পরকীয়ার জেরে হত্যা : মামলার বাদী ও তাঁর স্ত্রীকে গ্রেপ্তার দাবি
ময়মনসিংহে পরকীয়ার জেরে তারাকান্দার পলাশকান্দা গ্রামের মো. শাহীনুর আলম ওরফে ইকবাল (১৯) হত্যা মামলায় নিরীহ ব্যক্তিদের আসামি করে ঘরবাড়ি ছাড়ার প্রতিবাদে এবং মামলার রহস্য উদঘাটনে বাদীসহ তাঁর স্ত্রী ও স্বজনদের গ্রেপ্তার দাবিতে মানববন্ধন করেছে ভুক্তভোগী পরিবার ও এলাকাবাসী। আজ মঙ্গলবার সকাল ১১টায় ময়মনসিংহ শহরের শহীদ ফিরোজ জাহাঙ্গীর চত্বরে ঘণ্টাব্যাপী এই মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়
মানববন্ধন চলাকালে ওই গ্রামের মো. আব্দুল হেলিম লিখিত বক্তব্যে বলেন, মুলত ইকবাল হত্যা মামলার বাদী সেলিম মিয়ার ফুফা আব্দুর রাজ্জাকের মেয়ে মুক্তার ত্রিভুজ প্রেমের বলি হয়েছেন রুমডো পলিটেকনিকের ছাত্র ইকবাল। মুক্তাকে নিয়েই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। পারিবারিক সম্মতিতে সেলিম মিয়া বিয়ে করেন তার ফুফাতো বোন মুক্তাকে। বিয়ের আগে মুক্তার সঙ্গে সেলিম মিয়ার ছোট ভাই রুহুলের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এ কথা জেনেও মুক্তাকে বিয়ে করেন সেলিম। তিনি চাকরির সুবাদে বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করে মাঝেমধ্যে বাড়ি আসতেন। মুক্তা এ সময় একাই তার ঘরে থাকতেন। তার পাশের ঘরে থাকতেন ইকবাল। এ সুযোগে সেলিমের অনুপস্থিতিতে ইকবালের সঙ্গে মুক্তার পরকীয়া সম্পর্ক হয়। ইকবাল যে রাতে নিখোঁজ হন তার তিন দিন আগে সেলিম ইকবালকে মারধর করেন এবং ভাতের প্লেট কেড়ে নেন। এ বিষয়ে তার মা জামিনা খাতুন দুই ছেলেকেই তিরস্কার করেন।
মো. আব্দুল হেলিম লিখিত বক্তব্যে আরও বলেন, আমি চাই এ বিষয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত করা হোক। এ বিষয়ে সেলিম তার স্ত্রী মুক্তা, সেলিমের মা জামিনা খাতুন এবং সেলিমের ছোট ভাই রুহুল, সেলিমের কাজের মেয়ে শিল্পীর মাধ্যমে মুক্তার ত্রিভুজ প্রেমের কথা সবাই অবগত। মামলার রহস্য উদঘাটনে তাদের গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য জোড় দাবি করছি। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করলেই ইকবাল হত্যার মূল ঘটনা বেরিয়ে আসবে।
মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জব্বার, আব্দুল বেপারী, শাহাবুল আলম, মো বাবুল, মামুন পণ্ডিত, শহীদুল্লাহ, কাইয়ুম, মিরাজ, আনভির ইসলাম, নিশান, ইমন, আকাশ, আলামিন, রনি প্রমুখ।
মো. আব্দুল হেলিম আরও বলেন, গত বছর ৩১ মে রাত অনুমান ১০টায় খাবার খেয়ে বাড়ির পাশে সাজ্জাদ মিয়ার দোকানে চা খেতে যান ইকবাল। তিনি আর বাড়িতে ফিরেননি। কোথাও খোঁজ করে তাকে না পেয়ে পরের দিন ১ জুন নিহত ইকবালের বাবা মো, আব্দুর রউফ তারাকান্দা থানায় একটি নিখোঁজ জিডি করেন। এই জিডির পর ৫ জুন সকাল ৭টায় পলাশকান্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা আ. জব্বারের পরিত্যক্ত হাউজিখেলার সেফটিক ট্যাঙ্কির ভিতর থেকে পুলিশ ইকবালের লাশ উদ্ধার করে। পরে মামলার বাদী মো. সেলিম মিয়া তার ছোট ভাই শাহীনুর আলম ওরফে ইকবালের লাশ শনাক্ত করেন। পরে সেলিম মিয়া বাদী হয়ে ৬ জুন তারাকান্দা থানায় তার একমাত্র সন্দেহভাজন পলাশকান্দা গ্রামের আসিফ নাঈম রানাকে (১৮) আসামি করে মামলা করেন। সেই অভিযোগপত্রে আসামি হিসেবে আমি দরখাস্তকারী ও আমার ভগ্নিপতির নাম নেই। আমার ভগ্নিপতি ইউনুছ আলী মামলার বাদী সেলিম মিয়ার ফুফা। ফুফার সঙ্গে আগে থেকে জমিজমা নিয়ে গোষ্ঠীগত মামলা মোকদ্দমাসহ বিরোধ বিদ্যমান। সেলিম মিয়াও আমার গোষ্ঠীগত চাচাতো ভাই। আমার ভগ্নিপতির সঙ্গে সেলিম মিয়াদের সব সমস্যায় আমি আমার ভগ্নিপতির পাশে দাঁড়াই। আমাকে বারবার সেলিম মিয়া ভগ্নিপতির পাশে দাঁড়াতে মানা করতেন। না শুনলে সুযোগ পেলে ফাঁসিয়ে দেবে বলেও হুমকি দিতেন। যে কারণে আমাকে ও আমার ভগ্নিপতিকে শায়েস্তা করার জন্য আমাদেরক ওই মামলায় প্রতিহিংসামূলকভাবে জড়ানো হয়েছে।
মো. আব্দুল হেলিম আরও বলেন, আমি উচ্চ আদালতের আদেশে জামিনে মুক্ত আছি। কিন্তু বাদী সেলিম মিয়া গংয়ের অত্যাচারে আমি নিজ বাড়িতে যেতে পারছি না। ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করতে পারছি না। এতে আমার মাছ ও মুরগির প্রজেক্ট ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। জমিজমি চাষাবাদ করতে না পেরে অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি। বাড়িতে আমার বৃদ্ধ বাবা-মা অসুস্থ। তাদের চিকিৎসা করতে পারি না। সম্প্রতি সেলিম মিয়ার বাড়ির পাশে মসজিদে নামাজ পড়তে গেলে আমার বাবাকে ঘাড় ধরে মসজিদ থেকে বের করে দিয়েছেন সেলিম মিয়া।