ফরিদপুরে নৌকার ভেতরে রসে ভেজানো চিতই পিঠার মেলা
ফরিদপুরের নগরকান্দার তালমা গ্রামের তপন ফকিরকে কেউ চেনেন তপন সাধু নামে। আবার কারও কাছে তিনি তপন ওঝা নামেও পরিচিত। নানান রোগের টোটকাও দেন তিনি।
প্রায় তিন যুগ ধরে কাঠের নৌকায় দুধ-গুড়ের রসে ভেজা তিন দিনব্যাপী চিতই পিঠার মেলার আয়োজন করে এলাকায় বেশ পরিচিত তিনি। স্বপ্নে আদেশ পেয়ে ভক্তদের জন্য তিনি নৌকায় দুধ, গুড়ের রসের চিতই পিঠা ভিজিয়ে ভক্তদের খাওয়াচ্ছেন। যেটা ওই এলাকার একটা ঐতিহ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সাতটি মাটির চুলায়, পিঠার ছাচে গ্রামের বেশ কয়েকজন মহিলা বানাচ্ছেন চিতই পিঠা। পাশেই বড় বড় পাতিলে জাল দেওয়া হচ্ছে দুধ, আরেকটিতে ফুটানো হচ্ছে টাটকা খেজুরের রস। উঠানের মাঝখানে রাখা হয়েছে পরিচ্ছন্ন ও রং করা একটি নৌকা। নৌকার মাঝখানে পলিথিন বিছানো, কিনারে লাগানো আছে কয়েকটি লাল নিশান। ফুল দিয়ে সাজিয়ে রাখা আছে একটি বৈঠা। সারি সারি জ্বালানো হয়েছে মোমবাতি। এ মেলা ঘিরে বসেছে রং বেরঙের খেলনা, খাবারের দোকান, আচারের দোকানসহ বিভিন্ন প্রকারের দোকান। দোকানিরা পশরা সাজিয়ে বিক্রি করছেন নানা জিনিসপত্র।
তপন ফকির জানান, প্রায় তিন যুগ ধরে চলছে তার এ দুধ-গুড়ে ভেজানো চিতই পিঠার মেলা। প্রায় তিন যুগ আগে হঠাৎ এক রাতে তিনি স্বপ্নে আদেশ পান। তারপর প্রতি বছর মাঘ মাসের শেষে তিন দিন নৌকার মধ্যে দুধ-খেজুরের রসে ভিজিয়ে চিতই পিঠা এলাকাবাসী ও ভক্তদের খাওয়াতে হবে। তাতেই বাড়বে তার দৈবশক্তি। সেই থেকে বিশ্বাস আর শুরু। প্রতি বছর এ সময় তিনি গ্রামবাসী ও ভক্তদের নৌকায় ভেজানো দুধ চিতই পিঠা খাওয়ানোর আয়োজন করে আসছেন।
জানা গেছে, ‘তপন ফকিরের দুধ চিতইয়ের মেলা’ নামে পরিচিত এই দুধ চিতই উৎসব শুরু হয়েছে গত বৃহস্পতিবার থেকে। আগামীকাল রোববার রাতে শেষ হবে এ অনুষ্ঠান। প্রতিদিন সন্ধ্যায় শুরু হয় পিঠা খাওয়ার আয়োজন।
সন্ধ্যার পর পাতিলে দুধ আর খেজুরের রস মিশিয়ে ঢেলে দেওয়া হয় নৌকায়। এর মধ্যে ডুবিয়ে দেওয়া হয় চিতই পিঠা। বাটিতে তুলে তুলে পরিবেশন করা হয় ভক্ত ও দর্শনার্থীদের মোধ্য।
তপন সাধুর বাড়ির খাদেম মো. আব্বাস বলেন, এবার প্রতিদিন মেলায় পাঁচ মণ দুধ, এক মণ খেজুরের রস আর প্রায় ১০ হাজার পিচ চিতই পিঠা ভেজানো হয়। সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হয় খাওয়া। চলে গভীর রাত পর্যন্ত। প্রতিদিন আয়োজনের প্রায় পুরোটাই শেষ হয়ে যায়। উৎসব দেখতে স্থানীয়রা ছাড়াও দূর-দূরান্ত থেকে বিপুল মানুষ এসে ভিড় করে।
ফরিদপুর জেলা সদর থেকে আগত পিকুল বলেন, আমি জীবনে কোথাও দেখিনি বা শুনিনি এ রকম নৌকার মধ্যে ভেজানো পিঠার কথা। তাই দেখতে এসেছি। ব্যতিক্রমী বটে। বেশ ভালো লাগছে।
গ্রামের বাসিন্দা উৎপল কুমার রায় বলেন, ব্যতিক্রমী আয়োজন হবে জেনে এখানে পিঠা খেতে এসেছি। একদম ভেজানো গরম পিঠা। খুবই সুস্বাদু খেতে।
এ বিষয়ে তালমা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. কামাল হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দেখে আসছি মাঘ মাসের শেষের দিকে তিন দিনব্যাপী এমন ধরনের আয়োজন করা হয়। স্থানীয় এলাকাবাসী ছাড়া দূর-দূরান্ত থেকেও অসংখ্য মানুষ আসেন এখানে।