পরী মণির বিরুদ্ধে অল কমিউনিটি ক্লাবে ভাঙচুরের অভিযোগ
চিত্রনায়িকা পরী মণি রাজধানী গুলশানের অল কমিউনিটি ক্লাবে ভাঙচুর করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। গত ৮ জুন পরী মণি ও তাঁর সঙ্গে আরও কয়েকজন ওই ক্লাবে গিয়ে গ্লাস ভাঙচুর করেন বলে সরকারি জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন করে অভিযোগ করা হয়েছে।
ঘটনার সময় পরী মণির সঙ্গে ছিলেন তাঁর সাবেক বাগদত্তা তামিম হাসান, কসটিউম ডিজাইনার জেমি ও তাঁর এক আত্মীয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান জোনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত ৮ জুন গভীর রাতে ভাঙচুরের ঘটনাটি ঘটেছে। তবে এ ঘটনায় আজ বুধবার রাত ৮টা পর্যন্ত থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) বা মামলা হয়নি। তবে পুলিশ নতুন করে ওই ঘটনা তদন্তে ক্লাব পরিদর্শনে যাবে।
জানতে চাইলে চিত্রনায়িকা পরী মণি বলেন, ‘এটা একটা ফালতু অভিযোগ। সেখানে (অল কমিউনিটি ক্লাব) কিছু হলে এতদিন পরে কেন এই অভিযোগ?’
গুলশান জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) নাজমুল হাসান ফিরোজ বলেন, ‘৭ জুন রাতে অল কমিউনিটি ক্লাব কর্তৃপক্ষ ৯৯৯-এ ফোন করে ভাঙচুরের অভিযোগ করেন। তারপর ৯৯৯ থেকে গুলশান থানায় ফোন করে ঘটনাটি জানায়। তারপর থানা থেকে আমাদের এক অফিসার সেখানে যান। গিয়ে দেখতে পান, সেখানে পরী মণিসহ আরও দুজন উপস্থিত ছিলেন। তারপর ঘটনাটি শেষ হয়। এ ঘটনায় ক্লাব কর্তৃপক্ষ থেকে কোনো লিখিত অভিযোগ বা সাধারণ ডায়েরি করা হয়নি।’
‘তবে সাধারণত ৯৯৯ থেকে ফোন এলে বা আমাদের পুলিশ অ্যাকটিভি করলে আমরা ঘটনাটি নোট রাখি। সেভাবে নোট রেখেছি। কিন্তু জিডি বা মামলা যেহেতু করা হয়নি, সেহেতু আইনানুগ কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বা হয়নি’, যোগ করেন এডিসি।
কিন্তু অভিযোগ কী ছিল, এমন প্রশ্নে নাজমুল হাসান ফিরোজ বলেন, ‘থানায় যে নোট রাখা হয়েছে, সেখানে কারণ উল্লেখ করা নেই। কিন্তু শুনেছি, তর্কাতর্কির ঘটনার জেরে ভাঙচুর ঘটেছে।’
অল কমিউনিটি ক্লাবের সংবাদ সম্মেলন : আজ সন্ধ্যা ৭টার দিকে অল কমিউনিটি ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ক্লাবটির সভাপতি কে এম আলমগীর ইকবাল বলেন, আমাদের ক্লাবে কিছুদিন আগে (৮ জুন) ছোট্ট একটি অঘটন ঘটেছিল। আমাদের ক্লাব বন্ধের সময় হয়ে এসেছিল। তখন কয়েকজন লোক আসে ক্লাবে প্রবেশের জন্য। গেটে দায়িত্বে থাকা সিকিউরিটি গার্ডরা ফোন করে জানান, তারা কিছুক্ষণ আগে একবার এসেছিলেন। তখন তারা ফোন ও কিছু কাগজ রেখে গেছেন। সেগুলো নেওয়ার জন্য তারা আবার এসেছেন।
আলমগীর ইকবাল বলেন, আমাদের ক্লাবের নিজস্ব কিছু নিয়মকানুন আছে। বিশেষ করে কোনো মেয়ে যদি ক্লাবে আসে তাহলে তাকে কিছু ড্রেস মেনে আসতে হয়। সেদিন এখানে যারা এসেছিলেন তাদের মধ্যে একজন ছিলেন হাফপ্যান্ট ও স্যান্ডেল পরা। তখন আমাদের কর্মকর্তারা বলেন, আপনারা তো ক্লাবের নিয়ম ভঙ্গ করেছেন। এটা বলায় তারা ক্ষিপ্ত হয়ে যায়।
ক্লাব সভাপতি বলেন, এই সময়ে তারা যে সদস্যদের মাধ্যমে ক্লাবে আসেন তিনিও তাদের চলে যেতে বলেন। কিন্তু তারা যেতে চায়নি। পরে বাধ্য হয়ে আমাদের সেই সদস্য চলে যান। এর মধ্যে আমাদের ক্লাবের সব কর্মকর্তা চলে যান। শুধু দুজন ওয়েটার ছিল। এরই মধ্যে তারা ৯৯৯ এ কল করে পুলিশ ডাকেন। পুলিশ এলে তারা ক্লাব কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তাদের হেনস্থার অভিযোগ করেন। কিন্তু বাস্তবে তখন আমাদের তেমন কেউ ছিল না। ঘটনার সময় তখন রাত ১টা থেকে দেড়টা বাজে। বরং এই সময়ে একজন আমাদের ক্লাবের ১৫টি গ্লাস, নয়টি অ্যাসট্রে, বেশ কিছু হাফ প্লেট ভাঙেন। পরে আমরা জানি, তাঁর নাম পরী মণি। পুলিশ এসেও এর সত্যতা পায়। পরে পুলিশ ঘটনার বিষয়ে তাদের ঊর্ধ্বতনদের জানায়। তারা ওই পুলিশ সদস্যদের চলে যেতে বলেন।
এক প্রশ্নের জবাবে আলমগীর ইকবাল বলেন, ক্লাবের নিয়ম অনুযায়ী যে সদস্যের মাধ্যমে তারা এসেছিলেন, আমরা তাকে শোকজ করেছি।
ক্লাবের আইন ভাঙার শাস্তি কী জানতে চাইলে ইকবাল বলেন, ক্লাবের নিয়ম অনুযায়ী শাস্তি প্রদান করা হয়। ক্লাব থেকে শোকজ ও তিন মাস, চার মাস সদস্য পদ স্থগিত করা হয়। এছাড়া অপরাধের মাত্রা বেশি হলে আজীবনের জন্য সদস্যপদ স্থগিত করা হয়।
এদিকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে পরী মণির বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে বলা হলেও সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে কিছু বলেননি ক্লাব সভাপতি।
জিডির বিষয়ে জানতে গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। তবে থানা সূত্রে জানা গেছে, এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো জিডি হয়নি।
গত ৮ জুন চিত্রনায়িকা পরী মণি ঢাকা বোট ক্লাবে গেলে সেখানে তাঁকে ধর্ষণ ও হত্যার চেষ্টা হয় বলে অভিযোগ করেন। এই ঘটনায় গত সোমবার ছয়জনকে আসামি করে মামলা করেন ঢাকাই সিনেমার আলোচিত এই নায়িকা। মামলার পর পুলিশ প্রধান দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে।