পরীক্ষামূলকভাবে চলল মেট্রোরেল
রেলপথে নতুন যুগে প্রবেশ করল বাংলাদেশ। দেশে প্রথম বৈদ্যুতিক ট্রেন পরীক্ষামূলকভাবে চালানো হয়েছে। মেট্রোরেল প্রকল্পের জন্য জাপান থেকে যে ছয়টি কোচ আনা হয়েছে, সেগুলোকে নিয়ে রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ি ডিপোতে এই প্রদর্শনী হয়।
আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টা ৫০ মিনিটের সময় মেট্রোরেলের ডিপোর ‘আনলোডিং এরিয়ায়’ ধীর গতিতে বৈদ্যুতিক এই ট্রেন চালিয়ে দেখানো হয়। জাপান ও বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও গণমাধ্যমকর্মীরা সেখানে ছিলেন।
ডিপোর হল রুমে মেট্রোরেলের প্রথম সেটের প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
এ সময় ওবায়দুল কাদের বলেন, বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেলের সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ৬৪ শতাংশের মতো। আর উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি প্রায় ৮৫ শতাংশ। আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের পূর্তকাজের অগ্রগতি প্রায় ৬০ শতাংশ এবং ইলেকট্রিক্যাল মেকানিক্যাল সিস্টেম, রোলিং স্টোন ও ডিপোর ইক্যুইপমেন্ট সংগ্রহ কাজের সমন্বিত অগ্রগতি প্রায় ৫৫ শতাংশ। ডিপোর ভূমি উন্নয়ন কাজ নয় মাস আগে আমরা শেষ করেছি। এতে সরকারের ৭০ কোটি ৫৮ লাখ টাকা সাশ্রয় হয়েছে। ডিপোর পূর্তকাজের সার্বিক অগ্রগতি ৮৮ শতাংশ। প্রকল্পের ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার ভায়াডাক্টের মধ্যে ১৪ দশমিক ৪৯ কিলোমিটার ভায়াডাক্টের ইরেকশন সম্পন্ন হয়েছে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, এমআরটি-৬ প্রকল্পের সব ক্ষেত্রে বিভিন্ন পর্যায়ের কাজ চলমান রয়েছে। ডিপোর অভ্যন্তরে রেললাইন নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ভায়াডাক্টের ওপরে সাড়ে ১০ কিলোমিটার রেললাইন স্থাপন করা হয়েছে।
মন্ত্রী জানান, ২০২১ সালের মধ্যে ভায়াডাক্টের ওপরে মূল রেলপথে বৈদ্যুতিক ট্রেনের ‘পারফর্ম্যান্স টেস্ট’ শুরু করা হবে। এরপর ‘ইন্টিগ্রেটেড টেস্ট’ করা হবে এবং ট্রেনের ‘ট্রায়াল রান’ শুরু হবে।
অনুষ্ঠানে জাইকার আবাসিক প্রতিনিধি ইউহো হায়াকাওয়া বলেন, এই প্রকল্প বাংলাদেশ ও জাপানের দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার একটি নমুনা। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ডিএমটিসিএল এবং জাইকা দুইপক্ষই মহামারির মধ্যেও আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এটি ঢাকা শহরের গণপরিবহণের চেহারা পাল্টে দেবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত বৈদ্যুতিক এই ট্রেন চালু হলে এর সুফল ভোগ করবে এই রুটের বিপুল কর্মজীবী মানুষ। জাপানি প্রযুক্তিতে তৈরি হওয়া এই পরিবহণ ব্যবস্থা নিরাপদ, জ্বালানিসাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব বলেও জানান তিনি।
এ সময় জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি বলেন, বাংলাদেশের স্বপ্নের উন্নয়নের মাইলফলকের এই প্রকল্পে অংশীদার হতে পেরে আমরা সত্যি গর্বিত। কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যে এই প্রকল্পটির অসাধারণ অগ্রগতি হয়েছে। এজন্য তিনি প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে জড়িত সব পক্ষকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ১০০ মিনিটের ভ্রমণ সময় মেট্রোরেল লাইন চালুর মাধ্যমে মাত্র ৩৬ মিনিটে নেমে আসবে।
২০২২ সালে জাপান বাংলাদেশের বন্ধুত্বের ৫০ বছরের সুবর্ণজয়ন্তীতে এই প্রকল্পের উদ্বোধন করা হবে বলে সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক বলেন, মেট্রোরেল চালু হলে ঢাকা শহরে বছরে এক লাখ ৮০ হাজার টনের বেশি কার্বন নিঃস্বরণ কমবে। যানজট কমিয়ে যথাসময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এই রেলের ছয় কোচের প্রতিটি সেট একসঙ্গে আগে ভাড়া পরিশোধ সিস্টেমে এক হাজার ৭০০ যাত্রী পরিবহণ করবে।