খানজাহান আলী দিঘির অসুস্থ কুমিরের চিকিৎসা শুরু
মারস ক্রোকোডাইল’ বা জলাভূমির কুমির এখন এদেশ থেকে বিলুপ্তপ্রায়। এ প্রজাতির কুমির এখন আছে শুধু বাগেরহাটে হযরত খানজাহান আলীর (র.) মাজার দিঘিতে আর গাজীপুরে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে। আগে এ কুমিরের বিচরণ ছিল পদ্মা নদীসহ দেশের বিভিন্ন জলাভূমিতে। আর এখন এর অস্তিত্ব শুধু বাগেরহাট ও গাজীপুর বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে রয়েছে।
বাগেরহাটের দিঘিতে যে কুমির দুইটি রয়েছে তা এখন বয়স্ক ও অসুস্থ। বয়সের ভারে ও অসুস্থতায় হারিয়েছে তাদের প্রজনন ক্ষমতাও। তাই বিলুপ্তের পথে এ কুমিরের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে উদ্যোগ নিয়েছে বনবিভাগ।
আজ বুধবার দুপুরে ওই পুকুরের ৫০ বছর বয়সের পুরুষ কুমিরটিকে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য তাকে বেঁধে তোলা হয়েছে। সেখানে প্রয়োজনমতো কয়েকদিন রেখে চিকিৎসা দিয়ে সারিয়ে তোলার কাজ শুরু হয়েছে।
পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ইনচার্জ ও বন্যপ্রাণী লালন পালনে অভিজ্ঞ হাওলাদার আজাদ কবির কুমিরটিকে পুকুর থেকে তুলে চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু করেছেন।
হাওলাদার আজাদ কবির আরও জানান, দিঘির পুরুষ কুমিরটির ডান চোখ আগে থেকেই নষ্ট, বাকি বাম চোখটিও নষ্টের পথে। এছাড়া শরীরের আর কোথায় কী ধরনের সমস্যা রয়েছে তা ভালো করে দেখা হচ্ছে। আশা করছি ভালোভাবে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা করা গেলে ভালো হয়ে উঠবে। এদিকে, অপর যে নারী কুমিরটি রয়েছে সেটিরও একটি চোখ নষ্ট। সেটি ডিম দিলেও তাতে বাচ্চা ফুটছে না।
চোখ নষ্ট হওয়ার বিষয়ে আজাদ কবির বলেন, ‘মানুষের অত্যাচারে কুমিরের চোখ নষ্ট হয়েছে। কারণ ওই দিঘিতে যখন মাছ ধরা হয় তখন জালে কুমির আটকে গেলে কুমিরের চোখে খোঁচানো হয়। চোখে খোঁচালে কুমির দুর্বল হয়ে পড়ে এই সুযোগে তারা জাল ছাড়িয়ে নেয়।
কুমিরটিকে পুকুর থেকে তোলার সময় উপস্থিত ছিলেন পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন। তাঁর নির্দেশেই কুমিরটির চিকিৎসার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এ কুমির দুটি ‘মাদ্রাজ কুমির’ নামে পরিচিত। কারণ কুমিরগুলো ভারতের মাদ্রাজ থেকে আনা হয়েছিল। কুমির দুটির মধ্যে এ দিঘিতে এখন দুটি কুমির রয়েছে। দেড় বছর আগে মারা গেছে ‘কালা পাহাড়’ আর চার বছর আগে ‘ধলা পাহাড়’ নামের কুমিরটি। তারপর আরও দুটি অসুস্থ হয়ে পড়লে সুন্দরবনে করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে নিয়ে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে পাঠানো হয়। সর্বশেষ যে দুইটি রয়েছে তাও এখন অসুস্থ।’