গ্রেপ্তার এড়াতে যে তিন কৌশল বেছে নিয়েছিলেন চিত্রনায়িকা মাহি
পুলিশের বিরুদ্ধে ফেসবুক লাইভে আনা নানা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলায় গ্রেপ্তার এড়াতে, বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেন চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি। গ্রেপ্তার এড়াতে বোরকা ও হিজাব পরে চেহারা ঢেকে এবং হুইল চেয়ারে করে অসুস্থতা দেখিয়ে কৌশলে বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পার হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশের চোখ এড়াতে পারেননি মাহি।
রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আজ শনিবার (১৮ মার্চ) আনুমানিক বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মাহিয়া মাহিকে গ্রেপ্তার করে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ।
গ্রেপ্তার এড়াতে তিনি কালো বোরকা ও হিজাব পরে বিমান থেকে নামেন। নামার পর হুইল চেয়ারে করে তাকে ইমিগ্রেশনে আনা হয়। কিন্তু ইমিগ্রেশন পুলিশ জানায়, সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে সৌদি আরব থেকে বিজি ৩৩৬ ফ্লাইটে জেদ্দা থেকে মাহি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। ৪ নম্বর বোর্ডিং ব্রিজের ৬ নম্বর বেল্টে তার লাগেজ ছিল।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার এক কর্মকর্তা জানান, বিমানবন্দরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ এড়াতে পারেননি মাহি। বিমান থেকে নামার পর ইমিগ্রেশন অফিসাররা মাহির ইমিগ্রেশন শেষ করেন। এরপর আমাদের হাতে মাহিকে তুলে দেওয়া হয়।
মাহির গ্রেপ্তারের বিষয়টি এনটিভি অনলাইনকে নিশ্চিত করে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা কিছুক্ষণের মধ্যে বিস্তারিত জানাব।’এর আগে এই মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার ঝুঁকি নিয়েই ওমরাহ পালন শেষে আজ দেশে ফেরেন তিনি। দুপুর ১২টার দিকে গাজীপুর মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল মাহিকে গ্রেপ্তার করে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহিকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আজ শনিবার দুপুর দেড়টার দিকে গাজীপুর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে পুলিশ সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে। অপরদিকে মাহির পক্ষে জামিন আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে গাজীপুর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ইকবাল হোসেন উভয় আবেদন না মঞ্জুর করে মাহিকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
এর আগে শুক্রবার (১৭ মার্চ) রাতে মাহির বিরুদ্ধে বাসন থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. রোকন মিয়া বাদী হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। এছাড়া মারধর, ভাঙচুর, চাঁদা দাবি ও জমি দখলের অভিযোগ এনে মাহি ও তার স্বামী রকিব সরকারকে আসামি করে আরও একটি মামলা করেন স্থানীয় ইসমাইল হোসেন। এ মামলায় ২৮ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার বিষয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম গতকাল জানান, অপমান, অপদস্ত ও হেয় প্রতিপন্ন করে বিভিন্ন মিথ্যা, বানোয়াট, আক্রমণাত্মক, কুরুচিপূর্ণ এবং মানহানিকর তথ্য প্রচার করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি করার অপরাধে রকিব সরকার ও তার স্ত্রী মাহিয়া মাহি সরকারের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়েছে।
স্বামীর সঙ্গে ওমরাহ পালন করতে যাওয়া চিত্রনায়িকা মাহি শুক্রবার সৌদি আরবের মক্কা শহর থেকে ফেসবুক লাইভে রকিবের গাড়ির শো-রুম ভাঙচুর ও হামলার অভিযোগ করেন। এর কিছু সময় পর রকিব ও মাহি ফেসবুক লাইভে এসে বলেন, ‘গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম দেড় কোটি টাকার বিনিময়ে আমাদের গাড়ির শো-রুম দখল করতে দিচ্ছে ইসমাইল ওরফে লাদেনকে।’
এরপর ওই দিন রাত সাড়ে ১২টার দিকে মাহি ও রকিব সরকার আবারও ফেসবুক লাইভে আসেন। তারা বলেন, গাজীপুর পুলিশ আমাদের সিকিউরিটিসহ অন্যান্যদের অ্যারেস্ট করেছে। আমাদের শো-রুম থেকে সবাইকে বের করে দিচ্ছে। বলেছে, না বের হলে গুলি করবে। পুলিশ কখনও এগুলো করতে পারে? আমরা সকালে এয়ারপোর্টে নামব। হয়তো আমাদেরও গ্রেপ্তার করবে।
প্রসঙ্গত, বর্তমানে নয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা মাহি। কিছুদিনের মধ্যেই মা হবেন তিনি। এর মধ্যেই গ্রেপ্তার হলেন এই চিত্রনায়িকা।