কী ভাবছে হেফাজত, জানালেন শীর্ষনেতারা
দেশে চলমান পরিস্থিতিতে ফের আলোচনায় হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। এতদিন সরকারের সঙ্গে সংগঠনটির সুসর্ম্পক থাকলেও সাম্প্রতিক কয়েকটি ইস্যুতে দূরত্ব বেড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। হেফাজত নেতাদের অভিযোগ, সরকার প্রয়োজনে তাদের কাছে আসে, আবার দূরে চলে যায়। তবু নিজেদের অবস্থানেই এখনো অটল আছেন তারা।
হেফাজত নেতারা আরও দাবি করেছেন, সরকারকে ক্ষমতা থেকে নামানো বা উঠানো তাদের কাজ নয়। তাদের কাজ শুধু ইসলাম রক্ষা করা। সাম্প্রতিক নানা ইস্যু নিয়ে এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেছেন হেফাজতে ইসলামের নেতারা।
হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘২০১৩ সালের শাপলা চত্বরের ঘটনার পর সরকার আমাদের কয়েক হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেছিল। এসব মামলা এখনও চলমান। সরকারের সঙ্গে আমাদের সুম্পর্ক—এটি বলা সঠিক হবে না। আমি এর উত্তরও দিতে পারব না। কিন্তু ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরকে ঘিরে আমাদের কর্মসূচি নিয়ে সরকার আমাদের সঙ্গে বিদ্বেষমূলক আচরণ করছে। যদিও সরকার হটানোর জন্য আমরা আন্দোলন করছি না। আমরা শান্তির পক্ষেই আছি।’
হেফাজতে ইসলামের নেতাদের ওপর সরকার জুলুম করছে উল্লেখ করে সংগঠনটির আরেক নায়েবে আমির মাওলানা আহমেদ আব্দুল কাদের এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘সাম্প্রতিক আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্ত নেতাকর্মীদের ক্ষতিপূরণ, মামলা প্রত্যাহার, গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তিসহ আমাদের দাবি-দাওয়া সরকার মেনে নিলে ভালো হয়। নইলে বিষয়টি আমরা আইনি ও রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করব। এখানে আর কিছু বলার নেই। আমরা আমাদের ন্যায্য দাবি সরকারের কাছে পেশ করব। মেনে নেওয়া বা না নেওয়া তাদের বিষয়।’
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ সব সময় ইসলাম ও দেশের কথা বলে উল্লেখ করে সংগঠনটির যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ বলেন, ‘সরকারের পক্ষে-বিপক্ষে বলা আমাদের কাজ নয়। আমরা শুধু স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আমন্ত্রণের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করেছি।’
তবু সরকারের সঙ্গে অস্থিরতা কেন—জানতে চাইলে মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ বলেন, ২৬ মার্চ বায়তুল মোকাররমে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা প্রতিবাদ করেছেন। কিন্তু সেখানে হামলা হয়েছে। হাটহাজারীতেও হামলা হয়েছে এবং হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। একইভাবে ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে হতাহতের ঘটনায় সাম্প্রতিক এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
আল্লামা শাহ আহমদ শফী জীবিত থাকাবস্থায় সরকারের সঙ্গে হেফাজতে ইসলামের এক ধরনের সুসম্পর্ক ছিল—এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাওলানা জালালুদ্দীন বলেন, ‘হুজুর ছিলেন অতি বয়স্ক একজন বুজুর্গ ব্যক্তি। তাঁর ইন্তেকালের পর সরকার মনে করছে, বর্তমান কমিটির নেতাদের সঙ্গে সরকারের সুসম্পর্ক থাকবে না। এ কারণেই হয়তো পরিস্থিতি এমন হচ্ছে।’
হেফাজতে ইসলামের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আতাউল্লাহ আমীন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ইসলাম রক্ষা করাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য। নাস্তিক-মুরতাদদের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান, সরকারের বিরুদ্ধে নয়। আমরা আমাদের জায়গায় আছি। কিন্তু সরকার মাঝে-মধ্যে আমাদের কাছে আসে, আবার দূরে চলে যায়। ইসলামের বিরুদ্ধে কেউ অবস্থান নিলে আমরা প্রতিবাদ জানাই। এই প্রতিবাদ সরকারকে হটানোর উদ্দেশ্যে নয়। সরকারের এটা বোঝা উচিত।’
হেফাজতে ইসলামের সহকারী মহাসচিব মাওলানা ফজলুল করীম কাসেমী এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘নাস্তিকেরা দেশে যখন ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ড শুরু করে তখন থেকেই হেফাজত প্রতিবাদ শুরু করে। একজন মুসলমান হিসেবে আমাদের ঘরে বসে থাকার সুযোগ নেই।’
নরেন্দ্র মোদি মুসলমানদের ওপর অত্যাচার করেছেন দাবি করে ফজলুল করীম কাসেমী বলেন, ‘এজন্যই আমরা মোদির আগমনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছি। কিন্তু একে কেন্দ্র করে সরকার আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন চালিয়েছে। এ কারণে সম্প্রতি পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়েছে।’
হেফাজতে ইসলামের ঢাকা মহানগর শাখার প্রচার সম্পাদক মাওলানা আব্দুল মুবিন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করে আসছে, সরকার পতনের কোনো কর্মসূচি দেয়নি। তবে শুরুটা হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল স্থাপনকে কেন্দ্র করে। হেফাজতে ইসলাম এর প্রতিবাদ করেছিল। এ কারণে সরকারের মধ্যে আমাদের ওপর ক্ষোভ থাকতে পারে। পাশাপাশি আমরা সরকারের বিভিন্ন কাজের সমালোচনা করায় হয়তো তারা আমাদের দমনের চিন্তা করছে।’
হেফাজতের কেন্দ্রীয় সহ-প্রচার সম্পাদক মাওলানা ফয়সাল আহমদ বলেন, ‘নরেন্দ্র মোদির আগমনের পর হতাহতের ঘটনায় আমরা হরতাল ডেকেছি। যদিও হরতালের আগের রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আমরা বৈঠকও করেছি। কিছু বহিরাগত হরতালে জ্বালাও-পোড়াও করেছে। আমাদের কোনো নেতাকর্মী একটি গাড়িও ভাঙেননি, অথচ এখন সরকার আমাদের ওপর নির্যাতন শুরু করেছে।’
হেফাজতের কেন্দ্রীয় সহ-অর্থ সম্পাদক মাওলানা ইলিয়াস হামিদী বলেন, ‘হেফাজতে ইসলাম একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। তবে সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের কেউ কেউ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও হেফাজতের লক্ষ্য সরকার পতন নয়। বিভিন্ন আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে চাপে রেখে কিছু দাবি-দাওয়া আদায়ই আমাদের উদ্দেশ্য।’