খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল হলেও সুস্থ নন : মেডিকেল বোর্ড
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল হলেও তিনি সুস্থ নন বলে জানিয়েছেন তাঁর মেডিকেল বোর্ড প্রধান ডাক্তার শাহাবুদ্দিন তালুকদার। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এভার কেয়ার হাসপাতালে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
শাহাবুদ্দিন তালুকদার বলেন, ‘তাঁর দুটি কন্ডিশন। এক নম্বর, তিনি ক্লিনিক্যালি স্টেবল বাট নট কিউর। বাট সি ইজ নট ফ্রি অব ডিজিস। দুই নম্বর হচ্ছে, আমাদের কোভিড পরিস্থিতির জন্য, সেকেন্ডারি ইনফেকশনের জন্য এবং সি ইজ ভেরি মাচ বারগানেবল। সেজন্য আপাতত তাঁকে বাসায় পাঠাচ্ছি। এরপর যদি কোনো রকম ক্রাইসিস হয়, উই আর রেডি টু রিসিভিং হার এগেইন ইন হসপিটাল।’
খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসা প্রসঙ্গে বোর্ড প্রধান বলেন, ‘আমাদের বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যতগুলো পসিবল ট্রিটমেন্ট ছিল, তা আমরা দিয়েছি। আমরা হাপাতালের ডাক্তারদের সঙ্গে, বাইরের কনসালটেন্টদের সঙ্গে, অন্যান্য হাসপাতালের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। আমরা ইউকে, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়ার কনসালটেন্টদের সঙ্গে কথা বলেছি। সবারই একই মত, আপাতত আমরা কনট্রোল করেছি। বাট সি নিডস টু গো এবরোড ফর হার পারমানেন্ট ট্রিটমেন্ট।’
খালেদা জিয়া বর্তমানে সুস্থ না হলেও কেন মেডিকেল বোর্ড ছাড়পত্র দিচ্ছে জানতে চাইলে মেডিকেল বোর্ডের সদস্য অধ্যাপক এফ এম সিদ্দিকী বলেন, ব্লিডিং আপাতত বন্ধ হলেও তাঁর অসুখের ট্রিটমেন্ট সেভাবে হচ্ছে না। এখন অবস্থা স্থিতিশীল আছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি, সারা দেশে ও হাসপাতালে (এভারকেয়ার হাসপাতালে) করোনা সংক্রমণ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। শুধু জানুয়ারি মাসে এই হাসপাতালের প্রায় ৩৮০ জনের বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং তারা বিভিন্নভাবে চিকিৎসা নিয়েছেন। এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা চিন্তা করে মেডিকেল বোর্ড সিদ্ধান্ত নিয়েছে—এই মুহূর্তে তাঁর কনডিশন যেহেতু স্টেবল আছে, সেহেতু আমাদের তত্ত্বাবধানে বাসায় রেখে চিকিৎসা করা প্রয়োজন।’
এফ এম সিদ্দিকী আরও বলেন, ‘এই সংক্রমণ যদি আবার কোনো জটিলতার সৃষ্টি করে, তাহলে এটার ম্যানেজমেন্টটা জটিল ও কঠিন হয়ে যাবে। সেজন্য আমরা আজকে ছাড়পত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। দুইবার মেসিভ ব্লিডিংয়ে তাঁর জীবন একটা সংকটাপন্ন অবস্থায় চলে গিয়েছিল। এখন আমরা মনে করছি, ওই ধরনের মেসিভ ব্লিডিং হওয়ার সম্ভাবনা আপাতদৃষ্টিতে নেই। কিন্তু মেডিকেল প্রোফেশনে শতভাগ গ্যারান্টি কিছুতে দেওয়া যাবে না। তবে আমরা জানি, এখন স্মল ব্লিডিং হতে পারে। যেটা হয়তো বাসায় রেখে হ্যান্ডেল করা সম্ভব। এজন্য আমরা তাঁকে করোনা পরিস্থিতিতে হাসপাতালে রাখার যে রিস্ক তার চেয়ে বাসায় রেখে চিকিৎসা সেইভ বলে মনে করি।’
বেগম জিয়ার এ চিকিৎসক আরও বলেন, ‘মূল অসুখ লিভার সিরোসিসের যে চিকিৎসা, সেটা কিন্তু আমরা করতে পারিনি। যে ভ্যাসেল দিয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে, সেই রক্তের প্রবাহটা বাইপাস করে টিপসের মাধ্যমে যে প্রক্রিয়া তা আমাদের দেশে নেই। উন্নত চিকিৎসা সেজন্য প্রয়োজন।’
খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের এ চিকিৎসক জানান, ‘তার রোগের চিকিৎসা হয়নি। তবে রোগের জটিলতা কিছুটা কমানো হয়েছে। যে কারণে খালেদা জিয়া আশঙ্কামুক্ত নন।’
লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হওয়ার আগে গত ৯ এপ্রিল খালেদা জিয়া করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। ওই সময়ে বাসায় চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে তিনি চিকিৎসা নিয়ে সেরে ওঠেন। পরে শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত রোগে আক্রান্ত হলে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই সময়ে তিনি দুই মাস এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছিলেন।
৭৭ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘ সময় ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, চোখ ও দাঁতের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন।
দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা মামলায় ২০০৮ সালে সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে যান খালেদা জিয়া। দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হলে পরিবারের আবেদনে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ মানবিক বিবেচনায় শর্তসাপেক্ষে তাকে সাময়িক মুক্তি দেয় সরকার। ছয় মাস পর পর মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়।
গত ১৩ নভেম্বর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন খালেদা জিয়া। লিভারে রক্তক্ষরণের কারণে তাঁকে দুই মাস সিসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়। কেবিনে আনা হয় গত ১০ জানুয়ারি।
বিএনপির চেয়ারপারসনের সুচিকিৎসার জন্য অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করে এভারকেয়ার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এই মেডিকেল টিমে আরও দুটি বেসরকারি হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের যুক্ত করা হয়।
খালেদা জিয়া এ নিয়ে তিন দফায় এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন। এবারই প্রথম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ থেকে মেডিকেল বোর্ড সংবাদ সম্মেলন করে গণমাধ্যমকে বিএনপির চেয়ারপারসনের অবস্থা অবহিত করে।