নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাবে ভিন্নমত ব্যাংক ও সেবা প্রতিষ্ঠানের
ভোটে অযোগ্য করতে সিআইবি তালিকাভুক্ত নয়, শুধু মামলা থাকলেই প্রার্থী হতে পারবে না-এমন প্রস্তাবে সায় দেয়নি ব্যাংকাররা ও সেবা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা। সিইসির ভাষায়, তাদের প্রস্তাবে উনারা খুব কমফোর্টেবল ফিল করেন না।
ঋণ ও বিল খেলাপিদের ভোটে আটকাতে শুধু মামলাকে প্রধান্য দিতে চেয়েছিল নির্বাচন কমিশন। তাতে সম্মতি দেয়নি ব্যাংক ও সেবা প্রতিষ্ঠানগুলো।
এসব প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা বলেছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোর (সিআইবি) তালিকাভুক্ত হলেই খেলাপি হিসেবে ভোটে অযোগ্য থাকবেন। সেক্ষেত্রে বিদ্যমান গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) বিধানই বহাল রাখতে হবে।
সোমবার সকালে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে ব্যাংক, সেবা প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষকসহ ১৪ জনের সঙ্গে বৈঠক করেন। ঋণ ও বিল খেলাপিদের ‘ছাড়’ দেওয়া নিয়ে আইনি সংস্কার বিষয়ে এ সভা হয়।
সভা শেষে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, “আজকে এ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। অধিকাংশরাই বলেছেন, ব্যাংক ঋণের ক্ষেত্রে এখন যে বিধান রয়েছে তা থাকলেই ভালো হয়। আমরা যেটা প্রস্তাব করেছিলাম- এটাতে উনারা খুব কমফোর্টেবল ফিল করেন না। “
আরও একটু চিন্তা করে ‘আরপিও সংশোধন করা হবে কিনা’ তা পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে উল্লেখ করেন সিইসি।
আরপিও অনুযায়ী, ঋণ ও বিল খেলাপিরা সংসদ নির্বাচনের ভোটে অযোগ্য। এক্ষেত্রে মনোনয়নপত্র জমার নির্ধারিত সময়ে পুনঃতফসিলের সুযোগ রাখা হয়েছে। তবে মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের সময় সিআইডি প্রতিবেদনে যারা খেলাপি হন, তারা আর অংশ নিতে পারেন না।
কমিশন প্রস্তাব দিয়েছিল- সিআইবি প্রতিবেদন নয়, শুধু মামলা হলেই তাকে ভোটে অযোগ্য করার বিধান করা যেতে পারে।
সিইসির ভাষ্য, ব্যাংকের ঋণ কীভাবে আদায় করতে হবে তা ব্যাংকের ইন্টারনাল বিষয়, তাদের নির্ধারণ করতে হবে। বিল কীভাবে আদায় হবে তা নির্ধারণ করতে হবে। বিদ্যমান সমাজ ব্যবস্থায় তারা শক্তিশালী, ঋণখেলাপি ও বিলখেলাপি হয়ে তারা পরিশোধ না করেও পারবে। কিন্তু সাধারণ মানুষের জন্য জটিল হয়।
খেলাপিদের ‘ভিন্ন দৃষ্টিতে’ যেভাবে ছাড় দিতে চেয়েছিল
সিইসি জানান, বর্তমান বিধানে সত্যিকারের যারা খেলাপি নন তারা অযোগ্য হয়ে পড়তে পারে। ভোটে দাঁড়ানোর অধিকার মৌলিক অধিকার। তাতে যেনতেনভাবে কারো অধিকার খর্ব না করার জন্যে ভিন্ন চিন্তা করেছে ইসি।
বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আইনের সাবেক ছাত্র হাবিবুল আউয়াল বলেন, “আমরা একটা প্রস্তাব করেছিলাম- স্পিরিটটাকে স্পষ্ট করার জন্যে। ঋণ ও বিল আদায়ের জন্য যাদের বিরুদ্ধে মামলা করবে কোর্টে তাদেরকে আমরা গণ্য করবো ঋণখেলাপি হিসেবে।”
গ্যাস-বিদ্যুৎ-টেলিফোন বিল নিয়ে বাহুল্য মনে হয়েছিল কমিশনের
“বিল না দিলে লাইন কেটে দেওয়া যায়। নানা কারণে হয়ত জানেও না বিল খেলাপির তথ্য। আমরা প্রস্তাব করেছিলাম- তাদের বিরুদ্ধে যদি মামলা হয়, বিল খেলাপি বলতে চাই।”
সিআইবি তালিকা বাদ দিয়ে শুধু মামলাতেই ‘সায়’ নেই ব্যাংকারদের
সিইসি বলেন, “আমরা একটা ড্রাফট করেছিলাম। যারা জেনুইন ডিফল্টার, সত্যি সত্যি টাকা লুট করার জন্যে যারা ঋণ পরিশোধ করছেন না (তারা যেনো অযোগ্য হন), ব্যাংকরা বলছেন, যে কোনো খেলাপিই সিরিয়াস ডিফল্টার। কিন্তু আমরা দেখতে চেয়েছিলাম একটু ভিন্নভাবে।”
তিনি জানান, সভায় ব্যাংকাররা আগের বিধানটা করফোর্টেবল বলছেন- সিআইবি থেকে যে তালিকা সরবরাহ করা হয়, তার ভিত্তিতে খেলাপি নির্ধারিত হয়ে থাকে। মামলা করার বিষয়টি যুক্ত করতে চাইলে তাদের আপত্তি নেই।
ব্যাংক ও সেবা প্রতিষ্ঠান প্রতিনিধিরা যা বলছেন
পূবালী ব্যাংকের জেনারেল ম্যানেজার দেওয়ান রুহুল আহসান বলেন, ‘‘ব্যাংকের পক্ষ থেকে সিআইবি রিপোর্টকে প্রাধান্য দিতে বলেছি আমরা। সেই সঙ্গে প্রচলিত আইন যদি সংশোধন করতে চায়, তাহলে ওই অংশটি (মামলা) যুক্ত করতে পারে।”
সবার মতামত নিয়ে প্রয়োজনে আরও পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে বলে কমিশন আশ্বস্ত করেছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “মামলা করতে অসুবিধা নেই। মামলা তো করা হয়। সিআইবিতে যাদের নাম থাকবে তাদেরকে ঋণখেলাপি বলতে হবে। মামলা করতে অনেকগুলো ধাপ থাকে। সময় সাপেক্ষ ব্যাপার।”
ইসির প্রস্তাবে ব্যাংকরা রাজি কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরা অবজারভেশন দিয়েছি। সিআইবি তে যা আছে তা থাকবে। মামলার কথা রাখতে চাইলে পাশাপাশি বিদ্যমান বিধানও রাখতে হবে।”
ডেসকোর চিফ ইঞ্জিনিয়ার রশিদুর রহমান জানান, বিল খেলাপিদের বিরুদ্ধে মামলা করার বিধানে তাদের সম্মতি নেই। সেক্ষেত্রে বিদ্যমান বিধানই বহাল রাখার পক্ষে তারা মতামত দিয়েছেন।
নির্ধারিত সময়ে বিল পরিশোধ না করলেই বিল খেলাপি হয়ে যায় সংশ্লিষ্টরা। বিষয়টি গ্রাহককে জানানো হয়। কিন্তু মামলা করতে গেলে সেবা প্রতিষ্ঠানের নানা ঝুঁকি রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ইসির প্রস্তাবের পর আমাদের মতামতটা জানিয়েছি। রাখবেন কী রাখবেন না, তা তাদের বিষয়। বিদ্যমান আইনই থাকুক। মামলাতে আমাদের সম্মতি ছিল না।’