জামাইয়ের চুরি করা স্বর্ণ বিক্রি করতেন শ্বশুর!
জুলহাস স্বর্ণালংকার চুরি করে শ্বশুর আলাউদ্দিনের হাতে তুলে দিতেন। শ্বশুর সেগুলো স্বর্ণের দোকানে বিক্রি করতেন। স্বর্ণ চুরিতে জুলহাসের সঙ্গে তার ভাইও থাকত। গত ১৫ বছরে তারা দুই শতাধিক চুরি করেছেন।
এমন অভিযোগে ঢাকার সাভার ও চাঁদপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে চুরির অভিযোগে জুলহাস (৩১) ও তার ভাই বিল্লাল হোসেনকে (২৬) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ শুক্রবার রাতে মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মহসীন এনটিভি অনলাইনকে এ তথ্য জানান।
পুলিশের দাবি, জুলহাসের শ্বশুর আলাউদ্দিন চাঁদপুরের মতলবে থাকেন। জামাইয়ের চুরি করা স্বর্ণ শ্বশুর স্বর্ণের দোকানে বিক্রি করতেন। কিন্তু, পুলিশ তাকে ধরতে পারেনি। অর্থাৎ, তিনি পলাতক।
মোহাম্মদ মহসীন বলেন, ‘একই অভিযোগের তদন্ত করতে গিয়ে চোরাই স্বর্ণ রাখার অভিযোগে লিটন বর্মণ নামের এক স্বর্ণ দোকানদারকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনজনকেই গতকাল বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তার করা হয়।’
অভিযানে এক জোড়া হাতের চুরি, এক জোড়া কানের দুল, একটি চেইন, গলিত স্বর্ণসহ আট ভরি ১০ আনা স্বর্ণ, চুরির কাজে ব্যবহৃত চাবি, রেঞ্জসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।
মোহাম্মদ মহসীন জানান, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি মিরপুর মডেল থানার আহাম্মেদনগরে বাসিন্দা সিরাজুম মুনীরার বাসার তালা ভেঙে আনুমানিক ২৪ ভরি স্বর্ণ ও নগদ ৬০ হাজার টাকা চুরি করা হয়। পরে সিসিটিভি দেখে জুলহাস ও বিল্লালকে শনাক্ত করা হয়। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গতকাল সাভার গেণ্ডা বাসস্টেশন থেকে বিল্লাল হোসেন এবং তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে চাঁদপুরের মতলব থেকে জুলহাসকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মিরপুর থানা-পুলিশ সূত্র জানায়, ভোলার লালমোহন উপজেলায় জুলহাস ও বিল্লালের বাড়ি। ২০০৮ সাল থেকে তারা চুরি করছেন। গত ১৫ বছরে দুই ভাই দুই শতাধিক চুরি করেছেন। তাঁরা শুধু স্বর্ণ ও নগদ টাকা চুরি করেন। চুরি করতে গিয়ে ১০ বারের মতো ধরাও পড়েছেন তাঁরা। তাঁদের বিরুদ্ধে তিনটি চুরির মামলা রয়েছে।
পুলিশ বলছে, সাধারণত সব চোর রাতের বেলা চুরি করলেও ব্যতিক্রম এই দুই সহোদর। তাঁরা চুরি করেন দিনের বেলা। দিনের বেলা সাধারণত যে সময়ে বাচ্চারা স্কুলে থাকে, সে সময়েই তাঁরা চুরির জন্য বেছে নেন। এ সময় ঘরের পুরুষ সদস্যরা অফিসে থাকেন। আর নারী সদস্যরা বাচ্চার স্কুলে থাকেন। ফলে বাসা ফাঁকা থাকে। ঘুরে ঘুরে এমন বাসার সন্ধান করেন বিল্লাল। পরে জুলহাসসহ এসে সেই বাসায় চুরি করেন।
মোহাম্মদ মহসীন বলেন, ‘মাত্র ১১ বছর বয়স থেকেই চুরি শুরু করেন বিল্লাল। তখনো শুধু স্বর্ণ আর টাকা চুরি করতেন তিনি। পরে তাঁর কাছ থেকেই চুরি শেখে জুলহাস। দুই ভাই মিলে চুরি করলে বিল্লাল সব সময়ই বাসা টার্গেট করেন এবং পাহারায় থাকেন। আর চুরি করেন জুলহাস।’
মিরপুর থানা-পুলিশ জানায়, মিরপুরের আহাম্মেদনগরের ওই বাসা থেকে আধা ঘণ্টায় ২৪ লাখ টাকার মালামাল চুরি করেন তারা। ঘটনার দিন ওই বাসার তৃতীয় তলায় ওঠেন। এরপর দরজার তালা ভেঙে ঘরের ভেতর ঢোকেন। কক্ষের ভেতরে গিয়ে প্রতিটি আলমারির তালা ভাঙেন, প্রতিটি ওয়ার্ডরোবের লক খোলেন, ২৪ ভরি স্বর্ণ ও নগদ ৬০ হাজার টাকা চুরি করেন।
মোহাম্মদ মহসীন বলেন, ‘প্রতিবার চুরি করার পরপরই শ্বশুরবাড়ি চলে যান জুলহাস। জামাই জুলহাস স্বর্ণ চুরি করে তা শ্বশুরের হাতে তুলে দেন। আর শ্বশুর সেই স্বর্ণ বিক্রি করেন। মিরপুর থেকে চুরি করা স্বর্ণও জুলহাস তার শ্বশুরের হাতেই তুলে দেন। শ্বশুর সেই স্বর্ণ চাঁদপুর উত্তর মতলবের ছেঙ্গারচর বাজারের একটি স্বর্ণের দোকানে বিক্রি করে দেন।’