আ. লীগের ভুঁইফোঁড় সহযোগী সংগঠনের চেয়ারম্যান পরিচয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ
সাতক্ষীরায় ‘আওয়ামী স্বাধীনতা প্রজন্ম লীগ’ নামের একটি ভুঁইফোঁড় সংগঠনের সন্ধান মিলেছে। জানা গেছে, দেশের ৬০টি জেলায় এই সংগঠনটির সাংগঠনিক কমিটি রয়েছে। এদের সদস্য সংখ্যাও ৫৫ থেকে ৬০ হাজার।
আলোচিত এই সংগঠনের চেয়ারম্যান সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার সোয়ালিয়া গ্রামের মো. আনিসুর রহমান। তিনি একইসঙ্গে গণটেলিভিশন, দৈনিক সময়, বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় প্রেসক্লাব, গণফাউন্ডেশন এবং মানবিক সাতক্ষীরারও চেয়ারম্যান। তিনি ‘কিংবদন্তী মুজিব’ বইয়েরও লেখক। অভিযোগ রয়েছে, তিনি এসব সংগঠনের নাম ব্যবহার করে এবং কমিটি তৈরির নামে চাঁদাবাজি করে আসছেন।
তবে সংগঠনটির চেয়ারম্যান মো. আনিসুর রহমান অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি এখনও একটি মাটির ঘরে বসবাস করি। আমি চাঁদা চাইবার মতো যোগ্যতাও রাখি না। চাঁদাবাজির অভিযোগ সম্পূর্ণ বানোয়াট। এ ছাড়া আমি আওয়ামী স্বাধীনতা প্রজন্ম লীগ ও গণটেলিভিশন ছাড়া অন্যকিছুর সঙ্গে সম্পৃক্ত নই।’
আনিসুর রহমান বলেন, ‘আওয়ামী স্বাধীনতা প্রজন্ম লীগ’ নামের এই সংগঠনের বয়স প্রায় ১০ বছর। বর্তমানে এর সাধারণ সম্পাদক মুন্সীগঞ্জ জেলার মাহদী হাসান মল্লিক। সাতক্ষীরা জেলায় এই সংগঠনের কমিটি রয়েছে। এর সভাপতি মো. রাজু ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক আশেকুর রহমান।’
মো. আনিসুর রহমান আরও জানান, তিনি তার সংগঠনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ ও প্রচার করে থাকেন। সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রমের সঙ্গে নিজেদের একাত্ম করে সংগঠনটি পরিচালিত হয়ে আসছে। তিনি বলেন, ‘আমার সংগঠনটি অনুমোদনের জন্য চেষ্টা করছি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অনুমোদন না দিলে প্রয়োজনে সংগঠনটির কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হবে।’
আনিসুর রহমান জানান, সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদককে তিনি চেনেন মাত্র। তবে তার সঙ্গে তেমন পরিচয় নেই।
জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রজন্ম লীগ নাম ব্যবহার করে তিন-চারটি সংগঠনের কথা শুনেছি। তবে ‘আওয়ামী স্বাধীনতা প্রজন্ম লীগ’ নামে কোনো সংগঠন বা তার প্রধানের সঙ্গে আমার পরিচয় নেই।’
আনিসুর রহমান জানান, তিনি ২০১৯ সালে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করে এখন এলএলবি শেষ করেছেন। বার কাউন্সিলে আবেদন করেছেন আইনজীবী সনদ পাওয়ার জন্য। তিনি বলেন, ‘আমি অনলাইন গণটেলিভিশনের পরিচালক। আমরা তিন-চারজন মিলে এই টেলিভিশন পরিচালনা করে থাকি। আমরা সরকারের সব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে সমুন্নত রেখে বাংলাদেশকে গণতন্ত্রের দিকে এগিয়ে নেওয়াই আমাদের লক্ষ্য। যৌতুক, সন্ত্রাস, ইভটিজিংসহ বিভিন্ন সামাজিক অপরাধের বিরুদ্ধেও আমার গণটেলিভিশন প্রচার চালিয়ে আসছে। আমরা মুক্তিযুদ্ধ ও সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরার কাজেই নিয়োজিত। তবে এসবের সঙ্গে চাঁদাবাজির কোনো সম্পর্ক নেই। অনেকেই এ নিয়ে প্রশ্ন তুললেও আমি বলতে পারি আমরা কোথাও চাঁদাবাজি করিনি। বরং সাম্প্রতিক সময়ের ঘূর্ণিঝড় বুলবুল, আম্পান ও ইয়াশের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছি।’
জানতে চাইলে শ্যামনগর-কালিগঞ্জ আসনের সংসদ সদস্য ও শ্যামনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এম জগলুল হায়দার বলেন, ‘আনিসুর রহমান নামের এক যুবক নিজেকে আওয়ামী স্বাধীনতা প্রজন্ম লীগ, গণটেলিভিশন, বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের চেয়ারম্যান দাবি করে আমার সঙ্গে কিছুদিন আগে দেখা করতে এসেছিলেন। এসব বিষয়ে তার অনুমোদন আছে কিনা, তা আমার জানা নেই।’
এদিকে, শ্যামনগরের মূল ধারার বিভিন্ন পর্যায়ের মিডিয়া কর্মীরা জানিয়েছেন, আনিসুর রহমান বহু সংগঠনের পরিচয় দিয়ে চাঁদাবাজি করছেন। একইসঙ্গে সাংবাদিকতার পরিচয় দিয়েও চাঁদাবাজি করছে। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি।