জানুয়ারির প্রথম দিকেই টিকা পাবে বাংলাদেশ : স্বাস্থ্যমন্ত্রী
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকেই ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকা আমদানি করা হবে। এই টিকা আনার জন্য অনেক আগেই চুক্তি করেছে সরকার।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর মহাখালীতে বিসিপিএস ভবনে হাম-রুবেলা টিকাদান ক্যাম্পেইন-২০২০-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
মন্ত্রী বলেন, বিশ্বের অনেক দেশেরই চুক্তি না থাকায় টিকা নিতে বিলম্ব হবে। কিন্তু আমাদের দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময়োপযোগী সিদ্ধান্তের ফলে এবং দ্রুত অর্থনৈতিক জোগান দেওয়ায় বিশ্বের অনেক দেশের আগেই টিকা চলে আসছে বাংলাদেশে। এর পাশাপাশি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও বাংলাদেশকে কিছু টিকা দেবে। সেগুলোও সরকার সময় মতো হাতে পেয়ে যাবে। আশা করা হচ্ছে, এই প্রাপ্ত টিকাগুলো থেকে ক্রমান্বয়ে দেশের প্রায় ২৭ ভাগ মানুষের টিকা প্রাপ্তি ঘটবে।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী টিকাদানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নানা সাফল্যের চিত্র তুলে ধরেন। সঠিক নিয়মে ও দক্ষতার সঙ্গে টিকা দেওয়ার ফলে হাম-রুবেলা, পোলিওসহ ১০ প্রকারের কঠিন সংক্রমণব্যাধি দেশ থেকে নির্মূলের পথে রয়েছে বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান। স্বাস্থ্য খাতের সফলতায় দেশের প্রায় ৯০ ভাগ শিশুকে টিকা দেওয়া সম্ভব হয়েছে বলেও জানান তিনি।
টিকাদান কর্মসূচি প্রসঙ্গে জাহিদ মালেক বলেন, অতীতে বেশ কয়েকবার দেশব্যাপী হাম-রুবেলা ক্যাম্পেইন পরিচালিত হওয়া সত্ত্বেও বিগত কয়েক বছরে দেশে হাম ও রুবেলা রোগের প্রকোপ ও আক্রান্তের সংখ্যা কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণকল্পে এবং ২০২৩ সাল নাগাদ দেশ থেকে হাম-রুবেলা দূরীকরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের নিমিত্তে সরকার আগামী ১২ ডিসেম্বর থেকে ২৪ জানুয়ারি সারা দেশে আরো একটি হাম-রুবেলা ক্যাম্পেইন-২০২০ পরিচালনা করতে যাচ্ছে। এই ক্যাম্পেইনের আওতায় দেশব্যাপী নয় মাস থেকে ১০ বছরের নিচের প্রায় তিন কোটি ৪০ লাখ শিশুকে এক ডোজ এমআর টিকা প্রদান করা হবে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরো জানান, এই ক্যাম্পেইনের মূল উদ্দেশ্য হলো নয় মাস থেকে ১০ বছরের শতকরা ৯৫ ভাগের বেশি শিশুকে এক ডোজ এমআর টিকা প্রদান। চলমান কোভিড-১৯ মহামারি বিবেচনা করে নিরাপদ পরিবেশে জনগণ বা স্বাস্থ্যকর্মী কারো ক্ষতি সাধন না করে গুণগত মানসম্পন্ন একটি টিকাদান ক্যাম্পেইন পরিচালনা নিশ্চিতকরণ।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় আজ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ক্যাম্পেইনটি গত ১৮ মার্চ থেকে শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কোভিড-১৯ মহামারির কারণে তা শেষ মুহূর্তে স্থগিত করা হয়। বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে ক্যাম্পেইনটি পরিচালনার জন্য নতুন একটি কর্মকৌশল নির্ধারণ করা হয়েছে। এই নতুন কর্ম কৌশল অনুযায়ী ক্যাম্পেইনটি সারা দেশে কমিউনিটি পর্যায়ে পরিচালিত হবে। ক্যাম্পেইনটি চলার সময় নিয়মিত টিকাদান কার্যক্রমও চালু থাকবে। আগে পরিকল্পিত তিন সপ্তাহের পরিবর্তে ক্যাম্পেইনের সময়কাল বাড়িয়ে ছয় সপ্তাহ করা হয়েছে। টিকাকেন্দ্রে ভিড় এড়াতে টিকাকেন্দ্রের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়নের একেকটি ওয়ার্ডে ক্যাম্পেইন টিকাদান কার্যক্রম সম্পন্ন করতে দুই সপ্তাহ সময় লাগবে। সপ্তাহে দুই দিন নিয়মিত টিকাদান কার্যক্রম পরিচালিত হবে। সারা দেশের স্থায়ী, আউটরিচ তথা অস্থায়ী ও সৃষ্ট অতিরিক্ত নতুন ক্যাম্পেইন টিকাদান কেন্দ্রগুলোর মাধ্যমে ক্যাম্পেইন টিকা প্রদান করা হবে। দুই বছরের নিচের কোনো শিশু নিয়মিত টিকাদান কর্মসূচির কোনো টিকা না পেয়ে থাকলে ক্যাম্পেইন চলাকালে তাদের শনাক্ত করে উক্ত টিকা প্রদানের ব্যবস্থাও করা হয়েছে, যা নিয়মিত টিকাদান কার্যক্রমকেও জোরদার করবে। ক্যাম্পেইন চলাকালে টিকাদান কেন্দ্রসমূহ শুক্রবার ও অন্যান্য সরকারি ছুটি ব্যতীত একযোগে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। দুর্গম ও ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলের জন্য অতিরিক্ত টিকা দলের ব্যবস্থা থাকবে এবং প্রয়োজনে দুর্গম ও ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলের জন্য গঠিত টিকা দল স্বাস্থ্যকালীন সেশন পরিচালনা করবে। প্রাত্যহিক ক্যাম্পেইন কার্যক্রম ও টিকা পরবর্তী বিরুপ প্রতিক্রিয়া ব্যবস্থাপনা পর্যবেক্ষণের নিমিত্তে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ এবং এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ের অধীন সব প্রশাসনিক স্তরে যথাক্রমে সার্বক্ষণিক কন্ট্রোল রুম চালু ও এইএফআই ব্যবস্থাপনা দল নিয়োজিত থাকবে।
বাজার-হাটে বসবাসরত শিশু, কারখানায় কর্মরত মায়েদের শিশু, বেদেবহরসহ অন্যান্য ভ্রাম্যমাণ জনগোষ্ঠীর শিশু, রেলস্টেশন/বাস টার্মিনালে বসবাসকারী সুবিধাবঞ্চিত শিশু, হাসপাতাল ও জেলখানায় অবস্থারত মায়েদের শিশু, পতিতালয়ে বসবাসরত শিশু, বস্তিতে বসবাসরত শিশুদের টিকা নিশ্চিত করতে সরকার অতিরিক্ত টিকাদান কেন্দ্রের ব্যবস্থা করেছে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমএনসিঅ্যান্ডএইচ অপারেশনাল প্ল্যানের লাইন ডাইরেক্টর ডা. মো. শামসুল হক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. মওলা বকস চৌধুরী, ইউনিসেফের বাংলাদেশ প্রতিনিধি তমু হজুমি এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বাংলাদেশের প্রতিনিধি ড. ভুপিন্দর কাউল প্রমুখ।