জাপানি দুই শিশুর বিষয়ে আদেশ ৩টায়
জাপানি দুই শিশু জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনা তাদের বাবার কাছে নাকি মায়ের কাছে থাকবে, সে বিষয়ে শুনানি শেষ হয়েছে। শিশুদের উপস্থিতিতে এ শুনানি হয়। আজ মঙ্গলবার দুপুরে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চে এই শুনানি হয়। বিকেল ৩টায় এ ব্যাপারে আদেশ দিবেন আদালত।
আদালতে শিশুদের জাপানি মায়ের পক্ষে শুনানি করছেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। বাবার পক্ষে আইনজীবী ফাওজিয়া করিম শুনানি করছেন।
দুই মেয়েশিশুর জিম্মা চেয়ে জাপানি নাগরিক নাকানো এরিকো হাইকোর্টে রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট আজ দুই শিশুকে হাজির করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। সে অনুসারে দুই শিশু আজ আদালতে এসেছে।
গত ২২ আগস্ট দুই শিশুকে ইমরানের বারিধারার বাসা থেকে উদ্ধার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তারপর থেকে তারা উইমেন সাপোর্ট সেন্টারে ছিল।
আজ সকাল ১০টার পর সিআইডির তত্ত্বাবধানে দুই শিশু আদালতে উপস্থিত হয়। শিশু দুটি একে অন্যের হাত ধরে ধীরপায়ে আদালত কক্ষের দিকে যায়। এ সময় তাদের কিছুটা হতবিহ্বল মনে হচ্ছিল।
শিশু দুটি আসার কিছুক্ষণ পর আদালতে হাজির হন তাদের বাবা শরীফ ইমরান। তিনি সাংবাদিকদের জানান, তিনি ও তাঁর স্ত্রী এরিকো আজ সকালে উইমেন সাপোর্ট সেন্টারে গিয়েছিলেন। এরিকোও আদালতে হাজির হয়েছেন।
এর আগে গত ২৩ আগস্ট দুই জাপানি শিশুকে আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত তেজগাঁওয়ের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে উন্নত পরিবেশে রাখার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এ সময়ে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত জাপানি মা ও বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বাংলাদেশি বাবা শিশুদের সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ দেওয়া হয়। আদালত ওইদিন উভয়পক্ষের আইনজীবীদের ৩১ আগস্টের মধ্যে বিষয়টি সমাধান করতে ভূমিকা রাখতে বলেছিলেন। তবে গতকাল সোমবার রাত পর্যন্ত আইনজীবীদের উপস্থিতিতে কয়েক দফা বৈঠক করেও জাপানি মা ও বাংলাদেশি বাবা কোনো সমঝোতায় আসতে পারেননি।
২৩ আগস্ট সকালে আদালতের আদেশে হাজির করার নির্ধারিত দিনের আগেই দুই জাপানি শিশুকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে নেওয়ার ঘটনাটি হাইকোর্টের নজরে আনেন তাদের বাবার আইনজীবী ফাওজিয়া করিম। তার আগে ১০ ও ১১ বছর বয়সী মেয়ে দুটিকে উদ্ধার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
গত ১৯ আগস্ট জাপানি দুই শিশু জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনা এবং তাদের বাবা শরীফ ইমরানকে এক মাসের জন্য দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে দুই শিশুকে আগামী ৩১ আগস্ট আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেন। সঙ্গে তাদের বাবা ও ফুফুকে নিয়ে আসতে বলা হয়। রাজধানীর গুলশান ও আদাবর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) এই নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।
১৯ আগস্ট সকালে দুই কন্যা সন্তানকে আদালতে হাজির করার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে হেবিয়ার্স রিট করেন জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকো (৪৬)। রিটে দুই মেয়েকে নিজের জিম্মায় নেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে আবেদন করেন ওই নারী।
আইনজীবী শিশির মনির জানান, ২০০৮ সালে জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকো ও বাংলাদেশি-আমেরিকান নাগরিক শরীফ ইমরান (৫৮) জাপানি আইন অনুযায়ী বিয়ে সেরে টোকিওতে বসবাস শুরু করেন। তাদের ১২ বছরের সংসারে তিন মেয়ে জন্ম নেয়। তারা তিনজনই টোকিওর চফো সিটিতে অবস্থিত আমেরিকান স্কুল ইন জাপানের শিক্ষার্থী ছিলেন।
২০২১ সালের ১৮ জানুয়ারি শরীফ ইমরান এরিকোর সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। ২১ জানুয়ারি ইমরান আমেরিকান স্কুল ইন জাপান কর্তৃপক্ষের কাছে তার মেয়ে জেসমিন মালিকাকে নিয়ে যাওয়ার আবেদন করেন। কিন্তু এতে এরিকোর সম্মতি না থাকায় স্কুল কর্তৃপক্ষ ইমরানের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। এরপর একদিন জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনা স্কুল বাসে বাড়ি ফেরার পথে বাসস্টপ থেকে ইমরান তাদের অন্য একটি ভাড়া বাসায় নিয়ে যান।
গত ২৫ জানুয়ারি শরীফ ইমরান তার আইনজীবীর মাধ্যমে এরিকোর কাছ থেকে মেয়েদের পাসপোর্ট হস্তান্তরের আবেদন করেন। কিন্তু এরিকো ওই আবেদন প্রত্যাখ্যান করে মেয়েদের নিজ জিম্মায় পেতে আদেশ চেয়ে গত ২৮ জানুয়ারি টোকিওর পারিবারিক আদালতে মামলা করেন। আদালত ৭, ১১ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি মেয়েদের সঙ্গে এরিকোর সাক্ষাতের অনুমতি দিয়ে আদেশ দেন। কিন্তু ইমরান আদালতের আদেশ ভঙ্গ করে মাত্র একবার মায়ের সঙ্গে দুই মেয়েকে সাক্ষাতের সুযোগ দেন। এরপর গত ৯ ফেব্রুয়ারি ‘মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে’ ইমরান তার মেয়েদের জন্য নতুন পাসপোর্ট গ্রহণ করেন। ২১ ফেব্রুয়ারি জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনাকে নিয়ে তিনি দুবাই হয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন।
গত ৩১ মে টোকিওর পারিবারিক আদালত জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনাকে তাদের মা এরিকোর জিম্মায় হস্তান্তরের আদেশ দেন। তবে দুই মেয়ে বাংলাদেশে থাকায় বিষয়টি নিয়ে তিনি বাংলাদেশের একজন মানবাধিকার কর্মী ও আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করেন। এরপর গত ১৮ জুলাই তিনি শ্রীলঙ্কা হয়ে বাংলাদেশে আসেন।
বাংলাদেশে এসে এরিকো করোনা পরীক্ষা করালে তার রিপোর্ট নেগেটিভ থাকার পরেও ইমরান ওই রিপোর্ট অবিশ্বাস করে সন্তানদের সঙ্গে তাকে সাক্ষাতে অস্বীকৃতি জানান। গত ২৭ জুলাই এরিকোর মোবাইল সংযোগ বন্ধ করে চোখ বাঁধা অবস্থায় মেয়েদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ দেওয়া হয়। এ অবস্থায় দুই মেয়েকে নিজের জিম্মায় পেতে হাইকোর্টে রিট করেন জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকো।