কুষ্টিয়ায় ঠিকাদারকে হাতুড়িপেটা, ভিডিও ভাইরাল
কুষ্টিয়া শহরের রাইফেল ক্লাবের সামনে কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়কে প্রকাশ্য দিবালোকে এক ঠিকাদারকে হাতুড়িপেটা করেছে সন্ত্রাসীরা। এ হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন ঠিকাদার শহিদুর রহমান মিন্টু। আজ সোমবার দুপর ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
আহত মিন্টুর বাড়ি কুমারখালী উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের শানপুকুরিয়ায়।
হামলার সময় সড়কে লোকজনের উপস্থিতি ছিল। অনেকেই হামলার দৃশ্য ভিডিও ধারণ করেন মোবাইল ফোনে। গুরুতর আহত ঠিকাদার মিন্টু ভয়ে হাসপাতালেও ভর্তি হতে পারেননি। পরে চিকিৎসকের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় সেবা নিয়ে বাড়িতে অবস্থান করছেন। থানায় অভিযোগ করতেও ভয় পাচ্ছেন তিনি।
ঠিকাদার শহিদুর রহমান মিন্টু বলেন, ‘আমি প্রথম শ্রেণির ঠিকাদার। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করি। কয়েক মাস আগে মিরপুর উপজেলায় সড়কের সাত কোটি টাকার একটি টেন্ডার ছিল। আমি টেন্ডারে অংশগ্রহণ করি। টেন্ডারে অংশ নেওয়ার আগে থেকে আমি যেন এ কাজে শিডিউল ক্রয় ও দাখিল না করি সেজন্য কয়েকজন নেতা আমাকে হুমকি দেয়।
টেন্ডারে অংশ নিয়ে লটারিতে আমি কাজটি পাইনি। তবে অংশ নেওয়ার কারণে আমাকে ফোনে প্রতিনিয়ত হুমকি দিয়ে আসছিল ক্ষমতাসীন দলের বেশ কয়েকজন নেতা। তারা আমাকে দেখে নেবে বলে হুমকি দেয়।’
ঠিকাদার আরও বলেন, আজ দুপর ১২টার দিকে শহরে আসি ব্যক্তিগত কাজে। শহরের রাইফেল ক্লাব এলাকার একটি দোকানে বসে চা পান করছিলাম। এ সময় হঠাৎ করে ১০ থেকে ১৫ জন ব্যক্তি হাতুড়িসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আমাকে ঘিরে ধরে। তাদের বেশির ভাগের হাতে হাতুড়ি ছিল। তারা আমার দুই হাঁটুতে হাতুড়ি দিয়ে বেদম পেটাতে শুরু করে। এরপর আমি বাঁচতে দৌঁড় দেই। তার পরও আমাকে তাড়া করে পেটাতে থাকে শরীরের নানা স্থানে। সড়কসহ আশপাশে লোকজন থাকলেও তারা ভয়ে কেউ এগিয়ে আসতে সাহস পায়নি। আমার হাঁটু থেতলে গেছে। পিঠে ও বুকেও লেগেছে।
স্থানীয় লোকজনের ধারণ করা একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, শহিদুরকে ঘিরে ধরে হাতুড়ি দিয়ে পেটাচ্ছে কয়েকজন। তিনি দুই হাত দিয়ে আঘাত ঠেকানোর চেষ্টা করছেন। তার পরও তাকে পেটানো হয়। একপর্যায়ে তিনি দৌঁড় দিয়ে পালানোর চেষ্টা করেন। তখন তার পিছু নেয় দুজন। একজন লুঙ্গি পরা ছিল। তার বাড়ি মজমপুর সাদ্দামবাজার এলাকায়। আরেকজন প্যান্ট ও শার্ট পরা ছিল। তার মুখে মাস্ক ছিল। এ দুজনের সঙ্গে আরও ১০-১৫ জন যুবক হামলায় অংশ নেয়।
শহিদুর অভিযোগ করে বলেন, এ দেশে কোনো আইন নাই, বিচার নাই। নিরাপত্তার কারণে হাসপাতালেও যেতে পারিনি। যারা হামলা করেছে তারা হাসপাতাল এলাকার। কোনো রকমে চিকিৎসক দেখিয়ে ওষুধ নিয়ে বাড়িতে এসেছি। তারা আমার লাইফ শেষ করে দিয়েছে। দুই হাঁটুতে বেদম পিটিয়েছে। মামলা করব কাদের নামে? এরা দেশ চালায়। মামলা করে টিতে থাকতে পারব না। আমি মামলা করলেও কোনো লাভ হবে না। আপনারাই বলেন, কার কাছে বিচার চাইব?
স্থানীয়রা জানায়, যারা হামলায় অংশ নেয় তারা মজমপুর এলাকার। স্থানীয় এক নেতার ক্যাডার এরা। বেশির ভাগের মুখে মাস্ক পরা ছিল। ভয়ে কেউ তাদের বাধা দেয়নি। এলাকার অনেক মানুষ হামলা প্রত্যক্ষ করেছে।
কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাব্বিরুল ইসলাম বলেন, এমন হামলার কথা আমার কানে আসেনি। হামলা বা মারপিটের বিষয়ে থানায় কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ইতিমধ্যেই হামলার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।