নওগাঁয় যুবদলনেতার বিরুদ্ধে নির্যাতনের মামলা, দুই স্ত্রী গ্রেপ্তার
নওগাঁর মহাদেবপুরে এক নার্সারি ব্যবসায়ীকে ফুসলিয়ে অপহরণ করে তিন দিন আটকে রেখে টর্চার সেলে নির্যাতন এবং তার স্ত্রী শ্যামলী রাণীর (২৫) চুল কাটার ঘটনায় অবশেষে থানায় মামলা হয়েছে। রোববার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে নির্যাতনের শিকার শ্যামলী রাণী বাদী হয়ে মহাদেবপুর থানায় এ মামলা করেন।
মহাদেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজম উদ্দিন মাহমুদ জানান, গতকাল রাতে শ্যামলী রাণী বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন। পরে রাতেই পুলিশ রুহুলের বাসায় অভিযান চালিয়ে তার দুই স্ত্রী রুবাইয়া আকতার বৃষ্টি (২২) ও মুক্তা পারভীনকে (২১) গ্রেপ্তার করেছে। কিন্তু মূল আসামি রুহুল পালিয়ে গেছেন।
পুলিশ আসামি রুহুলের ব্যবহৃত প্রাইভেটকারটি জব্দ করেছে। তার বাড়ি থেকে ভুক্তভোগীদের স্বাক্ষর নেওয়া ফাঁকা স্ট্যাম্পও জব্দ করেছে পুলিশ।
মামলার অন্য আসামি হলেন রুহুল আমিনের সহযোগী পত্নীতলা উপজেলার ছোট চাঁদপুর গ্রামের তরিকুল ইসলাম (৪০)।
রুহুল আমিনের বাড়ি মহাদেবপুর উপজেলার দক্ষিণ হোসেনপুর বোয়ালমারী মোড়ে। তিনি উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য।
শ্যামলী রাণী জানান, অভিযুক্ত রুহুল আমিন তাদের নার্সারি থেকে বিভিন্ন জাতের চারাগাছ কিনতেন। গত ১৫ আগস্ট সকালে রুহুল তার কাজ করার জন্য মিঠুনকে ডেকে নিয়ে জোরপূর্বক তার গাড়িতে উঠিয়ে মহাদেবপুরে নিয়ে আসেন। সেখানে তার টর্চার সেলে মিঠুনকে আটকে রেখে মোবাইল ফোনে ১০ হাজার টাকা পাঠাতে বলেন। শ্যামলী রাণী তার শাশুড়ির গলার সোনার চেইন বন্ধক রেখে বিকাশে ১০ হাজার টাকা পাঠান। কিন্তু রুহুল আমিন ও তার লোকেরা আরও টাকা চায়। টাকা না পেয়ে তারা ধারালো অস্ত্র দিয়ে মিঠুনের পায়ের রগ কেটে দেয়। প্লায়ার দিয়ে চিমটিয়ে হাতের আঙুল জখম করে, হাতুড়ি দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে পেটায়। তাকে ঠিকমতো খেতেও দেওয়া হয়নি। তৃতীয় দিন ১৭ আগস্ট শ্যামলী পত্নীতলা থেকে মহাদেবপুর থানার সামনে এসে উপপরিদর্শক (এসআই) সাইফুল ইসলামকে বিষয়টি জানিয়ে রুহুল আমিনের বয়লারে সেই টর্চার সেলে যান। সেখানে যাওয়ার পর রুহুল আমিন ও তার দুই স্ত্রী শ্যামলীকে বেদম মারধর করেন এবং তার মাথার চুল কেটে দেন। পরে এসআই সাইফুল সেখানে উপস্থিত হয়ে মারাত্মক আহত অবস্থায় শ্যামলী ও তার স্বামীকে রুহুলের টর্চার সেল থেকে উদ্ধার করেন। কিন্তু তিনি রুহুল আমিন বা তার দুই স্ত্রীর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নেননি। পরে আহত মিঠুন ও শ্যামলীকে পত্নীতলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
ঘটনাটি জানার পর মহাদেবপুরের একদল সংবাদকর্মী গতকাল বিকেলে শ্যামলীর বাড়িতে গিয়ে মারাত্মক আহত অবস্থায় স্বামী-স্ত্রীকে বিছানায় যন্ত্রণায় কাতরাতে দেখেন।
পরে ঘটনাটি সংবাদকর্মীরা মহাদেবপুর থানা পুলিশকে জানান। এর পরই থানা পুলিশ শ্যামলী রাণীকে ডেকে এনে রাতে মামলা করান।
ওই টর্চার সেলে নির্যাতনের শিকার অনেকেই তাদের ঘটনাও গণমাধ্যমে প্রকাশের অনুরোধ জানায়। ভুক্তভোগীরা জানায়, অভিযুক্ত রুহুল আমিনের বয়লারে প্রায়ই মাদকের ও গ্রুপসেক্সের আসর বসে। রুহুল তার প্রাইভেট কার ব্যবহার করে বিভিন্ন স্থানে মাদকের চালান পৌঁছে দেয়। এসব কাজের বিরোধিতা করলে তাকে নির্যাতনের শিকার হতে হয়।
রুহুল আমিন উপজেলা যুবদলের সক্রিয় সদস্য হলেও সম্প্রতি ভিন্ন দলের একটি প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। মাদকের আসরে জিম্মি করে অনেকের সর্বস্ব হাতিয়ে নেওয়ারও অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগীরা।
এদিকে, মহাদেবপুর থানা পুলিশের বিরুদ্ধে রুহুল আমিনকে পালিয়ে যেতে সহায়তার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার দিন থেকে এক সপ্তাহ পর্যন্ত পুলিশ এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপই নেয়নি। পুলিশি অভিযানের কিছুক্ষণ আগে রুহুল আমিন প্রাইভেট কারযোগে পালিয়ে যান। পরে পুলিশ কারটি জব্দ করলেও রুহুল আমিনকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
আজ দুপুর পর্যন্ত রুহুলের ব্যবহৃত মোবাইফোন চালু থাকলেও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
এ ব্যাপারে ওসি আজম উদ্দিন মাহমুদ বলেন, এ ক্ষেত্রে পুলিশের কোনো গাফিলতি নেই। রুহুল আমিনকে আটকের জন্য সব ধরনের তৎপরতা চালানো হচ্ছে।