ঝিনাইদহে করোনায় মৃত ব্যক্তিকে রেখে পালিয়েছে স্বজনরা, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের দাফন
ঝিনাইদহে মৃত্যুর সারি দিন দিন দীর্ঘতর হচ্ছে। শৈলকূপা উপজেলার ফলহরি ইউনিয়নের কাজীপাড়ায় ১২ দিনের ব্যবধানে এক বাড়িতে একই পরিবারের তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। ফলে করোনার ভয়ে ওই এলাকার মানুষ আতংকিত হয়ে পড়েছে। আজ ঘরে লাশ রেখে বাড়িঘর ছেড়ে চলে গেছে একটি পরিবার।
স্থানীয় সূত্রগুলো থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, গত ২০ জুন মৃত্যুবরণ করে ওই গ্রামের খলিলুর রহমান হিরনের ১৪ বছর বয়সের ছেলে জিহাদ। এরপর গত ২৪ জুন জিহাদের মা রোকসানা বেগম (৪৮) এবং আজ শুক্রবার ভোর ৫টার দিকে মারা যান জিহাদের নানা মাহবুব হোসেন (৬৫)।
মাহবুব হোসেনের মরদেহ ঘরে খাটের ওপর পড়ে থাকে দীর্ঘ সময়। মরদেহ ফেলে রেখে আতংকিত পরিবারের সবাই বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়। গ্রামের লোকেরাও লাশ দাফন-কাফনের জন্য এগিয়ে আসেনি।
এ বিষয়ে ফলহরি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জামিনুর রহমান বিপুল বলেন, ‘দুটি পরিবার পাশাপাশি বসবাস করে। মৃত মাহবুব হোসেনের অ্যান্টিজেন টেস্টের রিপোর্টে করোনা পজিটিভ আসে। ওই পরিবারে লোক সংখ্যা কমপক্ষে ২০ জন। ধারণা করা হচ্ছে ওই পরিবারে আরও অনেকেই আক্রান্ত হয়েছে। পরে ইসলামি ফাউন্ডেশনের দাফন কমিটির সদস্যরা জুমার নামাজ শেষে এসে গ্রামের কবরস্থানে তার লাশ দাফন করেছে।
এদিকে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় আরও তিনজনের মৃত্যু এবং ২৯৪টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৩২ জনের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তের হার ৪৪ দশমিক ৮৯ শতাংশ।
আজ শুক্রবার জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পরিসংখ্যানবিদ জাহাঙ্গীর হোসেন এসব তথ্য জানিয়েছেন।
এদিকে চলমান করোনা পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছেন ঝিনাইদহ ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (তত্ত্বাবধায়ক) ডা. হারুন অর রশিদ। তিনি বলেন, ‘২৪ ঘণ্টায় গড়ে ৫২ জন করে করোনায় আক্রান্ত এবং উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। পরিস্থিতি সামলাতে অক্সিজেন দেওয়া লাগছে না এমন রোগীদের প্রতিদিন গড়ে ৪০ জনকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালে অতি ঝুঁকিপূর্ণ রোগী ছাড়া কাউকে রাখা সম্ভব হচ্ছে না।’
এ কর্মকর্তা আরও জানান, দু-একদিনের মধ্যে কোভিড ইউনিটের জন্য আরও ৫০টি শয্যা বাড়ানো হবে। এতে সর্বোচ্চ ১৫০ জন রোগী ভর্তি করা যাবে।’
এর বেশি রোগী হলে চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি।
ঝিনাইদহ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক মো. আব্দুল হামিদ খান জানান, আজ শুক্রবার পর্যন্ত দাফন কমিটির সদস্যরা করোনায় আক্রান্ত হয়ে এবং উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণ করা ১০৮ জনের লাশ দাফন করেছেন।