দিনাজপুরে হাঁড়িভাঙ্গা আমের দামে ধস, লোকসানে ব্যবসায়ীরা
দিনাজপুরে করোনার কারণে স্থানীয় বাজারে পানির দামে বিক্রি হচ্ছে হাঁড়িভাঙ্গা আম। দিনাজপুরে গত বছরের চেয়ে কেজি প্রতি ৫০ টাকা লোকসান গুনছে আম ব্যবসায়ীরা। দিনাজপুরের সদর, বোচাগঞ্জ, নবাবগঞ্জ, বীরগঞ্জসহ ১৩ উপজেলায় এই চিত্র দেখা গেছে।
আম চাষিরা দীর্ঘদিন ধরে বাগান পরিচর্যা করে যথাসময়ে সেচসহ ব্যাপক পরিচর্যা করে। ফলে এ বছর বাগানে গত বছরের তুলনায় আম উৎপাদনও হয় বেশি।
বর্তমানে কোভিড-১৯ এর কারণে খোদ ঢাকা শহরসহ পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতে আমের বাজারে পরিবহনসহ ক্রয় বিক্রয়ে মূল্য অনেক কম। গত বছরের এ মৌসুমে হাঁড়িভাঙ্গা আম প্রতিকেজি ৬৫ থেকে ৭৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল। বর্তমানে স্থানীয় বাজারে ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে আম বিক্রি করতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।
নবাবগঞ্জ উপজেলার ১০০ বিঘা জমিতে থাকা আমচাষি মো. রফিকুল ইসলাম জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর আম ক্রেতাদের সংখ্যা অনেকাংশে কম। যে বাগান ৯০ লাখ টাকায় বিক্রি করেছিলাম, এ বছর সে বাগান ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে না।
উপজেলার ২ নম্বর বিনোদনগর ইউনিয়নের আম ব্যবসায়ী মো. ছানাউল্লাহ বলেন, ‘লাভের আশায় অনেক কষ্টে ঋণ করে পয়সার যোগান দিয়ে বেশ কিছু আমবাগান কিনেছি। স্থানীয় বাজারে আম বিক্রি করে দেওয়ায় একদিকে যেমন ক্রেতা কম অন্যদিকে চাহিদাও কম। আমের ফলন ভালো হওয়া সত্বেও এ বছর বাজারে ধস নামার কারণে ও বাংলাদেশে কোভিড-১৯ মহামারি বিস্তার রোধে লকডাউনের ফলে আম ক্রেতা ও পরিবহন ব্যবস্থা ভালো না থাকায় মাথায় হাত পড়েছে। ব্যাপক ক্ষতির অংক গুনতে হচ্ছে আমাদের।’
একটি বেসরকারি জরিপে জানা গেছে, কৃষি ফসলি দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার উঁচু শ্রেণির জমিতে প্রায় ৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে হাঁড়িভাঙ্গা, আম্রপালি, বোম্বাই, মিশ্রিভোগসহ বিভিন্ন প্রজাতির আম চাষ হয়েছে। বাংলাদেশের তৃতীয় ফল সমবায় সমিতি লিমিটেড রয়েছে নবাবগঞ্জ উপজেলার ৮ নম্বর মাহমুদপুরে রয়েছে।
ওই সমিতির সভাপতি মো. জিল্লুর রহমান জানান, এর আগে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ আম গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে বিজ্ঞানীদের অংশগ্রহণে এ অঞ্চলে উন্নতমানের আম বিদেশে রপ্তানি করতে বিজ্ঞানীদের পরামর্শ অনুযায়ী শতশত বাগানে ব্যাগিং পদ্ধতি করা হয়েছিল। অনেক আশা বুকে নিয়েও ওই আমগুলো রপ্তানি করা সম্ভব হয়নি। সে অবস্থার অবসান না হতেই আবার চলতি মৌসুমে কোভিড-১৯ এর কারণে আম ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
সরকারিভাবে ভর্তুকির দাবি করেন সমিতির এই নেতা।
করোনা পরিস্থিতিতে যানবাহনের অভাবে পাইকারি ক্রেতার সংখ্যা তুলনামূলক কম থাকায় আম বাজারজাতকরণ নিয়েও যথেষ্ট চিন্তিত তারা। মে মাসের শেষে আম পাড়ার মৌসুম শুরু হওয়ার আগে আমের বাজারজাতকরণে সরকারের গৃহীত নানা পদক্ষেপে চাষিরা আশাবাদী হয়ে উঠছিলেন। সে সময় বাজারে আমের দাম চাষিদের মনে কিছুটা স্বস্তি এনে দিয়েছিল। কিন্তু সারা দেশে কঠোর লকডাউন ঘোষণায় নবাবগঞ্জে আমের বাজারে নতুন সংকট তৈরি করেছে। ব্যাপারীরা আম কেনা বন্ধ করে দেওয়ায় আমাচাষিরা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।
আম বিক্রেতা ও আমচাষিদের মতে, কঠোর লকডাউন ঘোষণার কারণে বাজারে ক্রেতা নেই। আর সে কারণে আম বিক্রি হচ্ছে না। পাইকাররাও বাইরের জেলা থেকে আসতে ভয় পাচ্ছেন, যে কয়জন পাইকার এসেছেন লকডাউনের মধ্যে তাদের কেনা আম বিক্রি করা যাবে কিনা চিন্তায় আম কেনা বাদ দিয়ে অলস সময় কাটাচ্ছেন তারা।