‘পরী মণি স্বনামধন্য নারী; তাই জামিন পেতে পারেন’
চিত্রনায়িকা পরী মণিকে ছয় দিন রিমান্ডে রাখার পরও তাঁর কাছ থেকে কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উদঘাটন হয়নি। পরী মণি একজন স্বনামধন্য নারী। ফলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে আসামি জামিন পেতে পারেন বলে জামিনের আবেদনে উল্লেখ করেছেন তাঁর আইনজীবী মজিবুর রহমান।
আজ সোমবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে পরী মণির পক্ষে তাঁর আইনজীবী জামিনের আবেদন করেন। সেই জামিনের আবেদনের ওপর শুনানির জন্য আগামী বুধবার দিন নির্ধারণ করেছেন বিচারক।
আইনজীবী জামিনের আবেদনে আরও উল্লেখ করে বলেন, ফোর্বস ম্যাগাজিন’ এর ১০০ ডিজিটাল তারকার মধ্যে পরী মণির নাম রয়েছে, যা বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের জন্য গৌরবজনক। পরী মণি জেলহাজতে আটক থাকলে চলচ্চিত্র অঙ্গনের অপূরণীয় ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাছাড়া বিভিন্ন কোম্পানি ও চলচ্চিত্র নির্মাতাদের সঙ্গে চুক্তিভঙ্গের সম্ভাবনা রয়েছে। ‘প্রীতিলতা’ নামে সরকারি একটি সিনেমার জন্য ফটোশুট হয়েছে, যাতে তিনি কাজ করবেন। কয়েকটি সিনেমার শুটিংয়ের শিডিউল ভেঙে পড়েছে।
আবেদনে আরও বলা হয়, পরী মণির বিরুদ্ধে সাড়ে ১৮ লিটার মদ ও অন্যান্য মাদক রাখার অভিযোগ করা হয়েছে, যা আসামির দখল থেকে উদ্ধার করা হয়নি। এ ছাড়া, পরী মণি প্যানিক অ্যাটাকের রোগী। দীর্ঘ সময় পুলিশ কাস্টডিতে থেকে অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে তিনি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। চিকিৎসার স্বার্থে আসামি পরী মণিকে জামিন দেওয়া হোক। ছয় দিন রিমান্ডে রাখার পরও তাঁর কাছ থেকে কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উদঘাটন হয়নি। পরী মণি একজন স্বনামধন্য নারী। ফলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে আসামি জামিন পেতে পারেন।
জামিন আবেদনে আরও বলা হয়, দ্য আর্মড পুলিশ ব্যাটেলিয়ন অর্ডিন্যান্স ১৯৭৯ এর ৬ এবং ৬ এ ধারা লঙ্ঘন করে পরী মণির বাসায় অভিযান চালানো হয়। একটি ভিত্তিহীন মামলা দায়ের করা হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। তাই তিনি জামিন পেতে পারেন।
এর আগে গত শুক্রবার বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে পরী মণিকে ঢাকার সিএমএম আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাঁকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পরিদর্শক গোলাম মোস্তফা।
গত ৪ আগস্ট রাতে পরী মণিকে তাঁর বনানীর বাসা থেকে আটক করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। অভিযানে নতুন মাদক এলএসডি, মদ ও আইস উদ্ধার করা হয় বলে দাবি করে র্যাব। তাঁর ড্রয়িংরুমের কাভার্ড, শোকেস, ডাইনিংরুম ও বেডরুমের সাইড টেবিল ও টয়লেট থেকে বিপুল পরিমাণ মদের বোতল উদ্ধার করা হয় বলেও দাবি করা হয়। অভিযান শেষে পরী মণি ও তাঁর ব্যবস্থাপক আশরাফুল ইসলাম দীপুকে আটক করে সদর দপ্তরে নিয়ে যায় র্যাব।
একই রাতে বনানীর আরেক বাসা থেকে পরী মণির সহযোগী প্রযোজক মো. নজরুল ইসলাম রাজ ও তাঁর ব্যবস্থাপক মো. সবুজ আলীকে আটক করে র্যাব। পরদিন ৫ আগস্ট বিকেলে তাদের বনানী থানায় সোপর্দ করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দুটি মামলা করে র্যাব। ওই দিন রাতে চারজনকে সিএমএম আদালতে হাজির করে সাত দিন করে রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। এ সময় আসামিপক্ষে তাঁদের আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে আবেদন করেন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষ রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত তাঁদের চার দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এরপর ১০ আগস্ট পরী মণি ও তাঁর সহযোগী দীপুকে আদালতে হাজির করে ফের পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করে মামলার তদন্ত সংস্থা সিআইডি। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত তাঁদের দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
দুই দফায় রিমান্ড শেষে গত ১৩ আগস্ট পরী মণি ও তাঁর সহযোগী আশরাফুল ইসলাম দীপুকে আদালতে হাজির করা হলে আদালত তাঁদের জামিন আবেদন খারিজ করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।