দিহানের ডোপ টেস্ট করতে চায় পুলিশ
রাজধানীর কলাবাগান এলাকায় ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের ছাত্রীকে ধর্ষণ ও হত্যা মামলার একমাত্র আসামি ফারদীন ইফতেখার দিহানের ডোপ টেস্ট করতে চায় পুলিশ। সেজন্য আদালতের অনুমতি প্রয়োজন। সেই অনুমতি চেয়ে আদালতে আবেদনও করা হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে।
আজ মঙ্গলবার রাতে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) নিউমার্কেট অঞ্চলের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার (এসি) আবুল হাসান এনটিভি অনলাইনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
কলাবাগান থানা পুলিশের তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রের দাবি, ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ ও হত্যার আগে দিহান মাকদসেবন করতে পারেন বলে তাদের ধারণা। এ ছাড়া ওই ছাত্রীকে চেতনানাশক খাওয়ানো হতে পারে বলেও তাদের মত। তবে ওই সূত্রটি নাম প্রকাশ করে কথা বলতে চাননি।
সহকারী পুলিশ কমিশনার আবুল হাসান বলেন, ‘আমরা আদালতের কাছে ডোপ টেস্টের অনুমতি প্রার্থনা করেছি। আশা করছি, আদালত বিষয়টি আমলে নিয়ে ডোপ টেস্টের অনুমতি দিয়ে দেবেন। অনুমতি পাওয়ার পর আমরা দিহানের ডোপ টেস্ট করব। সেখানে বেরিয়ে আসবে তিনি মাদকাসক্ত কি না। এ ছাড়া ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে আমরা জানতে পারব, ধর্ষণের আগে ওই ছাত্রীকে চেতনানাশক খাওয়ানো হয়েছিল কিনা।’
এদিকে আসামি ফারদীন ইফতেখার দিহানের বাসার দারোয়ান দুলাল আজ মামলার সাক্ষী হিসেবে আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশিদের আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন দুলাল। সাক্ষ্য শেষে ছেড়ে দেওয়া হয় তাকে।
জবানবন্দি দেওয়ার আগে কলাবাগান থানার পরিদর্শক (অপারেশন) ঠাকুর দাস আজ দুপুরে এনটিভি অনলাইনকে বলেছিলেন, ‘দুলালকে আদালতে নেওয়া হয়েছে সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি রেকর্ড করার জন্য। দুলালকে গতকাল সোমবার পুলিশ হেফাজতে নিয়ে প্রথমে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তিনি যতটুকু জানেন, আমরা ততটুকু জানার চেষ্টা করেছি। দুলাল এই মামলার আসামি নন। তাকে সকালে আদালতে নেওয়া হয়েছে। ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে লিখিত জবানবন্দি দেওয়ার পর তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে।’
মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র দুপুরে এনটিভি অনলাইনকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুলালের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে বলেন, ‘দুলাল আমাদের বলেছেন, দিহান ওই ছাত্রীকে বাসায় নিয়ে যান। দিহান নিয়ে যাচ্ছে বলে দারোয়ান তাকে কিছু বলেননি। এর এক ঘণ্টা পর দিহান ইন্টারকমে যোগাযোগ করে দারোয়ানকে উপরে উঠতে বলেন। উপরে উঠে দারোয়ান দেখেন, মেয়েটিকে সোফায় শুইয়ে রাখা হয়েছে। ওই সময় সোফায় রক্ত লেগে ছিল। পরে তারা বাসা থেকে নিচে নামেন। হাসপাতালে নেওয়ার জন্য গাড়িতে তুলে দেন দুলাল। তারপর তিনি ওই বাসায় প্রায় এক ঘণ্টা অপেক্ষা করে ঘটনা বোঝার চেষ্টা করেন। এরপর তিনি বাসা থেকে পালিয়ে যান। দিহান আমাদেরকে বলেছেন, ওই মেয়ে একা একা বাসায় উঠেছিলেন। আর দারোয়ান বলেছেন, তারা দুজনই একসঙ্গে বাসায় উঠেছিলেন।’
অপেক্ষা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের
বিকৃত যৌনাচারের ফলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ওই ছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে বলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ জানিয়েছিলেন। আজ রাতে তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমরা সন্দেহ করছি, ধর্ষণের পূর্বে ছাত্রীকে চেতনানাশক খাওয়ানো হতে পারে, নাও হতে পারে। আসলে শুধু শরীর দেখে অনেক কিছু বোঝা যায় না। সেজন্য ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন এলে সব পরিষ্কার হয়ে যাবে।’
ডিএমপির নিউমার্কেট জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) ইহসানুল ফেরদৌস আসামিকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে এনটিভি অনলাইনকে বলেছিলেন, ‘ভুক্তভোগীর সঙ্গে আসামির প্রেমের সম্পর্ক ছিল। আসামির মা বাসায় না থাকায় সুযোগ পেয়ে ভুক্তভোগীকে কলাবাগানের ওই ফাঁকা বাসায় ডেকে নেওয়া হয়। এরপর জোর করে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করা হয়। পরে ওই ছাত্রীর জননাঙ্গ থেকে রক্তক্ষরণ শুরু হয়।’
এডিসি আরো বলেন, ‘শারীরিক অবস্থা খারাপ হলে ওই ছাত্রী মাথা ঘুরে পড়ে যায়। এরপর তাকে চিকিৎসার জন্য আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এরপর ওইদিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবার দুপুর ১টা ২৫ মিনিটে হাসপাতাল থেকে আমাদের বিষয়টি জানানো হয়। পরে আমরা লাশটি উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠাই। আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতাল থেকে ধর্ষণের কথা বলা হয়েছে।’
এই ঘটনায় করা মামলার এজাহারে ছাত্রীর বাবা জানান, ওই ছাত্রী তার মাকে ফোন করে কোচিং থেকে লেখাপড়ার কাগজ আনার কথা বলে বাসা থেকে বের হয়। হঠাৎ দুপুর একটা ১৮ মিনিটে ফারদীন ইফতেখার হিদান কিশোরীর মাকে ফোন করেন। সে সময় দিহান ফোনে জানান ছাত্রী তার বাসায় গিয়েছিল। আকস্মিক অচেতন হয়ে পড়ায় তাকে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতাল নেওয়া হয়েছে।
ঘটনার দিন ছাত্রীর মা এনটিভি অনলাইনকে বলেছিলেন, ‘হাসপাতালে গিয়ে দেখি ওর প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। আমার ধারণা, মেয়েকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। আমি এর বিচার চাই।’
ঘটনার দিন গত বৃহস্পতিবার দুপুরে গুরুতর আহত অবস্থায় ওই ছাত্রীকে আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান দিহান। পরে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এরপর ওই দিন দিবাগত রাতে নিহত ছাত্রীর বাবা কলাবাগান থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। ওই মামলায় গ্রেপ্তার দিহান গত শুক্রবার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। পরে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। এ ছাড়া পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দিহানের আরো তিন বন্ধুকে আটক করেছিল। কিন্তু ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।