জাপার চেয়ারম্যান হতে আগ্রহী নন রওশন এরশাদ : জি এম কাদের
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জি এম) কাদের বলেছেন, রওশন এরশাদকে চেয়ারম্যান করে জাতীয় পার্টির যে নতুন কমিটির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে তাতে বিরোধীদলীয় নেতার সায় নেই। রওশন পার্টির চেয়ারম্যান হতে আগ্রহী নন।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে বিরোধী দলীয় উপনেতা জি এম কাদের মোহাম্মদপুর জাকির হোসেন রোড মাঠে সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দুঃস্থদের মাঝে খাদ্যপণ্য বিতরণ উদ্বোধন শেষে এ কথা বলেন।
গতকাল বুধবার বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদকে আজীবন চেয়ারম্যান ঘোষণা করে জাতীয় পার্টির পাল্টা কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটিতে এরশাদের সাবেক স্ত্রী বিদিশা এরশাদ, ছেলে সাদ এরশাদকে কো-চেয়ারম্যান ও কাজী মামুনুর রশীদকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ঘোষণা করা হয়েছে। বারিধারার প্রেসিডেন্ট পার্কে সাবেক রাষ্ট্রপতির দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে ছেলে এরিক এরশাদ এই ঘোষণা দেন।
এর একদিন বাদে আজ গণমাধ্যমকর্মীদের এক প্রশ্নের জবাবে জাতীয় পার্টি চেয়াম্যান বলেন, ‘সুস্থ ও স্বাভাবিক নয়- এমন এক শিশুর ঘোষণায় একটি রাজনৈতিক দল সৃষ্টি হতে পারে না। একটি রাজনৈতিক দল গঠন করতে আইন ও বিভিন্ন নীতিমালা রয়েছে। এ ছাড়া জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক বেগম রওশান এরশাদের সঙ্গে কথা না বলেই তাঁকে চেয়ারম্যান ঘোষণা, এমন সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশ ও প্রচার করা কতটা যুক্তিযুক্ত হয়েছে তা বিবেচনা করা উচিত ছিলো। নিউজ প্রকাশ ও প্রচারের আগে জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদের অবশ্যই কথা বলা উচিত ছিলো গণমাধ্যমের।’
জি এম কাদের বলেন, ‘গতকাল সন্ধ্যায় জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক বেগম রওশন এরশাদের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে। তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন, চেয়ারম্যান হওয়ার কোনো ইচ্ছেই নেই তাঁর। দক্ষতার সঙ্গে জাতীয় পার্টিকে শক্তিশালী করতে বিভিন্ন উদ্যোগের প্রশংসাও করেছেন রওশন এরশাদ।’
‘দরিদ্র পরিবারকে মাসে ১০ হাজার টাকা দেওয়া হোক’
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান আরও বলেন, এক বছর আগেই আমরা বলেছিলাম লকডাউন দেওয়ার আগে মানুষের খাবার, ওষুধ এবং জরুরি নিত্যপণ্য নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া কখনোই লকডাউন সফল হবে না। লকডাউন সফল হয়নি, করোনার সংক্রমণ বেড়েছে, বেড়েছে মৃত্যুর হারও।
‘বাজেট তৈরি হয় দেশের জনগণের ট্যাক্সের টাকায়। এ টাকার মালিক দেশের জনগণ। তাই সেখান থেকে প্রতি মাসে দরিদ্র পরিবার প্রতি অন্তত ১০ হাজার টাকা দিলে দেশের মানুষ বাঁচতে পারবে। লকডাউনও সফল হবে। মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়নের চেয়ে মানুষের জীবন বাঁচানো জরুরি। করোনায় কর্মহীন পরিবারগুলো মারাত্মক অর্থ সংকটে পড়েছে।’
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক মো. শফিকুল ইসলাম সেন্টুর অর্থায়নে এবং ঢাকা মহানগর উত্তর জাতীয় পার্টির ব্যবস্থাপনায় কয়েক হাজার মানুষকে মাসব্যাপী খাদ্যপণ্য বিতরণ করা হবে।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান বলেন, সারা বিশ্ব যখন করোনার টিকা দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরছে তখনো আমরা জানি না কখন দেশের সবাই টিকা পাবেন। দেশের প্রতিটি মানুষকে টিকা দিতে হবে। যেভাবে টিকা দেওয়ার কথা সরকারিভাবে বলা হচ্ছে, তাতে পাঁচ থেকে ছয় বছর লেগে যেতে পারে। আবার ১০ বছরও লেগে যেতে পারে। তাতে পরিস্থিতি মারাত্মক হয়ে যাবে। সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে আর মাস্ক ব্যবহার করেই করোনা মোকাবেলা সম্ভব হবে না। প্রতিদিন সরকারের পক্ষ থেকে করোনা টিকার ব্যাপারে আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু সরকারি আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে সাধারণ মানুষ।
‘জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালেও আইসিইউ তৈরি করতে পরামর্শ দিয়েছিলাম সরকারকে। কিছুই করা হয়নি, সরকারি হাসপাতালে যে আইসিইউ আছে তার মধ্যে অনেকগুলোই অকেজো থাকে। কিন্তু বেসরকারি পর্যায়ে রাজধানীতে বেশ কিছু আইসিইউ আছে যেগুলো অত্যন্ত ব্যয়বহুল। সাধারণ মানুষের পক্ষে বেসরকারি হাসপাতালে করোনার চিকিৎসা নেওয়া কখনোই সম্ভব নয়।’
ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক মো. শফিকুল ইসলাম সেন্টুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা আমানত হোসেন আমানত, ভাইস চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আলম পাঠান, সাংগঠনিক সম্পাদক মাখন সরকার, যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক জাকির হোসেন মৃধা, যুগ্ম ধর্মবিষয়ক সম্পাদক হাফেজ ক্বারী ইসারুহুল্লাহ আসিফ, ঢাকা মহানগর উত্তরের সহসভাপতি মো. লিপটন, রফিকুল ইসলাম সেলিম, আলহাজ মকবুল আহমেদ, যুগ্ম সম্পাদক আব্দুর রউফ রাজু ভুঁইয়া, প্রচার সম্পাদক এম এ হাশেম, শেরেবাংলা থানার সাধারণ সম্পাদক শিবলী, মহিলাবিষয়ক সম্পাদিকা লায়ন সাবরিনা চৌধুরী, জাতীয় তরুণ পার্টির সাধারণ সম্পাদক মো. মামুন, জাতীয় ছাত্র সমাজের সদস্য সচিব মো. মোস্তফা সুমন, ছাত্র সমাজের সদস্য মো. শহিদ ও সাগর প্রমুখ।