কিছু মানুষ সরকারকে নানাভাবে ঝামেলায় ফেলতে চায় : শিক্ষামন্ত্রী
কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক হল খুলে দেওয়ার দাবিতে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলন ও হলের ফটকের তালা ভাঙার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তিনি বলেছেন, ‘এক শ্রেণির মানুষ বর্তমান সরকারকে নানাভাবে ঝামেলায় ফেলার চেষ্টা করলেও তারা ব্যর্থ হয়েছে। বর্তমানে তাদের মতাদর্শের কিছু শিক্ষার্থীদের দিয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধ থাকা আবাসিক হলের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করতে উসকে দেওয়া হচ্ছে।’
আজ সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী এ কথা বলেন। এ সময় শিক্ষামন্ত্রী যেসব শিক্ষার্থী হলের তালা ভেঙে প্রবেশ করেছে তাদের অবিলম্বে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগ করার নির্দেশনা দেন। হল ত্যাগ না করলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণেরও নির্দেশ দেন তিনি।
ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘করোনার পরিস্থিতির কারণে শুধু বাংলাদেশেই নয়, গোটা বিশ্বে শিক্ষা ব্যবস্থায় সংকট তৈরি হয়েছে। আমরা পর্যায়ক্রমে এগুলো কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি। এখন কোনো কোনো শিক্ষার্থী বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতির নেওয়ার জন্যও হলে ওঠার চেষ্টা করছে। আমরা এসব বিষয় বিবেচনা করে আগামী ২৪ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষা শুরু ও ১৭ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব আবাসিক হল খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এসব খোলার পর বিসিএস পরীক্ষা নেওয়া হবে।’
নভেল করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারির কারণে গত বছরের মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রয়েছে। পরে গত জুলাই থেকে অনলাইন, টেলিভিশন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে বিকল্প শিক্ষাদানের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী, কওমি মাদ্রাসা ছাড়া অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছুটি বাড়ানো হয়েছে। তবে কওমি মাদ্রাসাগুলো আরো আগেই খুলে দেওয়া হয়েছে।
এর মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার কমে আসা ও টিকাদান কার্যক্রম শুরুর প্রেক্ষাপটে কর্তৃপক্ষ স্কুলগুলো খুলে দেওয়ার প্রাথমিক প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে।
পাশাপাশি চলতি বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য সিলেবাস সংক্ষিপ্তকরণেরও কাজ করছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড।
শিক্ষামন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের আগে মন্ত্রিসভার আজকের বৈঠকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুব দ্রুত খোলা যায় কি না, তা যাচাই করার নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই সঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার আগে শিক্ষক-কর্মচারীদের টিকাদান নিশ্চিত করারও তাগিদ দেন তিনি। মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে আজ সোমবার গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এই নির্দেশনা দেন তিনি।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব ড. খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘আগামী পাঁচ থেকে ছয় দিনের মধ্যে এ নিয়ে আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক হবে। ওই বৈঠকে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার আগে শিক্ষক এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে অবশ্যই করোনার টিকা নিতে হবে।’
মন্ত্রিপরিষদ সচিব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে সাংবাদিকদের আরো বলেন, ‘মন্ত্রিসভার আজকের বৈঠকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞসহ সবাইকে ডেকে নিয়ে বসে আলোচনা করতে বলা হয়েছে। কখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে, কোন প্রক্রিয়ায় খোলা হবে, তা নিয়ে আলোচনা করতে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন। যাতে নিরাপত্তা ও শিক্ষাকার্যক্রম—দুটোই নিশ্চিত করা যায়।’
সচিব আরো বলেন, ‘যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আবাসিক, তাদের সুরক্ষা আগে কীভাবে নিশ্চিত করা যায়, সে বিষয়েও চিন্তা-ভাবনা করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।’
আন্তমন্ত্রণালয় সভা কত দিন নাগাদ হবে এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘আমরা এ সপ্তাহের শেষ নাগাদ না হলেও আগামী সপ্তাহের রোববার অথবা সোমবার বসব। সেখানে আমরা একটা প্রস্তাবনা তৈরি করব। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খোলার ব্যাপারে মূলত পরিবেশ প্রিভিউ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’