দেশবাসীকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির হাত থেকে বাঁচাতে হবে : জি এম কাদের
‘দেশ ও দেশের মানুষকে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির হাত থেকে বাঁচাতে হবে। ১৯৯১ সালের পর থেকে দেশে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সংবিধান সংশোধন করে সংসদীয় গণতন্ত্রের নামে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে। যারা ক্ষমতায় যাচ্ছে তারা সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দলবাজি ও টেন্ডারবাজি করে আঙুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে।’
আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর বনানীর কার্যালয়ে উপদেষ্টা ও ভাইস চেয়ারম্যানদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জি এম) কাদের এ কথা বলেন।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেন, যারা ক্ষমতায় থাকে তারা আইনের ঊর্ধ্বে থেকে দুর্নীতি করে। তারা দেশের হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করছে। সরকারদলীয়দের বিরুদ্ধে কোনো আইন নেই, আইন শুধু বিরোধীদের জন্য প্রয়োগ হচ্ছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের হাত থেকে রাষ্ট্রক্ষমতা বিএনপির হাতে গেলে শুধু কালেক্টর পরিবর্তন হবে, টাকার অঙ্ক বাড়বে কিন্তু জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে না। ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য দেশের জনগণ জাতীয় পার্টিকে রাষ্ট্রক্ষমতায় দেখতে চায়। তাই দলকে সুসংহত করতে হবে।
সভাপতির বক্তৃতায় জি এম কাদের আরো বলেন, নোয়াখালীর বসুরহাটে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে গেল রাতেও একজন খুন হয়েছে। প্রায় ৩০ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। তাদের দল একটাই, নেতাও একজনই। শুধু ভাগাভাগির কারণেই তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব। দেশের মানুষ এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে মুক্তি চায়। জাতীয় পার্টি দেশের মানুষকে মুক্তি দিতে রাজনীতি করছে।
এ সময় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কোনো দলই জাতীয় পার্টিকে ছাড় দেয়নি। বিএনপি ক্ষমতায় গিয়ে জাতীয় পার্টিকে লাঠিপেটা করেছে আর আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টিকে ভেঙে দুর্বল করেছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সংসদীয় গণতন্ত্রের নামে গণতন্ত্রের মূলে কুঠারাঘাত করেছে। দুর্নীতি, লুটপাট আর বৈষম্য সৃষ্টি করে দেশের সুশাসন ধ্বংস করেছে দুটি দল।
জি এম কাদের বলেন, বৈষম্যের বিরুদ্ধে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধে জয়ী হয়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি কিন্তু বৈষম্য থেকে মুক্তি পাইনি।
সংসদীয় গণতন্ত্রের সমালোচনা করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান আরও বলেন, সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে সংবিধানে ৭০ ধারা সংযোজন করে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। এখন এক ব্যক্তির হাতে নির্বাহী বিভাগ, আইন সভা এবং নিম্ন আদালত। আর উচ্চ আদালতের নিয়োগ প্রক্রিয়া প্রায় শতভাগই রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর হাতেই। কারণ, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা ছাড়া রাষ্ট্রপতি কোনো সিদ্ধান্তই নিতে পারছেন না। এক ব্যক্তির হাতে রাষ্ট্রের সব ক্ষমতার কারণে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যা স্বৈরতন্ত্র। ১৯৯০ সালের পর থেকে কোন দল একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে, তা একদিনের জন্য হলেও নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ নির্ধারণ করতে পারত। অনিয়ম ও ক্ষমতা অপব্যবহারে এখন নির্বাচনে ভোট দেওয়ার সেই অধিকার হারিয়েছে দেশের মানুষ।
এ সময় জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো কলুষিত করেছে বর্তমান সরকার। বিএনপি দুর্নীতি ও দুঃশাসনের যে অপরাজনীতি শুরু করেছিল বর্তমানে আওয়ামী লীগ তা চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে গেছে। দেশে বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতা নেই, দেশের মানুষ কথা বলতে পারছে না। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন দিয়ে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করা হয়েছে। আমরা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সংশোধন চাই।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি, মুজিবুল হক চুন্নু এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মো. মসিউর রহমান রাঙ্গা এমপি, চেয়ারম্যানের বিশেষ সহকারী ও প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আব্দুস সবুর আসুদ, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মো. আব্দুল্লাহ সিদ্দিকী, মো. জহিরুল আলম রুবেল, মাহজাবিন মোর্শেদ, ডা. কে আর ইসলাম, পনির উদ্দিন আহমেদ এমপি, মোহাম্মদ উল্লাহ, প্রফেসর সবিতা বেগম, নাজনিন সুলতানা, ভাইস চেয়ারম্যান মোস্তফা আল মাহমুদ, শফিকুল ইসলাম মধু, সালমা হোসেন, অ্যাডভোকেট মো. তোফাজ্জল হোসেন, মৌলভি মো. ইলিয়াস, এ এইচ এম গোলাম শহীদ রঞ্জু, মো. আবু সালেক, মো. জাহাঙ্গীর আলম পাঠান, শরিফুল ইসলাম চৌধুরী, ইয়াহ ইয়া চৌধুরী প্রমুখ।