ঢাবি ছাত্র পরিচয়ে ৩ বছর ক্লাস, পরীক্ষা দিতে এসে ধরা
নাম তার সাজিদুল কবির। নিজেকে পরিচয় দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী বলে। বিভাগের ক্লাস-পরীক্ষাতেও তিনি নিয়মিত। শুধু তাই নয়, বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক বিভিন্ন সংগঠন থেকেও পেয়েছেন নানা সংবর্ধনা। ক্যাম্পাসজুড়ে রয়েছে তার অনেক বন্ধু-বান্ধবও। বন্ধু-বান্ধব সবাই তাকে ঢাবি ছাত্র হিসেবেই চিনেন।
কিন্তু বিগত তিন বছর ধরে ক্যাম্পাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরিচয়ে অবাধ চলাচল থাকলেও অবশেষে জানা গেছে তার এ সবকিছুই ছিল প্রতারণা ও মিথ্যা নাটক মাত্র। তিনি আদতে ঢাবিরই কোন শিক্ষার্থী নন বলে এনটিভি অনলাইনকে নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ক্লাসটেস্ট পরীক্ষা চলাকালে আজ বুধবার অন্য এক শিক্ষার্থীর নামে পরীক্ষা দেওয়ার সময় পরীক্ষকের সন্দেহ হলে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে প্রক্টর অফিসে হস্তান্তর করা হয়। এরপর প্রক্টর অফিসে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নন বলে স্বীকার করলে আরও বিস্তারিত তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তাকে শাহবাগ থানায় প্রেরণ করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৮-১৯ সেশনে ঢাবির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হওয়া এক শিক্ষার্থী মেডিকেলে চলে গেলে তার নাম-রোল ব্যবহার করে সাজিদ ক্লাস ও ক্লাসটেস্ট পরীক্ষায় অংশ নিতেন। তিনি নিজেকে ২০১৮-১৯ সেশনের ও নবাব স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের আবাসিক বলে পরিচয় দিতেন। তার ফেসবুক আইডিতেও একই পরিচয় দেওয়া। তার বাড়ি নারায়ণগঞ্জ জেলায়।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ও নিরাপত্তা মঞ্চের সহ-প্রতিষ্ঠাতা আরাফাত চৌধুরী বলেন, ‘রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র পরিচয় দেওয়া সাজিদুল কবিরকে প্রক্টর অফিসে জিজ্ঞাসাবাদের পর সে স্বীকার করেছে সে ঢাকা বিশ্ববদ্যালয়ের ছাত্র নয়। অছাত্র হয়েও বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে ক্লাস করে আসছিল। সে নিজেকে ঢাবি ছাত্র দাবি করতো। তাকে প্রক্টর অফিসে জিজ্ঞাসাবাদের সময়ে পুরোটা সময়জুড়ে মাথা নিচু করে চুপ ও নির্লিপ্ত ছিল। প্রথমে সে ঢাবি ছাত্র দাবি করলেও পরবর্তীতে সে ছাত্রত্বের কোন প্রমাণ দেখাতে পারেনি এবং দেখানোর চেষ্টাও করেনি। সে ঢাকা বিশ্ববদ্যালয়ের ২০১৮-১৯ সেশনের ভর্তি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছিল। প্রথমে বার বার তার অভিভাবক তার ছাত্রত্বের প্রমাণ নিয়ে আসছে বললেও পরে সাংবাদিকদের সরব উপস্থিতি ও বিভিন্ন প্রশ্নের তোপের মুখে তার অছাত্রের বিষয়টি স্বীকার করে এবং তারই ধারাবাহিকতায় প্রক্টর স্যারের কাছেও অফিসিয়ালি তা কনফেস করে মুচলেকা দেয়।’
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, ‘সাজিদুল কবির নামে একজনকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তরফ থেকে অভিযোগের ভিত্তিতে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে যে অছাত্র এবং বহিরাগত তা স্বীকার করে। এরপর কীজন্য এ কাজ করেছে তা জানার জন্য এবং আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তাকে শাহবাগ থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।’
শাহবাগ থানার ওসি মওদুদ হাওলাদার এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘সাজিদুল কবির নামে একজনকে থানায় আনা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’