টিকা নিতে গিয়ে ‘শ্বশুরবাড়ির আগুনে’ পোড়া পারভিন বাঁচলেন না
নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলায় গত শনিবার পারভিন বেগম (৩০) নামের এক গৃহবধূকে টিকা দেওয়ার কথা বলে শরীরে আগুন দেওয়ার অভিযোগ ওঠে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে। এ ঘটনার পর আজ সোমবার ভোরে রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। রায়পুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মোস্তফা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
অভিযোগ ওঠে, শনিবার দুপুরে টিকা দেওয়ার কথা বলে প্রবাসীর স্ত্রী পারভিন বেগমকে বাড়ি থেকে ডেকে আনেন তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকজন। পরে রাতে রায়পুরা উপজেলার উত্তরবাখর নগর ইউনিয়নের লোচনপুর এলাকায় একটি বাঁশঝাড়ে নিয়ে পেট্রোল ঢেলে তাঁর শরীরে আগুন লাগিয়ে দেন দেবরসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন।
পুলিশ ও নিহত গৃহবধূর পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, রায়পুরার বাঁশগাড়ী ইউনিয়নের সোবানপুর গ্রামের দানা মিয়ার মেয়ে পারভিন বেগমের সঙ্গে মরজাল এলাকার প্রবাসী জাকির হোসেনের বিয়ে হয়। তাঁদের দাম্পত্য জীবনে ১০ বছর বয়সী একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। পারভিন বেগমের স্বামী প্রবাসে থাকার কারণে প্রায় সময়ই শ্বশুরবাড়ির লোকজন পারভিন ও তাঁর সন্তানের ওপর কারণে-অকারণে নির্যাতন করতেন।
অভিযোগ পাওয়া যায়, বছরখানেক আগে পারভিন বেগমের দেবর আলী হোসেন পারভিনের সন্তানের পায়ে দা দিয়ে কোপ দিয়েছিলেন। নাতনির পায়ে কোপ দেওয়ার ঘটনায় পারভিনের বাবা দানা মিয়া থানায় একটি মামলাও দায়ের করেছিলেন। এর পর থেকে শ্বশুরবাড়ির লোকজন মামলা তুলে নিতে পারভিনের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন। এতে রাজি না হওয়ায় নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দেন তাঁরা। ফলে তিনি বাবারবাড়ি সোবানপুরে গিয়ে উঠতে বাধ্য হন।
পারভিনের পরিবার বলছে, শনিবার টিকা দেওয়ার নাম করে পারভিনকে তাঁর বাবার বাড়ি থেকে শ্বশুরবাড়িতে ডেকে নিয়ে আসা হয়। পরে ওইদিন বিকেলে দেবর আলী হোসেন, ননদের ছেলে শাহরিয়ার, ননদ তাসলিমা বেগম ও জা রহিমা বেগমের সঙ্গে শ্বশুরবাড়ি থেকে সিএনজিতে করে টিকা দেওয়ার উদ্দেশে বের হন পারভিন। সিনজিতে ওঠার কিছুক্ষণ পরই তাঁর চোখ-মুখ বেঁধে ফেলা হয়। এরপর রাতে তাঁর দেবর কোনো এক নির্জন স্থানে নিয়ে গিয়ে সিএনজি থেকে নামিয়ে তাঁর শ্লীলতাহানি করেন। পরে আবার সিএনজিতে উঠিয়ে এদিক-সেদিক ঘুরতে থাকেন। পরে রায়পুরা-বারৈচা সড়কের পাশে লোচনপুর এলাকার একটি বাঁশঝাড়ের পাশে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে একপর্যায়ে তাঁর দেবর তরল জাতীয় কিছু পারভিনের শরীরে ঢেলে দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন।
পরে পারভিনের আর্তচিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে তাঁকে উদ্ধার করে রায়পুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। অবস্থার অবনতি হলে আশঙ্কাজনক অবস্থায় দিবাগত রাত ৩টার দিকে তাঁকে রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ সোমবার ভোরে তাঁর মৃত্যু হয়।
এরই মধ্যে এ ঘটনায় দগ্ধ পারভিনের ভাই আকরাম হোসেন বাদী হয়ে আলী হোসেনসহ চার জনকে আসামি করে রায়পুরা থানায় মামলা করেছেন। পুলিশ মামলার আসামি আলী হোসেন ও ননদের ছেলে শাহরিয়ারকে গ্রেপ্তার করেছে।
রায়পুরা থানার ওসি গোলাম মোস্তফা জানান, চিকিৎসাধীন অবস্থায় দগ্ধ গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। আগের মামলাটি এখন হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হবে। এর মধ্যেই গ্রেপ্তার দুজনকে আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। আজ আদালতে রিমান্ড শুনানি হবে।