ওসি প্রদীপ চতুর্থবারের মতো রিমান্ডে
অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় টেকনাফের বরখাস্ত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশকে চতুর্থবারের মতো রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। একইসঙ্গে প্রদীপের পক্ষের আইনজীবীর দায়ের করা জামিন আবেদনটিও নাকচ করে দিয়েছেন আদালত।
আজ সোমবার দুপুর ২টার দিকে মামলার তদন্তকারী সংস্থা র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) একটি দল প্রদীপকে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট-৪ তামান্না ফারাহর আদালতে হাজির করে। এরপর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা র্যাব-১৫-এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) খায়রুল ইসলাম অধিকতর তদন্তের স্বার্থে আরো একদিনের রিমান্ড আবেদন করেন।
শুনানি শেষে বিচারক তামান্না ফারাহ একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আদেশের পর প্রদীপকে র্যাব হেফাজতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এর আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য প্রদীপকে জেলা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল।
এদিকে অ্যাডভোকেট আহসানুল হক হেনার নেতৃত্বে আইনজীবী প্যানেল সাবেক ওসি প্রদীপের জামিনের আবেদন করলে আদালত জামিন নামঞ্জুর করেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ফরিদুল আলম বলেন, ‘তিনটি আবেদন এসেছে। একটি হচ্ছে, প্রদীপের জামিন আবেদন, সেটি নামঞ্জুর হয়েছে। প্রদীপের একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে। আইনজীবী প্রদীপের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন। সেটি আদালত নথিভূক্ত করে রেখেছে।‘
আদেশের পর আহসানুল হক হেনা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এটা খুবই অপ্রত্যাশিত। গত ৬ আগস্ট থেকে তিনি রিমান্ডে আছেন। একটি মামলায় একনাগাড়ে ১৫ দিনের বেশি রিমান্ডে নেওয়া যায় না। উনাদের (র্যাব) কথামতো উনি ১৬ দিন ধরে আছেন। একই কাপড় পরে তিনি ২৬ দিন ধরে আছেন।’
গত ৩১ জুলাই ঈদুল আজহার আগের রাত সাড়ে ১০টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশ কর্মকর্তা লিয়াকত আলীর গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। ঘটনার পর পুলিশ বাদী হয়ে টেকনাফ থানায় দুটি মামলা করে। আর রামু থানায় একটি মামলা করে।
পরে ৫ আগস্ট কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হত্যা মামলা করেন সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। এতে নয়জনকে আসামি করা হয়। আসামিরা হলেন টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ, টেকনাফের বাহারছড়া শামলাপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের প্রত্যাহার হওয়া পরিদর্শক লিয়াকত আলী, উপপরিদর্শক (এসআই) নন্দদুলাল রক্ষিত, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) লিটন মিয়া, পুলিশ কনস্টেবল সাফানুর রহমান, কামাল হোসেন, আবদুল্লাহ আল মামুন, মো. মোস্তফা ও এসআই টুটুল। এদের মধ্যে আসামি মোস্তফা ও টুটুল পলাতক।
এরপর গত ৬ আগস্ট প্রথম দফায় বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, পরিদর্শক লিয়াকত আলী ও এসআই নন্দদুলাল রক্ষিতের সাত দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছিলেন কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিনের আদালত।
এরপর গত ২৪ আগস্ট কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক তামান্না ফারাহ আসামিদের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। একই আদালত গত ২৮ আগস্ট তাদের তৃতীয় দফায় রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর মধ্যে পরিদর্শক লিয়াকত আলী গতকাল রোববার এবং এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত আজ সোমবার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আর আজই চতুর্থ দফায় প্রদীপের রিমান্ড মঞ্জুর করা হলো।
এই মামলায় মোট ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সদস্য তিনজন। তাঁরা হলেন- সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) শাহজাহান, কনস্টেবল মোহাম্মদ আবদুল্লাহ ও কনস্টেবল রাজীব। এই তিনজনই আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
অন্য তিন আসামি হলেন- পুলিশের দায়ের করা দুটি মামলার সাক্ষী টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের মারিশবুনিয়া এলাকার বাসিন্দা মো. নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও মোহাম্মদ আয়াছ।
এ ছাড়া পুলিশের দায়ের করা মামলায় দুই আসামি সিনহা রাশেদের দুই সহযোগী সাহেদুল ইসলাম সিফাত এবং অপর সহযোগী শিপ্রা দেবনাথ জামিনে মুক্ত আছেন।