কিশোরীকে ‘ধর্ষণের পর’ হত্যা, মাজারের পাশে লাশ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পেছনের তেল শাহ মাজারের পাশ থেকে এক কিশোরীর (১৪) লাশ উদ্ধার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) শাহবাগ থানা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, কিশোরীকে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে।
তবে এ ঘটনায় কিশোরীর মা শাহবাগ থানায় ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ এনে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছেন। একমাত্র আসামিকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ।
নিহত কিশোরীর মা রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে থাকেন। সন্ধ্যায় কাঁদতে কাঁদতে তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ঘুরতে গিয়া আমার মেয়ে লাশ হলো। আমার মেয়েকে ধর্ষণ করা হয়েছে। আমি এর বিচার চাই। আমার ভালো মেয়ে গেল। এখন আমাকে মা বলে ডাকবে কে?’
সন্ধ্যায় শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মামুন অর রশিদ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘গতকাল গভীর রাতে আমরা জানতে পারি, শহীদ মিনার এলাকায় এক যুবককে তিন-চারজন কিশোরী মিলে মারধর করছে। সেই খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে যায়। গিয়ে তেল শাহ মাজারের পাশ থেকে গলার ওড়না পেঁচানো অবস্থায় এক কিশোরীর লাশ উদ্ধার করে। এবং অন্য কিশোরীদের দেওয়া তথ্যমতে, যুবক আবুল খায়েরকে গ্রেপ্তার করা হয়।’
আজ দুপুরে কিশোরীর মা আবুল খায়েরকে আসামি করে মামলা করে। পরে সেই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে রিমান্ড চাওয়া হয়। আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন বলে জানান ওসি মোহাম্মদ মামুন অর রশিদ।
ওসি আরো বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত তদন্তে যা দেখেছি তা হলো, প্রথমে কিশোরীকে কুপ্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু তাতে কিশোরী রাজি না হওয়ায় ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়। সর্বশেষে তার গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে বলে আমাদের মনে হয়েছে। বাকিটা ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে বিস্তারিত জানা যাবে।’
এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) অমল কৃষ্ণ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আসামি আবুল খায়ের আমাকে ভুল তথ্য দিচ্ছে। মাজারের পেছনে গিয়ে নাকি সে গলায় ওড়না পেঁচানো অবস্থায় কিশোরীকে দেখে। কিন্তু সাক্ষীরা বলছে ভিন্ন কথা। সেজন্য তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করার পর পুরো ঘটনা জানা যাবে।’
এসআই অমল কৃষ্ণ আরো বলেন, ‘আবুল খায়ের একজন টোকাই। তিনি শহীদ মিনার এলাকায় থাকেন। সেখানেই ঘুমান। নিহত কিশোরী ও তার তিন বান্ধবীও মাঝে মাঝে ঢাকা মেডিকেল ও শহীদ মিনার এলাকায় থাকে। হয়তো কিশোরীরা নেশাও করে। নিহত কিশোরীর মা এসব তথ্য আমাদেরকে জানিয়েছেন।’
মামলার এজাহারে কিশোরীর মা বলেছেন, গতকাল শনিবার দুপুর আড়াইটার দিকে তাঁর মেয়ে এক বান্ধবীকে নিয়ে শহীদ মিনার এলাকায় যায়। সন্ধ্যায় মেয়ে ও তার বান্ধবী বাসায় ফিরে আসে। পরে আরো দুই বান্ধবীসহ মোট চারজনকে নিয়ে আবার তারা শহীদ মিনারে ঘুরতে যায়।
এজাহারে আরো বলা হয়, রাত সোয়া ২টার দিকে তিন বান্ধবী শহীদ মিনারের নিচে আর কিশোরী উপরের দিকে বসা ছিল। রাত আড়াইটার দিকে আবুল খায়ের আসেন। তখন আবুল খায়ের কথা আছে জানিয়ে কিশোরীকে শহীদ মিনার সংলগ্ন তেল শাহ মাজারের পেছনে ডেকে নিয়ে যায়। পরে কিশোরীকে ধর্ষণ করে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। বান্ধবীরা গিয়ে দেখে কিশোরী গলায় ওড়না পেঁচানো ও বিবস্ত্র অবস্থায় পড়েছিল।