সালের ১০ ডিসেম্বর ঋণখেলাপি হিসেবে উল্লেখ করা হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবি রিপোর্টে। তখন তারা হাইকোর্টে মামলা করেন। ডিসেম্বর মাস থাকায় সে সময় বিচারিক আদালত বন্ধ ছিল। সিআইবির তালিকা চ্যালেঞ্জ করে বিচারিক আদালতে মামলা করবে জানিয়ে আদালত বন্ধ থাকাকালীন নিষেধাজ্ঞা চায় কোম্পানিটি। তখন হাইকোর্ট নিষেধাজ্ঞা জারি করে তাদের মামলা করতে বলেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ২০১৭ থেকে ২০২১ পর্যন্ত তারা কোনো মামলা না করে বারবার নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়িয়ে নেয়। এরপর ২০২২ সালের শুরু হলে আবারও তারা মেয়াদ বাড়াতে আবেদন করে। তখন বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি শাহেদ নুরউদ্দিনের হাইকোর্ট বেঞ্চ বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। আদালতের এ প্রশ্নের কোনো জবাব দিতে না পারায় এবং কোর্টের সঙ্গে চালাকি করার কারণে তাদের আবেদন খারিজ করে দিয়ে এক কোটি টাকা জরিমানা করেন হাইকোর্ট। এরপর হাইকোর্টের জরিমানার আদেশের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানটি আপিল করে। সেখানেও তারা সেটি শুনানি না করে আবেদনটি ফেরত নিতে চায়।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এরই মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে আমাদের তথ্য জানানো হয়। তখন আমরা আদালতকে বললাম, আপনারা যদি এটা ডিসমিস করে দেন, তাহলে তারা আর জরিমানার টাকাটা দেবে না। পরে আদালত প্রতিষ্ঠানটিকে টাকা জমা দিয়ে তারপর মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করতে বলেন। পরে আজকে তারা টাকা জমা দিলে আদালত তাদের আবেদনটি নিষ্পত্তি করে দেন।
এ আদেশকে যুগান্তকারী আদেশ উল্লেখ করে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো কোর্টের সঙ্গে প্রতারণা করে আদেশ নেওয়ায় তাদেরকে এক কোটি টাকা জরিমানা করা হলো। এ আদেশ বিচার ব্যবস্থায় নতুন একটা মাইলফলক। এভাবে কেউ প্রতারণার আশ্রয় নিতে গেলে কম করে হলেও তিনবার চিন্তা করবে।