জাল সনদ যাচাই করলেও দেখাতো ‘আসল’, গ্রেপ্তার ৪
স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পরীক্ষার নম্বরপত্র ও সনদপত্র জালিয়াতির অভিযোগে দুজন প্রকৌশলী, বন্ধ হওয়া একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক এবং একজন গ্রাফিক ডিজাইনারকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিএমপি ডিবি) লালবাগ বিভাগের একটি দল।
গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ডিবি লালবাগ বিভাগের লালবাগ জোনাল টিম রাজধানীর রামপুরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে। শুক্রবার রাতে ডিএমপি ডিবির লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. মশিউর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
পুলিশের ভাষ্য, একটি ক্ষুদ্র, জীর্ণ কক্ষে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষা বোর্ডের নম্বরপত্র ও সনদপত্র দেওয়া হতো। এসব সনদ জাল হলেও তা অনলাইনেও যাচাই করে ‘আসল’ সনদ হিসেবে পাওয়া যেতো।
আটক ব্যক্তিরা হলেন-জিয়াউর রহমান, তার স্ত্রী নুরুন্নাহার মিতু, ডিপ্লোমা প্রকৌশলী ইয়াসিন আলী এবং বন্ধ হয়ে যাওয়া দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক বুলবুল আহমেদ বিপু। অভিযানের সময় তাদের কাছ থেকে নম্বরপত্র, সনদপত্র, খাম ও নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়।
মশিউর রহমান বলেন, অভিযানে প্রকৌশলী জিয়াউর রহমান এবং তার স্ত্রী নুরুন্নাহার মিতুকে আটক করা হয়। এ সময়ে তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় বিভিন্ন শিক্ষা পর্যায়ের অনেক নম্বরপত্র, সনদপত্র, খাম ও নগদ টাকা।
ডিবির ভাষ্যমতে, এই চক্রটি অনেকদিন ধরে বাংলাদেশের বিভিন্ন চলমান এবং বন্ধ হয়ে যাওয়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর; বিভিন্ন বোর্ডের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার নম্বরপত্র ও সনদপত্র কেনা-বেচা করে আসছিল। নীরবে হাতে হাতে বিপুল টাকার বিনিময়ে এ কাজ করছিল তারা।
মশিউর রহমান বলেন, এই সার্টিফিকেট ও মার্কশিটগুলো বোর্ড অথবা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরবরাহ করা মূল কাগজ দিয়েই তৈরি করা হয় এবং সেগুলোকে কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে অনলাইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয় যাতে অনলাইন ভেরিফিকেশনে সত্যতা পাওয়া যায়। প্রাপ্ত গোয়েন্দা তথ্যকে অনেকদিন ধরে যাচাই-বাছাই করে প্রযুক্তি সচেতন এই অপরাধীদেরকে আটক করা হয়।
গোয়েন্দা সূত্রটি বলছে, আটক দম্পতির দেওয়া তথ্য অনুসারে লালবাগ থানার বড়ঘাট মসজিদ এলাকার কাশ্মিরি গলির একটি বাসাতে শুক্রবার সকাল ৭টার দিকে একটি অভিযান চালিয়ে ডিপ্লোমা প্রকৌশলী ইয়াসিন আলী এবং বন্ধ হয়ে যাওয়া দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক পরিচয় দেওয়া বুলবুল আহমেদ বিপুকে আটক করা হয়।
মশিউর রহমান বলেন, লালবাগের দুই রুমের বাসাটিতে দামি ল্যাপটপ ও ডেস্কটপ কম্পিউটার, প্রিন্টার, স্ক্যানার, মেশিন বসিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংগ্রহ করা সাদা নম্বরপত্র, সনদপত্র, প্রত্যয়নপত্র ইত্যাদি ছাপানো হতো। এ ছাড়া ডিপ্লোমা প্রকৌশলী ইয়াসিন আলী বিভিন্ন ছাপাখানা থেকে সব রকমের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য সম্বলিত অতি সুক্ষ জাল সনদগুলোর কাগজ ছাপিয়ে এনে নিজেও বিভিন্ন গ্রাহকদেরকে জাল নম্বরপত্র, সনদপত্র এবং প্রত্যয়নপত্র ইত্যাদি সরবরাহ করতো।
মশিউর রহমান বলেন, এই জালিয়াতরা দুই ধরনের জালিয়াতি করতেন। এর মধ্যে একটি হচ্ছে কোনো রকমের তদন্ত হবে না, এ রকম সনদপত্র, নম্বরপত্র ও প্রত্যয়নপত্র সরবরাহ করা হতো। আর দেশে-বিদেশে অনলাইনে তদন্ত করা হবে- এমন নম্বরপত্র ও সনদপত্র ইত্যাদি সরবরাহ করা হতো।
এ ছাড়া কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ও বোর্ডের বেশ কিছু দায়িত্বশীল ব্যক্তির নামপরিচয় পাওয়া গেছে, যারা অনলাইন ভেরিফিকেশন করে সার্টিফিকেট বিক্রির সঙ্গে সরাসরি জড়িত। এর মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। গ্রেপ্তার হওয়াদের মধ্যে নুরুন্নাহার মিতু ছাড়া অন্য সবার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলার তথ্য পাওয়া গেছে।