চলতি সপ্তাহে ভূমিহীনমুক্ত জেলা হতে যাচ্ছে পঞ্চগড়-মাগুরা
জেলার সব ভূমিহীন পরিবারকে আধুনিক আবাস ও জমি দিয়ে পুনর্বাসন করায় চলতি সপ্তাহে পঞ্চগড় ও মাগুরাকে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত জেলা ঘোষণা করতে যাচ্ছে সরকার। মুজিববর্ষ উপলক্ষে সরকারের গৃহীত অঙ্গীকারের অংশ হিসেবে পঞ্চগড় ও মাগুরার আটটি উপজেলাসহ বিভিন্ন জেলার মোট ৫২টি উপজেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করা হবে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তার মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস গতকাল সোমবার এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘আগামী বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারা দেশের ভূমিহীন পরিবারের মধ্যে ২৬ হাজার ২২৯টি ঘর বিতরণের সময় এ ঘোষণা দেবেন।’
কায়কাউস বলেন, ‘৫২টি উপজেলায় মোট ১৯ হাজার ৭৮০টি ভূমিহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। পুরো পঞ্চগড় ও মাগুরায় ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারের সংখ্যা শূন্য। এটি একটি বিশাল অর্জন।’
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া বলেন, ‘দুই জেলা ও ৫২টি উপজেলায় কাউকে ভূমিহীন হিসেবে পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিকভাবে তাকে জমিসহ বাড়ি দেওয়া হবে। এ বিষয়ে এরই মধ্যে স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
মুখ্য সচিব বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একটি প্রকল্প আশ্রয়ণ-২-এর তৃতীয় ধাপে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের মধ্যে প্রায় ৬৭ হাজার ৮০০টি ঘর দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে গত ২৬ এপ্রিল ৩২ হাজার ৯০৪টি বাড়ি হস্তান্তর করা হয়েছে। আগামী ২১ জুলাই ২৬ হাজার ২২৯টি বাড়ি হস্তান্তর করা হবে এবং বাকি আট হাজার ৬৬৭টি ঘর নির্মাণের কাজ এখনও চলছে।’
এর আগে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ২০২১ সালের ২৩ জানুয়ারি ও ২০ জুন প্রথম দুই ধাপে দেশে গৃহহীনদের মধ্যে দুই শতাংশ জমিসহ এক লাখ ১৭ হাজার ৩২৯টি আধা-পাকা বাড়ি বিতরণ করা হয়েছিল।
ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত হচ্ছে যে ৫২টি উপজেলা
ঢাকার নবাবগঞ্জ, মাদারীপুর সদর, শরীয়তপুরের ডামুড্যা, কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী, টাঙ্গাইলের গোপালপুর, মানিকগঞ্জের ঘিওর ও সাটুরিয়া, রাজবাড়ীর কালুখালী, ফরিদপুরের নগরকান্দা, নেত্রকোণার মদন, ময়মনসিংহের ভালুকা, নান্দাইল, ফুলপুর ও ফুলবাড়িয়া; জামালপুরের বকশীগঞ্জ, চট্টগ্রামের পটিয়া, কর্ণফুলী, সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া।
লক্ষ্মীপুরের রায়পুর ও রামগঞ্জ, ফেনীর ফেনী সদর, ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী ও পরশুরাম; গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ, পঞ্চগড়ের আটোয়ারী, পঞ্চগড় সদর, দেবীগঞ্জ, তেতুলিয়া ও বোদা; দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ, ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী, নীলফামারীর ডিমলা, নওগাঁর রাণীনগর, জয়পুরহাটের পাঁচবিবি, রাজশাহীর মোহনপুর, চারঘাট ও বাঘা, বগুড়ার নন্দীগ্রাম ও দুপচাঁচিয়া, নাটোরের বাগাতিপাড়া, পাবনার ঈশ্বরদী, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ, ঝিনাইদহে হরিণাকুণ্ডু, সাতক্ষীরার তালা, মাগুরায় মাগুরা সদর, শ্রীপুর, মোহাম্মদপুর ও শালিখা; ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া ও পটুয়াখালীর দশমিনা।
২০২১-২২ অর্থবছরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাড়ি নির্মাণের জন্য প্রায় চার হাজার ২৯ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল।
সরকার সারা দেশে গৃহহীনদের জন্য বাড়ি নির্মাণের জন্য প্রায় পাঁচ হাজার ৫১২ একর খাস জমি উদ্ধার করেছে এবং এই জমির আনুমানিক বাজার মূল্য দুই হাজার ৯৬৭ কোটি টাকা।
এ ছাড়া আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় বাড়ি নির্মাণের জন্য সরকার ১৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৯১ দশমিক ৭৯ একর জমি কিনেছে। আর এ পর্যন্ত আট হাজার ৪৬২টি ভূমিহীন পরিবারকে সংগৃহীত জমিতে পুনর্বাসন করা হয়েছে।
কায়কাউস বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকট সত্ত্বেও সরকার আশ্রয়-২ প্রকল্প বাস্তবায়ন অব্যাহত রাখবে। কারণ সঙ্কটের মধ্যেও গ্রামীণ অর্থনীতিকে সচল রাখতে আবাসন প্রকল্প অবদান রাখছে।’ তিনি বলেন, সাম্প্রতিক জনশুমারি অনুযায়ী সারাদেশে ভাসমান লোকের সংখ্যা মাত্র ২২ হাজার।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম, আশ্রয়ণ-২-এর প্রকল্প পরিচালক আবু সালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) মো. আহসান কিবরিয়া সিদ্দিকী ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন।